মেগা প্রকল্পে এখন গণলুট চলছে : ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হয়ে যাচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা – মীর্জা ফখরুল

আপডেট: জুন ২০, ২০২১
0

দেশের ‘মেগা প্রকল্পে এখন গণলুট চলছে’ বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধবংস করছে, লুট করছে। তারা দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। এখানে একজন এই মেগা প্রজেক্টের কথা বললেন। মেগা প্রজেক্টে গণলুট চলছে এখন।”

‘‘ ১০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট হয়ে যাচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট।এভাবে মেগা প্রজেক্টটাকে তারা টাকা বানানোর প্রজেক্ট হিসেবে তৈরি করে নিয়েছে।”

অনুন্নয়নখাতে অর্থ বরাদ্ধের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আনপ্রোডাক্টিভ খাতে টাকা দেয়া হচ্ছে। এমন এমন কাজ করা হচ্ছে যে কাজগুলোর কোনো দরকারই নেই। দেখবেন যে স্কুলে-মাদ্রাসায় টাকা দিয়েছে বড় বড় গেইট তৈরি করতে।”

‘‘ এই মুহুর্তে তো গেইট তৈরি করার চেয়ে ক্লাস রুম তৈরি করা বেশি দরকার। সেটা তারা করছে না।”

জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জিয়া পরিষদের উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ৪০তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ‘সমাজ উন্নয়নে মৃত্যুঞ্জয়ী জিয়া’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

‘স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ স্বাস্থ্যখাতে কি করুণ অবস্থা। এ্রখন পর্যন্ত টিকার কোনো নিশ্চয়তা নেই এবং টিকার নিশ্চিয়তা হবেও না এজন্য যে, যারা স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে জড়িত, টিকার সঙ্গে জড়িত-এরা সবাই দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে গেছে।”

‘‘ এতো বড় দুর্নীতি করছে যে দুর্নীতির মাধ্যমে মানু্ষের যে জীবন সেটাকে তারা মূল্যহীন করে ফেলেছে।”

‘দেশে মানুষের নিরাপত্তা নেই’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ এখানে মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই, এখানে মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন ভয়াবহ সব খুন, ভয়াবহ সব হত্যার ঘটনা। আজকের পত্রিকায় যে ঘটনাটি এসছে যে, মেয়ে বাবা-মা-বোনকে হত্যা করছে। এগুলো হচ্ছে একটা আর্থসামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি।”

‘‘ এটার কারণ হচ্ছে – আজকে দেশের মধ্যে গণতন্ত্র নেই্। যেহেতু দেশে গণতন্ত্র নেই, যেহেতু দেশে সেই সমাজ ব্যবস্থাটা নেই, যেহেতু দেশে জবাবদিহিতাটা নেই। আজকে অবস্থাটা এমন একটা পর্যায় চলে গেছে যে পর্যায় থেকে ফিরিয়ে আনার একমাত্র দায়িত্ব আমরা মনে করি জিয়াউর রহমান নেই্, তার অনুসারী যে দল আছে বিএনপিরই।”

কৃষকদের দুরাবস্থারে প্রসঙ্গ টেনে সাবেকে কৃষি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘ কৃষকেরা আজকে কঠিন সমস্যার জর্জরিত। তারা উতপাদন করছে কিন্তু তাদের পণ্য বাজারজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। অনেকদিন আগে পত্রিকায় উঠেছে, গাইবান্ধাতে এক কৃষক মাথায় হাত দিয়ে বলছেন আমি এই যে এতো সবজী উতপাদন করলাম সেই সমস্ত সবজীর তো বাজারে দিতে পারছি না। সরকার কী পারে না আমাদের সেনাবাহিনীর ট্রাকগুলোকে পাঠিয়ে এসব সবজী ঢাকা এনে বিক্রির ব্যবস্থা করতে। তার কথাটা ছিলো এরকম।”

‘‘ গাইবান্ধার ওই কৃষদের মুখ দিয়ে কৃষকদের সমস্যার খুব সত্য কথাটা বেরিয়ে এসেছে। সরকার এতো কিছু করছে আমাদের কৃষি পণ্যের বাজারজাত করছে না কেনো? এটা জরুরী বিষয় বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।”

জিয়াউর রহমানের আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে শিক্ষকদের কাজ করার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘ ভয়াবহ অন্ধকার চতুর্দিকে। বাইরে কিছু দেখতে পাই না। এরমধ্যে জিয়াউর রহমান খুব প্রাসঙ্গিক। এজন্যে যে, জিয়াউর রহমান সাহেবের আদর্শ যদি আমরা চর্চা করি, তাকে যদি আমরা সামনে নিয়ে আসি, নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেই তাহলে আমরা তার পথ দেখতে পাবো। তাতে আমরা অন্ধকার টার্নেলের দূরে যে লাইট সেই লাইটটা আমরা দেখতে পাবো। তাহলে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘ একদলীয় শাসনের কবরের ওপর বহুদলীয় গণতন্ত্রের বাগান রচনা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, স্বৈরশাসনের গোরস্তানের ওপর সংসদীয় গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আরেকবার আজকে গণতন্ত্রহীন বাংলাদেশে গণতন্ত্র উপহার দেবে সেই বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে।”

‘‘ আসুন আমরা শুভ দিনের প্রতীক্ষা করবো না শুধু, শুভ দিনকে এগিয়ে আনার জন্য আমরা একসাথে কাজ করবো।”

জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল হাই শিকদার, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বিএসএমএমইউ‘র অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে গোলাম হাফিজ কেনেডী, জামাল উদ্দিন রুনু, লুতফুর রহমান, তোজাম্মেল হোসেন, হাসনাত আলী, মাসুদুল হাসান খান, কামরুল হাসান, আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, জিয়া পরিষদের মহাসচিব এমতাজ হোসেন ও ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিতসকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা অংশ নেন।

‘স্বেচ্ছাসেবক দলের ভার্চুয়াল আলোচনা’

স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দলের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে আর্দশ অনুসরণ করে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার আহবান জানিয়েছেন।

মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় এই ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।