মোদী সরকারকে মুসলিম নিপীড়ন বন্ধ করতে বলেছেন কানাডার নেতা জগমিত সিং

আপডেট: এপ্রিল ১৫, ২০২২
0

কানাডার নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা জগমিত সিং ভারতীয় মুসলিমদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

আজ (বৃহস্পতিবার) বিবিসি হিন্দি ওয়েবসাইট সূত্রে প্রকাশ, জগমিত সিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে এক বার্তায় বলেন, মোদি সরকারের উচিত মুসলিম বিরোধী মনোভাব বন্ধ করা। জগমিত সিং বলেন, ‘ভারতে মুসলিমদের টার্গেট করে সহিংসতার ছবি, ভিডিও দেখে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। মোদি সরকারকে মুসলিম বিরোধী মনোভাব পোষণ বন্ধ করতে হবে। অবশ্যই মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে। কানাডাকে সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।’

ভারতীয় বংশোদ্ভূত জগমিত সিং কানাডার জাস্টিন ট্রুডো সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদলের নেতা। গত নির্বাচনে জগমিত সিংয়ের দল ২৪টি আসন জিতেছিল এবং তিনি কিংমেকারের ভূমিকায় ছিলেন। জগমিত সিংয়ের এই টুইট বার্তা এমন সময়ে এল যখন ভারতে রাম নবমী উৎসবের সময়ে অনেক রাজ্যে সহিংসতা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

ভারত ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জগমিত সিংকে অমৃতসরে যাওয়ার জন্য ভিসা দেয়নি। পাঞ্জাবের বারনালা জেলার থিকরিওয়াল গ্রামের সঙ্গে জগমিত সিংয়ের শিকড় জড়িত। তার পরিবার ১৯৯৩ সালে কানাডায় স্থানান্তরিত হয়েছিল। ভারতে ১৯৮৪ সালের শিখ বিরোধী দাঙ্গা নিয়ে জগমীত সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। তিনি ১৯৮৪ সালের দাঙ্গাকে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট দাঙ্গা বলে অভিহিত করেন।

২০১৩ সালে যখন ভারত সরকার তাকে ভিসা দিতে অস্বীকার করেছিল, সে সময়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে, তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ১৯৮৪ সালের দাঙ্গার শিকারদের বিচারের বিষয়ে কথা বলি, তাই ভারত সরকার আমার উপর ক্ষুব্ধ। ১৯৮৪ সালের দাঙ্গা দু’টি সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা ছিল না বরং একটি রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট গণহত্যা ছিল।’

কানাডার নেতা জগমিত সিংয়ের আগে মার্কিন প্রতিনিধি ইলহান ওমরও বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন যে, তারা নরেন্দ্র মোদি সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সমালোচনা এড়িয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে মার্কিন পার্লামেন্টের একটি কমিটির সামনে ইলহান ওমর অভিযোগ করেন, ভারতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সরকার কেন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা এড়িয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে তিনি উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন।

ইলহান ওমর আরও অভিযোগ করেছিলেন, মোদি সরকার ভারতে মুসলমান হওয়াকে অপরাধ করে তুলেছে। তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসনকে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো উচিত।

অন্যদিকে, গত সোমবার ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, আমেরিকা ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন পর্যবেক্ষণ করছে। ব্লিঙ্কেন বলেন, আমরা আমাদের ভারতীয় অংশীদারদের সাথে শেয়ার করা মূল্যবোধ (মানবাধিকার) নিয়ে নিয়মিত কথা বলি। ভারতে কিছু রাজ্য সরকার, পুলিশ এবং কারা কর্তৃপক্ষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিকে আমাদের নজর রয়েছে।

ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মানবাধিকার বিবৃতি প্রসঙ্গে বলেছেন, সোমবার ওয়াশিংটনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ভারতে মানবাধিকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমাদের সম্পর্কে জনগণের নিজস্ব মতামত রাখার অধিকার রয়েছে। কিন্তু একইভাবে তাদের সম্পর্কে আমাদের মতামত প্রকাশের অধিকারও রয়েছে। আমাদের সেইসব স্বার্থ ছাড়াও অধিকার আছে লবি এবং ভোটব্যাঙ্কের বিষয়েও কথা বলার, যা তাদের ইন্ধন জোগায়। এ বিষয়ে আমরা চুপ করে থাকব না।’

অন্যদের মানবাধিকার সম্পর্কেও আমাদের মতামত আছে। আমি আপনাদের বলতে পারি যে আমেরিকাসহ এখানে মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছু বলার আছে বলেও মন্তব্য করেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।#