মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও তামান্নার চোখে হতাশার ছাপ

আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২১
0

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও তামান্নার চোখে হতাশার ছাপ : দারিদ্রতার চাপে ভেঙ্গে যাবে কি তার স্বপ্ন?

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
দারিদ্রতার চাপে পিষ্ট এক অসহায় পরিবারের মেয়ে তামান্না। দুই বোনের মধ‍্যে সে বড়।তার পূরা নাম তারজিনা আক্তার তামান্না। চলতি শিক্ষা বর্ষে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তির্ন হয়েছে তামান্না। এতে তামান্নার মেরিট স্কোর ২৭১.৫ জাতীয় মেধা তালিকায় তার স্হান ২২৬৭ তম। সে মেধা স্কোর অনুযায়ী রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও তার চোখে মুখে হতাশার ছাপ।ভর্তির এত টাকা আর পড়ালেখার খরচ যোগাবে কিভাবে তার দরিদ্র বাবা? শেষ পর্যন্ত দারিদ্রতার কাছে কি হেরে যাবে তামান্না?তামান্নার অক্লান্ত পরিশ্রম আর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন গুলো নিয়ে এখন দূ:শ্চিন্তা ও হতাশাগ্রস্ত তার পরিবার।

সে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম বেলদহ গ্রামের দরিদ্র ফেরিওয়ালা তারা মিয়ার মেয়ে। তামান্না জয়মনিরহাট উচ্চ বিদ‍্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ ও ভূরুঙ্গামারী মহিলা ডিগ্রী কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইসএসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ পায়।
তামান্নার বাবা তারামিয়া বলেন, বাড়ির ভিটে টুকু ছাড়া চাষাবাদ করার মতো তার কোন জমি নেই। সংসার চালাতে ভেনগাড়ীতে করে বিভিন্ন হাট বাজারে কাপড় ফেরি করে বিক্রি করেন তিনি। তা দিয়ে যে আয় হয় তাতে কোন মতে সংসার চলে। সঞ্চয় বলতে কিছু নেই তারা মিয়ার।

তিনি আরো বলেন,এর আগে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চালাতে এনজিও আরডিআরএস থেকে ঋণ নেয়। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়ায় ২ বছরের জন‍্য ২৪ হাজার টাকা বৃত্তি প্রদান করে ওই এনজিওটি। বৃত্তির টাকা খরচ না করে সেই টাকা দিয়ে মেয়েকে রেটিনা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করান। করোনায় কোচিং বন্ধ থাকায় অনলাইনে ক্লাশ করার জন‍্য মালয়েশিয়া প্রবাসী তার এক পরিচিত ব‍্যক্তি একটি মোবাইল ফোন কিনে দেন মেয়েকে।আল্লাহর রহমতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছে তামান্না।

দারিদ্রকে জয় করে অজপাড়া গাঁ থেকে তামান্না মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় পরিবারে পাশাপাশি গ্রামবাসির মাঝে যেমন বইছে আনন্দের বন্যা।এত আনন্দের মাঝেও তামান্নার ভর্তি হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। ভর্তির এত টাকা কিভাবে যোগাবে আর দীর্ঘ পাঁচটি বছর পড়া লেখার খরচই বা মিটাবে কিভাবে? এ কথাগুলো বলার সময় তার ছলছল চোখ দুটি দিয়ে ঝরছিল অশ্রু।

তামান্না জানায়, মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে খুব আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু সেই আনন্দ আর সুখানুভূতি হারিয়ে চোখেমুখে এখন হতাশা আর দুশ্চিন্তার ছাপ।মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পেয়েও চরম দারিদ্রতার বাধা অতিক্রম করে কিভাবে মেডিকেলে ভর্তি হয়ে পড়া লেখা করব সেই চিন্তাই করছি।এই কথা বলতেই কেঁদে ফেলে তামান্না।

তামান্নার মা লাইলি বেগম বলেন, তাদের কোনো জমি নেই। শুধু ভিটে টুকুই সম্বল। স্বামীর সামান‍্য আয়ে কোনো রকমে চলে সংসার।মেডিকেলে ভর্তি ফি, ও আনুসঙ্গিক খরচ বাবদ নগদ প্রায় ৯০ হাজার টাকার প্রয়োজন। যা তাদের পক্ষে যোগার করা অসম্ভব। এ অবস্থায় মেয়েটি কীভাবে ডাক্তারি পড়বে এ নিয়ে তারা ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছেন না।

তামান্নার বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ‍্যক্ষ খালেদুজ্জামান বলেন, মেয়েটি দরিদ্র পরিবারের হলেও তামান্না অসম্ভব মেধাবী। কলেজে পড়ার সময় আমরা তাকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছি। এমন এক প্রতিভা যেন দারিদ্রের কষাঘাতে হারিয়ে না যায় সে জন‍্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
######

আমিনুর রহমান বাবু