মোদি শান্তি ও মানবতারবিরোধী, তাকে দেশের জনগণ স্বাগত জানাতে পারে না: আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক

আপডেট: মার্চ ২৬, ২০২১
0

নিজস্ব প্রতিবেদক:

উপমহাদেশব্যাপী সম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের প্রধান কুশীলব চরম মুসলিমবিদ্বেষী ও অসংখ্য মুসলিম গণহত্যার খলনায়ক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদ জানিয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সহসভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক।

.

গতকাল (২৫ মার্চ) বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেছেন, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অপকীর্তির ফিরিস্তি অনেক লম্বা। ২০০২ সালে ভারতের গুজরাটে সংঘটিত ভয়াবহ মুসলিম গণহত্যার প্রধান খলনায়ক নরেন্দ্র মোদি। ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও তদস্থলে রামমন্দির প্রতিষ্ঠার সাথে নরেন্দ্র মোদি ও তার নেতৃত্বাধীন দল প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এই নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীরি মুসলমানদের স্বাধীকার, মর্যাদা ও মানবাধিকার মারাত্মকভাবে কেড়ে নিয়েছে। তার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে গত বছর দিল্লিতে ভয়াবহ মুসলিম গণহত্যা চলেছে। একের পর এক মুসলিমবিদ্বেষী আইনপ্রণয়ন, ইতিহাস বিকৃতি, মুসলিম ঐতিহাসিক স্থাপনার নাম পরিবর্তন, ঘর ওয়াফেসির নামে মুসলমানদেরকে হিন্দুত্বকরণ প্রকল্প পরিচালনা, মুসলমানদের খাদ্যাভাসে অবৈধ হস্তক্ষেপ, মুসলমানদের পারিবারিক আইনে হস্তক্ষেপ, গরুর গোস্ত খাওয়ার অপরাধে মুসলমানদেরকে পিটিয়ে হত্যা এবং শিক্ষা, সাংস্কৃতি, রাজনীতি ও জনঅধিকারে ভারতীয় মুসলমানদেরকে দাবিয়ে রাখার সাথে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার ও বিজেপি পার্টি সরাসরি জড়িত।

.

আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, নরেন্দ্র মোদির অপকর্মের তালিকা এখানেই শেষ নয়। নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি’র মাধ্যমে আসাম’সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে লাখ লাখ বাংলাভাষাভাষি মুসলমানের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের সাথে তার দল প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন পাশ করিয়ে ভারতীয় মুসলমানদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করেছে এই মোদি।

.

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ঐতিহাসিকভাবে সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানে বিশ্বাসী ও শান্তিকামী মানুষ। এই দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ সামাজিক অবস্থান বিশ্বে উদাহরণ দেওয়ার মতো। এই দেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ সামাজিক আচরণে কখনো বিভাজন সৃষ্টিকরে চলে না। সামাজিকভাবে সকলেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে। এটাই বাংলাদেশের সৌন্দর্য।

.

আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, কিন্তু ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের দুই মেয়াদে আমরা লক্ষ্য করছি, তারা নানাভাবে বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী সাংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে বাংলাদেশের অব্যাহত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করে এই দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে। বিজেপির অসংখ্য নেতা প্রকাশ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী বক্তব্য দিয়ে আসছে। এই দলটির ক্ষমতার মেয়াদে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পর্যায়েও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসী নীতি পরিচালনা করছে। সীমান্তে পাখির মতো বাংলাদেশের মানুষকে খুন করে চলেছে। অভিন্ন নদীর পানি তুলে নিচ্ছে শুকনো মৌসুমে এবং বর্ষকালে আকস্মিক পানি ছেড়ে দিয়ে সারাদেশকে বন্যায় তলিয়ে দিচ্ছে। ট্রান্সশিফটমেন্ট, বন্দর, সড়ক, নদী ব্যবহারের অসম চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থবিরোধী কাজে জড়িত। অসম বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজারকে ভারতের বাজারে পরিণত ও অর্থনৈতিক শেষণ চালাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদি সংগঠনকে গোপনে মদদ দেওয়ার অভিযোগও দেশটির বিরুদ্ধে রয়েছে।

.

আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, এক কথায় নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন দলটি শুধু ভারতীয় মুসলমানদের উপর নানা অত্যাচার ও জুলুম চালাচ্ছে না, বরং তারা বাংলাদেশে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক আগ্রাসন এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌম বিরোধী তৎপরতার সাথে জড়িত। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষপূর্তির রজতজয়ন্তীতে এই খুনি, সাম্প্রদায়িক ও বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত: জানানোর সুযোগ নেই। তার আগমনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদি সাম্প্রদায়িকতা ও ভারতের বহুমুখী আগ্রাসী তৎপরতা আরো বেড়ে যাওয়ার আশংকা প্রবল।

.

আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির শান্তি-শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটূট রাখার স্বার্থে এবং আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক ঘৃণ্য প্রচারণা ও লাগাতার হিংসাত্মক ঘটনার প্রতিবাদে সম্প্রদায়িক, বর্ণবিদ্বেষী ও খুনি মোদির বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ বাতিলে আমরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি দল-মতের ঊর্ধ্বে ওঠে দেশপ্রেমিক শান্তকামী প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের জোর বিরোধীতা ও প্রতিবাদে শামিল হওয়া। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে হুমকিমুক্ত ও নিরাপদ রাখতে এটা খুবই জরুরী।