মোদী বিরোধী কর্মসূচিতে হত্যার তদন্ত চায় ১১ আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থা :’ ছাত্রলীগের মসজিদে জড়ো হওয়া নিয়েও প্রশ্ন ‘

আপডেট: এপ্রিল ২, ২০২১
0

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজত ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ১৪ জনের মৃত্যুর বিষয়ে তাৎক্ষণিক, নিরপেক্ষ ও স্বতন্ত্র তদন্তের আহবান জানিয়েছে ১১টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। গত বৃহস্পতিবার দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহবান জানানো হয়। বিবৃতিতে বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকারকে সম্মান করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতি দেয়া সংগঠনগুলো হলো, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট- বা ফোরাম এশিয়া, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন, ক্যাপিটল পানিসমেন্ট জাস্টিজ প্রজেক্ট (সিভিকাস), মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এলিয়োস জাস্টিস, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ) রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভোলানটরি অ্যাগেইনস্ট ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স এবং ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অবশ্যই শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার জন্য যাদের আটক করা হয়েছে তাদের সকলকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ বাতিল করতে হবে।

বিবৃতিতে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লোকদের নির্যাতন ও জোর করে নিখোঁজ করার প্রথাটি শেষ করতে এবং রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের ভাগ্য এবং অবস্থান অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে। বিবৃতিতে অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেওয়ার আহবান জানিয়ে বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনা ঠিক হবে না।

বিবৃতিতে তথ্যে নিরবচ্ছিন্ন অধিকার নিশ্চিত করতে এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে আরোপিত সমস্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে বলা হয়, ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বাধা দেওয়ার উপায় হিসাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা থেকে বিরত থাকুন।’

বিবৃতিতে বলা হয়, স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ২০ থেকে ২৬ মার্চের মধ্যে পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সদস্যরা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের আয়োজিত দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশে আক্রমণ চালিয়েছিল। এসময় তারা অনেককে মারধর করেছে এবং শত শত শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভকারী আহত করেছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ২০ থেকে ২৬ শে মার্চ ঢাকার জাতীয় মসজিদে এই অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দাবি করে যে, সেখানে বিপুল সংখ্যক লোক যারা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সদস্য এবং এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জুমার নামাজ শুরুর আগে জাতীয় মসজিদটির চারপাশে জড়ো হয়েছিল।

নামাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে আ’লীগ ও ছাত্রলীগের সদস্যরা বিক্ষোভ শুরুর চেষ্টা করা মুসল্লীদের উপর সহিংস হামলা শুরু করে। এসময় বিক্ষোভকারীরা মসজিদ চত্বরে সীমাবদ্ধ ছিল। ভিডিও ফুটেজ অনুসারে হামলাকারীরা বিনা উসকানিতে আক্রমণে হামলা চালাতে লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিল।

এর পরপরই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে কমপক্ষে ৬০ জন বিক্ষোভকারী আহত হন এবং অনেক রাবার বুলেটবিদ্ধ হয়ে আহত হন। ঢাকায় বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা ২৬, ২৭ এবং ২৮ শে মার্চ সারা দেশে বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছিল। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ সমর্থকরা এর মধ্যে অনেকগুলি বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন, বেশিরভাগ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের মুখোমুখি হয়ে তারা তাদের আক্রমণ করেছিল।

এতে আরও বলা হয়েছে যে, কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ দমন করতে সারা দেশে বেশ কয়েকটি জায়গায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড মোতায়েন করেছিল, যার ফলে চট্ট্রগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় কমপক্ষে ১৪ জন বিক্ষোভকারী মারা গেছেন। এতে আরও কয়েকজন প্রতিবাদকারী আহত হয়েছে। অনেক গুলিতে আহত হয়েছে এবং কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলাকালে ২৩, ২৪ এবং ২৫ মার্চ, ঢাকা, সিলেট ও রাজশাহীতে পুলিশের টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেটে ১০জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর যৌথ বিবৃতিতে বেশ কয়েকজন ছাত্র-কর্মীকে গুম ও মামলা দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।