রহমতের ভরা বসন্তে আমরা কী অর্জন হলো!!

আপডেট: মে ৬, ২০২২
0

সালমান ফারেসি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের শেষ দিন আমাদের উপদেশ দেন। তিনি বলেন, তোমাদের সামনে এমন একটি মাস আসছে, যা খুবই মহৎ ও বরকতময় মাস। এই মাসে শবেকদর নামে একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। তার দিনের রোজাকে ফরজ করেছেন এবং রাতের নামাজ তথা তারাবিকে সাওয়াব লাভের মাধ্যম বানিয়েছেন।

কোনো ব্যক্তি যদি এই মাসে কোনো নফল আমল করে, তবে তা অন্য মাসের ফরজ আদায়ের সমান। কোনো ব্যক্তি এই মাসে কোনো ফরজ আদায় করলে তা অন্য মাসের ৭০টি ফরজের সমান। রমজান মাস সংযম ও ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা নামাজ ও ধৈর্যধারণের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা কোরো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই মাসে সাধারণ নেক আমলের প্রতিদান ফরজের সমান এবং ফরজের সাওয়াব ৭০টি ফরজের সমান দেওয়া হয়। এটি আল্লাহর কত বড় অনুগ্রহ। কিন্তু আমাদের সমাজে এমন বহু মানুষ আছে, যারা সাহরি খেয়ে শুয়ে পড়ে। ফজরের নামাজের জামাতেও অংশগ্রহণ করে না। আবার ইফতারে খাওয়াদাওয়ায় এত বেশি সময় ব্যয় করে যে মাগরিবের নামাজের জামাতে উপস্থিত হতে পারে না অথবা ‘তাকবিরে উলা’ (ইমামের সঙ্গে সঙ্গে নামাজ শুরু করা) ছুটে যায়।

আবার কেউ কেউ ইফতার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আসরের নামাজের জামাতে অংশ নিতে পারে না। আবার বহু হতভাগ্য রমজান মাসে রোজা রাখে না। কেউ রোজা রাখে কিন্তু নামাজ পড়ে না। এটা বড় দুর্ভাগ্যের কথা—যে রোজার কারণে সৃষ্ট মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের চেয়ে প্রিয় সে রোজার ব্যাপারে আমাদের এত অবহেলা। আল্লাহ বলেন, রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজে তার প্রতিদান দিই। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমি নিজেই তার প্রতিদান হয়ে যাই। যে আমলের প্রতিদান আল্লাহ নিজে দেওয়ার বা নিজে তার প্রতিদান হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, এমন মহিমান্বিত রোজার ব্যাপারেও আমরা কতটা উদাসীন।

এই মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। যাকে লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত বলা হয়। এই রাতে কোরআন আরশে আজিম থেকে পৃথিবীর আকাশে অবতীর্ণ হয়। এই রাতে আল্লাহর নির্দেশে অসংখ্য ফেরেশতা কল্যাণের বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করে। আল্লাহ এই রাতে অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা ও রহমতে ধন্য করেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে প্রকৃতার্থেই বঞ্চিত। এখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই—আমরা বঞ্চিত হবো, আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের চেষ্টা করব? জান্নাতের দরজাগুলোর ভেতর একটি দরজার নাম ‘রাইয়ান’ যে দরজা দিয়ে শুধু রোজাদার ব্যক্তি প্রবেশ করবে।

আল্লাহর প্রিয় বান্দারা পুরো রমজান জিকির, তিলাওয়াত ও নফল ইবাদতে অতিবাহিত করেন। নিজের সামর্থ্য অনুসারে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের জন্য অর্থ ব্যয় করে। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে বা রোজার দিনে অধিক পরিমাণে দান করতেন। যেমন বাতাস অসংখ্য বস্তু উড়িয়ে নিয়ে যায়। তাই এই মাসে শুধু নিজে রকমারি খাবার গ্রহণের চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে না; বরং অন্যের মুখে আহার জোগানোরও চিন্তা করবে। রমজানে আত্মচিন্তা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হওয়ারই নামান্তর।

হাদিসে এসেছে, রমজানকে স্বাগত জানাতে পুরো বছরজুড়ে জান্নাতে সজ্জিত করা হয় এবং তার শোভা-সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়। অথচ জান্নাতের ব্যাপারে বলা হয়েছে—তা এমন দান, যা কোনো চোখ দেখেনি এবং যা কোনো কান শোনেনি। একবার চিন্তা করে দেখুন, এই সাজ-সজ্জা কার পক্ষ থেকে হচ্ছে এবং কার জন্য হচ্ছে। জান্নাত সাজানোর নির্দেশ তিনি দিয়েছেন, যিনি জগৎসমূহের স্রষ্টা এবং মালিক। আর সব আয়োজন এক মুঠ মানুষের জন্য যাকে মানবাকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে। যে জাতির জন্য আল্লাহ এই অবারিত অনুগ্রহ ও দানের ঘোষণা দিয়েছেন তার মর্যাদা ও অবস্থানের ব্যাপারে কেউ ধারণা করতে পারে! এরপর কতটা অজ্ঞতা ও দুর্ভাগ্যের বিষয় যে মুমিন এই বরকতময় মাসের কল্যাণ লাভের ব্যাপারে উদাসীন এবং পার্থিব জীবনের প্রতারণায় আক্রান্ত।

বান্দা যেন পৃথিবীর ধোঁকা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে, তাই আল্লাহ তাকে সতর্ক করে বলেছেন, পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য ও সুখ-সমৃদ্ধি আমি এ জন্য দান করেছি, যাতে বান্দাকে পরীক্ষা করতে পারি। কে দুনিয়ার জালে আটকা পড়ল এবং কে ভালো কাজ করল। চূড়ান্ত পরিণতিতে পার্থিব জীবনের চাকচিক্য আল্লাহ ধ্বংস করবেন এবং পরকালই হবে চিরস্থায়ী জীবন। ইরশাদ হয়েছে, ‘পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শোভা করেছি, মানুষকে এই পরীক্ষা করার জন্য যে তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ। ’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ৭)

সুতরাং আমাদের দায়িত্ব হলো অবহেলা ও উদাসীনতা পরিহার করে রমজানে হকগুলো আদায়ে মনোযোগী হওয়া, চিন্তা ও প্রচেষ্টা চালানো, যেমনটি আল্লাহ প্রত্যাশা করেন। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে আমাদের রমজানের শিষ্টাচার রক্ষা করে রোজা রাখার তাওফিক দিন, আমাদের রোজাগুলো কবুল করুন এবং আমাদের সেসব সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত করুন যাদের আল্লাহ নিজ হাতে প্রতিদান দেবেন।

তামিরে হায়াত থেকে

মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর

সূত্র :উম্মাহ