যেখানে যাই সেখানেই গোয়েন্দা বাহিনীর লোক : মানে হচ্ছে দেশজুড়ে সরকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে —মীর্জা ফখরুল

আপডেট: মে ১২, ২০২১
0

সারা দেশে সরকার ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার দুপুরে নিঁখোজ এম ইলিয়াস আলীর পরিবারের সাথে কথা বলার পরে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের কাছে একেবারেই অচেনা-অজানা যে রাজনৈতিক দলটি দীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছে গণতন্ত্রের জন্য,মানুষের অধিকারের জন্য সেই দলটির হাতেই গত এক যুগ ধরে এদেশের মানুষ যেভাবে অত্যাচারি-নির্যাতিত হচ্ছে-এটা ধারণার বাইরে। সারাদেশে একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে।”

‘‘আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন এই যে, এখানে ঢুকার আগে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ জন গোয়েন্দা বাহিনীর লোক দাঁড়িয়ে আছে, কমপক্ষে এবং তাদের কাজটাই হচ্ছে যে, এভাবে গোটা বাংলাদেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা। এই করে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে আমরা বড়াই করি, কথা বলি, স্বাধীনতার চেতনার কথা বলি এই স্বাধীনতার চেতনার পরিণতি কি এটা? এই পরিণতি হয়েছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ নো বড়ি সেভ ইন দিস কান্ট্রি। এদে্শে কেউ নিরাপদ নয়। এখানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এমন পর্যায় চলে গেছে যে সেখানে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা এটা একেবারে…, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের তো বটেই সাধারণ মানুষ কিন্তু আপনার জীবন বিপর্য্স্ত হয়ে পড়েছে।”

‘‘ আমরা বার বার বলেছি, আবারো বলছি- সরকার এগুলো বন্ধ করুক। আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয়, আসলে কী আওয়ামী লীগ দেশ চালায়? এটা আমার কাছে একটা বড় প্রশ্ন। আমি খুব সিনসিয়ারলি এই কথাটা বলছি- কে দেশ চালায়? এটাও বুঝতে পারে না আমরা সাধারণ মানুষ যারা আছি অথবা রাজনীতি যারা করি তারা বুঝতে পারি না। কার ইঙ্গিতে এসমস্ত ঘটনাগুলো ঘটছে?”

বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ ইলিয়াস আলীর গুমের ৯ বছর পার হয়ে গেছে। আমরা কিছুদিন আগে তার গুম দিবসও পালন করেছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে অত্যাচার-নির্যাতন-ত্রাস সৃষ্টি করবার যে একটা আতিয়ার সৃষ্টি করবার এই্ যে নতুন একটি ফেনোমেনা চৌধুরী আলম ও ইলিয়াস আলীর ঘটনা দিয়ে শুরু হলো। তারও আগে ১৯৭৫ সালে সেই সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তারা কিন্তু এই ঘটনা ঘটিয়েছে, আগে অনেক রাজনৈতিক কর্মী ও সমাজ কর্মী গুম হয়ে গেছে।”

‘‘ইউএন‘এর যে চার্টার, সেই চাটার অনুযায়ী এই গুম বা এনফার্স ডিজএপিয়ারেন্স ইজ এ ক্রাইম এজেনেস্ট হিউমেনিটি, মানবতার বিরুদ্ধে একটা জগন্যতম অপরাধ। এই অপরাধের জন্য অতীতে অনেকের ট্রায়াল হয়েছে, অনেকে সাজা ভোগ করেছেন। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। বাংলাদেশে একটা দুইটা নয়, আমাদের রাজনৈতিক নেতা যারা সিনিয়র লিডারস তারপরে ছাত্র নেতা, যুব নেতা তারাও গুম হয়ে গেছেন। আমাদের হিসাব অনুযায়ী ৫১৭ জন গুম হয়ে গে্ছেন, নাই, উঠিয়ে নিয়ে গেছে। তাদের পরিবার আশে-পাশের সবাই বলেছেন যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা নিয়ে গেছে, সাদা পোষাকের লোকের নিয়ে গেছে তারা এখন পর্যন্ত ফিরে আসেনি। এই রাজনৈতিক কারণে একটি পরিবারকে ধবংস করে দেয়া এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত দুঃখের, কষ্টের।”

ইলিয়াসের পরিবারের কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবন কন্ঠে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই যে ইলিয়াসের দুই ছেলে একজন ব্যারিস্টার হয়েছে। ইলিয়াস যখন নিখোঁজ হয়ে যায় তখন ওরা দুই ছেলে ছোট, মেয়েটা ছোট ছিলো। ওদের মা.. এরা জানে না ওরা কি করবে? বাবার জন্য কী কোনো কুলখানি করবে, কোনো কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে দোয়া করবে। তারা তো জানে না বাবা কোথায়?”

‘‘এটাই বাস্তবতা। এই যে নির্মম অত্যাচার যারা জীবনের জন্য তাদের বহন করতে হবে এই কষ্টটা, এই বেদনাটা। শুধু রাজনীতির কারণে তাদের বাবাকে তুলে নিয়ে গেছে জোর করে।”

ঈদ উপলক্ষে ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলীর পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে দুপুরে বনানীর বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব। তিনি ইলিয়াসের সহধর্মিনী তাহসিনা রুশদীর লুনা, দুই ছেলে আবরার ইলিয়াস ও লাবিদ সারার সাথে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেন। মহাসচিব দলের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহারও তাদের হাতে তুলে দেন।

এই সময়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও যুব দলের সাবেক সহসভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

দুই ছেলে ও এক মেয়ে সাইয়ারা নাওয়ালকে নিয়ে বনানীর বাসায় থাকেন ইলিয়াসের সহধর্মিনী দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তাহমিনা রুশদীর লুনা।

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সাংসদ এম ইলিয়াস নিজের বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার পরপরই ড্রাইভারসহ নিখোঁজ হন। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত তার ও গাড়ি চালক আনসার আলীর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এই গণতন্ত্রের নেত্রীকে তারা(সরকার) তিন বছর যা্বত আটক ধরে রেখেছে। যাকে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ সন্মান করে, শ্রদ্ধা করে। শুধু প্রত্যেকটা মানুষ না, বিদেশের নেতা-নেত্রীরা তারা পর্যন্ত দেশনেত্রীকে অত্যন্ত সন্মান করেন, এখনো করেন। তিনি অসুস্থ হয়েছেন তার খবর কিন্তু তারা সবাই নিচ্ছেন। এই নেত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজা নিয়ে তারা তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছে। উদ্দেশ্য কী? একটাই উদ্দেশ্য । দেশে একদলীয় বাকশাল তৈরি করা। তারা শাসন করবে, তারাই করবে।”

‘‘ আপনারা জানেন, আমাদের অনেক নেতা-কর্মী আত্মত্যাগ করেছেন, জীবন দিয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। এতো আত্মত্যাগ, এতো অশ্রু এগুলো কখনো বৃথা যায় না। এটা অবশ্যই দানা বাঁধবে, বাঁধছে, বাঁধা শুরু হয়েছে। ইনশাল্লাহ জনগনের যে আন্দোলন-সংগ্রাম তার মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে চলে যেতে হবে।”