যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাংকের সেমিনারে শেখ হাসিনা গেছেন আনলাইকলি সেখানে বিশ্বের কোন প্রধানমন্ত্রী কখনোই যায় না—মীর্জা ফখরুল

আপডেট: মে ১৬, ২০২৩
0

দেশে ডলার সংকটের কারণে সামনে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকট দেখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় দুইটি বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সোমবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব শঙ্কার কথা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। শুধু এটাই নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যারা আমদানি করেন যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা তারাও পণ্য আমদানি করতে পারছেন না ডলারের অভাবে। এটার প্রধান কারণ হচ্ছে যে, রিজার্ভের পরিমান এতো কমে গেছে যেটা এখন আমদানি পণ্য কেনা সম্ভব হচ্ছে না।”
‘‘ এটা তো এখনকার অবস্থা। কয়েকদিন পরে তো এই সংকট আরো বাড়বে যখন পদ্মাসেতুর টাকা পরিশোধ করতে শুরু হবে। আজকেই পত্রিকায় এসেছে যে, হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যে নতুন তৃতীয় টার্মিনাল হচেছ সেই তৃতীয় টার্মিনালে আগামী বছর থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। সেই টাকা কোত্থেকে আসবে না আসবে এটা বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে যারা ধারণা রাখেন তারা ভালো করেই জানেন যে, বর্তমানে বাংলাদেশ একটা চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে এবং এই রিজার্ভের পরিমান এতোই নেমে এসেছে যেটা মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হওয়া শুধুমাত্রা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।”
‘প্রধানমন্ত্রীর বিদেশে সফর প্রসঙ্গ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ জাতিকে তিনি(শেখ হাসিনা) ধারণা দিতে চান যে, এখানে বিকল্প কোনো নেতৃত্ব নেই। সেভাবে তিনি এবার সফরটি করেছেন। এই সফর সম্পর্কে তিনি ধারণা দিতে চান যে, এই সফর সম্পূর্ণভাবে সফল হয়েছে।”
‘‘ কিন্তু আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে যে, এই সফরের রেজাল্ট জিরো প্রায়। জাপানের সাথে আগে ঠিক হয়েছিলো কিছু ব্যবসা-বানিজ্যের ক্ষেত্রে.. সেটা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি গিয়েছিলেন মূলত বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের সঙ্গে ৫০ বছরের সম্পর্কের ওপর একটা সেমিনারে বক্তব্য রাখতে। যেটা খুব আনলাইকলি যে দেশের প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের সেমিনারে গিয়ে বক্তব্য রাখেন…। আর আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের যে চুক্তিগুলো হয়েছে সেটা অত্যন্ত শর্তযুক্ত প্রত্যেকটি এবং কঠিন শর্ত এগুলোর মধ্যে রয়েছে।যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন রাজার তৃতীয় চালর্সের অভিষেক অনুষ্ঠানে। সেখানে স্বাভাবিভাবে নতুন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা হয়েছে সেটাই স্বাভাবিক সরকার প্রধান হিসেবে, রাজার সঙ্গেও দেখা হয়েছে সেটাই স্বাভাবিক।সেখানেও বিশেষ কোনো অর্জন হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।”
আপনারা ভালো করে জানেন, গত এক দশক ধরে এই বিদ্যুত খাতকে তাদের দুর্ণীতির সর্বোচ্চ খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং বিদ্যুতে তারা পুরোপুরি ইনডেমনিটি দিয়েছেন। এই ইনডেমনিটির কারণে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে না, কাউকে চিহিন করা যাবে না যে তারা বিনা টেন্ডারে, বিনা প্রতিযোগিতায় তারা কত টাকা দিয়ে কিনছেন বা কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টে তাদের কিনতে হচ্ছে।”
‘‘ এটা সত্য যে বিদ্যুতখাতে তারা যে দুর্নীতি করেছেন সেটা শুধুমাত্র তাদের লোকজনরা দুর্নীতি করেছেন এবং এখন জনগনের পকেট থেকে সেটা সারচার্জ হিসেবে কেটে নেয়ার সমস্ত কাজগুলো চলছে। ব্যবসায়ীদের সাথে যদি আপনারা কথা বলেন, তারা কত বড় বিপদে রয়েছে। তাদেরকে যে নরম্যাল ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়, সেই ইনকাম ট্যাক্সের পরেও একটা পারটিকুলার লিমিট আছে যদি তার সম্পদ বাড়ে বা তার আয় বাড়ে তার ওপরও তাদেরকে ২০% সারচার্জ দিতে হয়। যেটা এদেশের প্রবৃদ্ধির জন্যে, যেটা এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে।”
‘হঠাত এতো পর বিষোদগার কেনো’
সেনশনধারী দেশের পণ্য বর্জনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যে প্রশ্নর রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এটা আমরাও প্রশ্ন উনি কেনো হঠাত করে এতোদিন পরে ওই সেনশনের ওপরে বিষোদগার করছেন। তিনি ভালো জানেন যারা সেনশন দেয় কিভাবে…. কিছুদিন আগেও কিন্তু সেনশনের কারণে রাশিয়ার একটি জাহাজ বাংলাদেশ ফেরত দিয়েছে।”
‘‘ এখন বাংলাদেশ কি ক্রয় করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে- এটা আমরা সব জানি, তার পরিমান বলুন বা তার ভলিউম বলুন-এটাও আমরা সব জানি। সুতরাং এটা তিনি কেনো বলেছেন তা আমরা সহজে বুঝতে পারি। তিনি সম্ভবত আমরা মনে হয় ইরিটেডেট হয়ে আছেন। কেনো ইরিটেডেট হয়ে আছেন সেটা আমার জানা নেই।”
‘বিএনপি ময়ুর সিংহাসন চায় না’
১০ দফা আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রী-নেতাদের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ উনার ময়ুন সিংহাসনের কথা বলেছেন। আমরা ময়ুর সিংহাসনে বসতে অভ্যস্ত নয়।”
‘‘ আমরা জনগনের কাতারে থেকে জনগনের চেয়ারে বসতে অভ্যস্ত এবং সেটা জনগনকে সঙ্গে নিয়ে।”
এর আগে বিকালে বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে প্রয়াত দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪২ তম শাহাদাত বার্ষিকীর কর্মসূচি প্রণয়নে একটি বৈঠক হয়। এতে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবদুল হাই শিকদার, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এবি এম ওবায়দুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এজেড রিয়াজ উদ্দিন নসু, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
সভায় দলের প্রতিষ্ঠাতার শাহাদাত বার্ষিকী পালনে ৬টি উপকমিটি গঠন করা হয়।