রাত পোহালেই জিসিসি নির্বাচন সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন : নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পুরো নির্বাচনী এলাকা

আপডেট: মে ২৪, ২০২৩
0

ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বক্তব্য দেয়ায় ৪০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলের প্রার্থীতা বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুরঃ

রাত পোহালেই বৃহষ্পতিবার সকাল থেকে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে দেশের সর্ব বৃহৎ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠাণ। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ চলবে। নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও সফল করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টরা ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো নগরী। নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও আনসার ভিডিপি সদস্যসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১৩ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ভোট গ্রহণের জন্য বুধবার (২৪ মে) সকাল থেকে নির্বাচনী এলাকার ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে ইভিএম মেশিনসহ ৪৬ আইটেমের সামগ্রী বুঝিয়ে দিয়ে বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে কমিশন। এবারের নির্বাচনে ৮ মেয়র প্রার্থীসহ ৩৩৩ জন কাউন্সিলর (সাধারণ ও সংরক্ষিত) প্রার্থী সরাসরি ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। গত মঙ্গলবার ছিল নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার শেষ দিন। ওইদিন মধ্যরাত থেকে প্রাথর্ীদের প্রচার প্রচারনা শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু ভোট প্রদান ও ভোট গ্রহনের। প্রায় ৪০ লাখ নগরবাসীর সেবা করার জন্য কারা হচ্ছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, এটাই নির্ধারন হবে বৃহস্পতিবারের এ নির্বাচনে।

ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বক্তব্য দেয়ায় ৪০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলের প্রার্থীতা বাতিলঃ

এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বক্তব্য দেওয়া ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের লাটিম প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আজিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বুধবার বিকেলে এ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এবং তা স্বীকার করার প্রেক্ষিতে তার প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করা করেন।
আজিজুর রহমান সোমবার সন্ধ্যা মহানগরের মেট্রো থানা এলাকার কলের বাজার নামক স্থানে মিছিল ও জনসভা করেন। এ জনসভায় ‘নৌকা ছাড়া কাউকে ভোট কেন্দ্রে আসতে দেবেন না’ বলে ত্রাস সৃষ্টি এবং ভীতি প্রদর্শনমূলক বক্তব্য দেন, যা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশক্রমে এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। বেআইনি মিছিল, জনসভা ও ত্রাস সৃষ্টি এবং ভীতি প্রদর্শনমূলক বক্তব্য প্রদান স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০ এর বিধি ৯১ এবং সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ৩১ ও ৩২ এর পরিপন্থি। তদন্ত প্রতিবেদনে এ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর এ প্রার্থীকে তলব করা হয়। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের উপস্থিতিতে চার নির্বাচন কমিশনারের সামনে ব্যাখ্যা দেওয়ার পর প্রার্থী ক্ষমা প্রার্থনা করলেও তা গৃহীত হয়নি। কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করেছে। নির্বাচনে এবছর তার প্রতিক ছিল লাটিম। ফলে ইভিএমের ভোটের ব্যালটে আর এ প্রার্থীর প্রতীক থাকবে না বলে জানানো হয়। আজিজুর রহমান শিরিশ গত দুই টার্মে গাসিক ৪০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন।

পুলিশের ব্রিফিংঃ
নির্বাচন উপলক্ষ্যে বুধবার সকালে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশ্যে গাজীপুর শহরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম। তিনি ব্রিফিংয়ে নিরাপত্তা বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। ব্রিফিংয়ে মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে আপনারা দায়িত্ব পালনের জন্য এসেছেন। একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন যাতে হয়, সে বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করা। জনগন ভোটকেন্দ্রে এসে নিরাপদে যাতে ভোট দিয়ে চলে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, পুরো গাজীপুরসহ সারা বিশ্বের লোকজন তাকিয়ে আছে এ নির্বাচনের দিকে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়ার।

ব্রিফিংকালে নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা মোঃ ফরিদুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানসহ পুলিশ, বিজিবি, আনসার বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিং শেষে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরকে তাদের স্ব স্ব কেন্দ্রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ও ইভিএম \
গাজীপুর সিটি নির্বাচণের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা এইচএম কামরুল ইসলাম জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে মোট সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৭টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৯টি। এ নির্বাচনে সর্বশেষ হালনাগাদকৃত ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং হিজড়া ভোটার সংখ্যা ১৮ জন। নির্বাচনে ভোট গ্রহনের জন্য মোট ৪৮০ টি ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে মোট ভোট কক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭ টি স্থাপন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ব্যবহার করার জন্য পঁাচ হাজার ২৪৬টি ইভিএম মেশিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে একজন করে ৪৮০জন ট্রাবল শ্যূটার, প্রতি দুই কেন্দ্রে একজন করে মোট ২৪০ জন (ভ্রাম্যমান) টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, ১৪ জন সহকারি প্রোগামার এবং ৪ জন থাকবেন প্রোগ্রামার। যাতে কোন ইভিএম মেশিনে সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত সমাধান করা যায়। প্রতি কেন্দ্রে একটি এবং কক্ষে একটি করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, গাজীপুর জেলা প্রশাসন কার্যলয় চত্বর, শহরের কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বুধবার দুপুর ১টা থেকে প্রতি কেন্দ্রের জন্য একযোগে ইভিএম মেশিন, হ্যান্ড সেনিটাইজার, ভেসেলিন, মখমলের কাপড়, টিস্যূ, বুথ কক্ষ নির্মানের জন্য কাপড়, অমোছনীয় কালি, ভোটার তালিকা, স্ক্রু-ড্রাইভার, মাল্টিপ্লাগসহ ৪৬ আইটেমের সামগ্রী বিতরণ কাজ শুরু করা হয়। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসারগণ এসব সামগ্রী বুঝে নিচ্ছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, আমাদের কাছে সবগুলো ভোট কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ নির্বাচনে মোট ৪৮০ টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝঁুকিপূর্ণ) বিবেচনা করা হচ্ছে। বাকী ১২৯টি কেন্দ্র সাধারন কেন্দ্র। সাধারণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৬ জন সদস্য দায়িত্বপালন করবেন। এরমধ্যে পুলিশ ৪ জন, আনসারের একজন করে প্লাটুন কমান্ডার ও সহকারি প্লাটুন কমান্ডার এবং আনসার ও ভিডিপি’র ৬জন পুরষি ও ৪ জন নারী সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুলিশের একজন সদস্য বাড়িয়ে মোট ১৭জন নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

সরঞ্জাম বিতরনঃ
বুধবার ভোট কেন্দ্রগুলিতে ইভিএম মেশিন ও ভোট গ্রহনের প্রয়োজণীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। মহানগরীর ৫টি ভেন্যু হতে এসব সরঞ্জাম প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের নিকট বুঝিয়ে দেয়া হয়। দুপুরে জয়দেবপুর দারুসসালাম (গুরস্থান) ফাজিল মাদ্রাসা ও এতিমখানায় গিয়ে দেখা গেছে, সহকারী রিটানিং কর্মকর্তাদের নিকট থেকে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা , সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা ইভিএমসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম বুঝে নেন। পরে তারা এবং কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ভ্যান, রিক্সা বা পিকআপ যোগে স্ব স্ব কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এ ভেন্যু থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ৫,১০ ও ১১ নং ওয়ার্ড এবং সাধারন কাউন্সিলর ১৩ হথে ১৫ এবং ২৮ হতে ৩৩নং ওয়ার্ডের নির্বাচনী সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়। এছাড়া মহানগরের চৌরাস্তা এলাকার চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ ও পশ্চিম চান্দনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ১,২,৩,৪ ও ৬ নং ওয়ার্ড এবং সাধারন কাউন্সিলর ১ হতে ১২ এবং ১৬ থেকে ১৮ নং ওয়ার্ড, কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড এবং সাধারন কাউন্সিলর ১৯ হতে ২৭ নং ওয়ার্ড, ধীরাশ্রমের গিরিজা কিশোর (জিকে) আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও ধীরাশ্রম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ১৩,১৪,১৫ ও ১৬ নং ওয়ার্ড এবং সাধারন কাউন্সিলর ৩৭ হতে ৪৮ নং ওয়ার্ড এবং বোর্ডবাজারের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ১২, ১৭,১৮ ও ১৯নং ওয়ার্ড এবং সাধারন কাউন্সিলর ৩৪ হতে ৩৬ ও ৪৯ থেকে ৫৭ নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতে ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরন করা হয়েছে।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোবাইল টিম \
রিটানিং কর্মকর্তা মোঃ ফরিদুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর সিটি কপোর্রেশনের সংরক্ষিত ৫৭টি ওয়ার্ডে নির্বাহী হাকিম থাকবেন ৭৬ জন, সঙ্গে বিচারিক হাকিমও থাকবেন। র‍্যাবের ৩০টি টিম থাকবে। বিজিবির থাকবে ১৩টি প্লাটুন থাকবে। প্রতিটিতে ২০ জনের বেশি সদস্য থাকবেন। এ ছাড়া থাকবে পুলিশের ১৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল টিম হিসেবে ৫৭টি টিম থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য ১৭ ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন সদস্য থাকবেন। এছাড়াও প্রচুর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। যাতে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা না হয়। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে, তারা যে দলের বা যেই হোক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে।

মেয়র পদে লড়ছেন যারাঃ
জেলা নির্বাচন অফিসার ও গাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার এএইচএম কামরুল হাসান জানান, গাজীপুর সিটি কপোর্রেশনের এবারে নির্বাচনে ৮ মেয়র প্রার্থী, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন প্রার্থীসহ মোট ৩৩৩ জন কাউন্সিলর (সাধারণ ও সংরক্ষিত) প্রার্থী সরাসরি ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। এ ছাড়া এ নির্বাচনে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ফয়সাল আহমেদ সরকার ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তাকে নিয়ে এবার নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩৩৪ জন।

তিনি আরো জানান, এ নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী (লাঙ্গল প্রতীক) সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির রাজু আহাম্মেদ, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র মেয়র পদে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা), ঘোড়া প্রতীকে হারুন-অর রশীদ ও হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম লড়ছেন।

গত ৫ এপ্রিল গাজীপুর সিটি কপোর্রেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছে নির্বাচন কমিশন।

আমাদের কাছে সব ইলেকশনই সমান গুরুত্বপূর্ণ
ইসি বেগম রাশেদা সুলতানা

নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, আমাদের কাছে সব ইলেকশনই সমান গুরুত্বপূর্ণ। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের আলাদা কোন চ্যালেঞ্জ নেই। সব ইলেকশন (ছোট-বড়) আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যেখানেই নির্বাচন হচ্ছে আমরা তা মনিটরিং করছি। আমাদের কাছে ইলেকশ মানে ইলেকশন। আর ইলেকশন মানেই তা গুরুত্বপূর্ণ। গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে আমাদের উপর কোন চাপ নেই। আমাদের পক্ষ থেকেও কারো উপর কোন চাপ নেই। যার যার মতো সে সে নির্বাচনের কাজ করছে। তাতে কোন অসুবিধা নেই।

বুধবার (২৪ মে) বিকেলে গাজীপুর সার্কিট হাউসে নির্বাচন নিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দিতে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি ওইসব কথা বলেন। এসময় নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম, সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল ইসলাম, জাকির হোসেনসহ নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচনের আগের দিন কেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে কেন মতবিনিময় করবেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলে, কারণ একটাই, সেটা হলো নির্বাচনের দিন আচরণ বিধি কতটুকু ভঙ্গ হয় কি হয় না। কি অনিয়ম হয় এ বিষয়গুলো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা সামারি ট্রায়াল করবেন। আমি তাদের সঙ্গে যদি ব্রিফিং করি তাহলে সবকিছুতেই সুন্দর একটা সমন্বয় হয়। এজন্য জুডিশিয়ারী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে এসেছি।

নির্বাচন কমিশন অভয় দিলেও বিভিন্ন হুমকিতে ভোটাররা আতঙ্কিত এমতাবস্থায় ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারবে কি-না বা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে কি-না এ প্রশ্নে তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে, নি:সংকোচে কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা চাই ভোটারদের উপস্থিতি, অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ একটা ভোট হউক। এটা নিয়ে আমাদের নির্বাচনের কমিশনের ম্যাসেজ হলো- সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠান। এতে কোন ধরণের কোন ব্যত্যয় হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা এটাই করবো, এটা করার জন্যই সচেষ্ট। অবশ্যই আপনারা (ভোটার) কেন্দ্রে নির্ভয়ে আসবেন।

গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওনাকে আমি বলেছি, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ যাতে কোনভাবেই বিঘ্নিত না হয়। ওনি আমাকে নিশ্চিত করে বলেছেন, ভোটাররা যাতে সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিতে পারে এ পরিবেশে নিশ্চিত করবো। নির্বাচন কমিশনের একটাই বার্তা সেটা হলো সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। ভোটাররা কেন্দ্রে আসবে এবং স্বাচ্ছন্দ্য ভোট দিয়ে তারা চলে যাবে। তারা যেন বলতে পারেন যে আমরা আমাদের ভোটটা দিয়েছি। আর এর ব্যত্যয় ঘটলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা কি হবে তা আপনারা দেখতে পাবেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) নিবার্াচনের দিন গাজীপুর সিটি নির্বাচনও মনিটরিং করা হবে। অলরেডি কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়ে গেছে। মনিটরিংয়ে আমরা যদি কোন অনিয়ম পাই, তাহলে সেটা আমরা অবশ্যই আমলে নেব। এটার ব্যাপারে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব করবো না।

নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে মিটিং শেষে কেন্দ্র পরিদর্শণে যাবেন। কেন্দ্রে প্রিজাইডং কর্মকর্তা, পুলিশসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়েছে কি-না, মালামালগুলো ঠিক মতো কেন্দ্রে গেছে কি-না, সিসি ক্যামেরা ঠিকমতো সেট করা হয়েছে কি-না, কিভাবে ওই ক্যামেরা কাজ করবে, আবার ক্যামেরায় বুথের ভেতরে দেখা যাবে কি-না এসব দেখতে কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন (ভিজিট) করবেন বলে জানান। কেদ্রগুলোতে ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কি-না আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তা পরিদর্শন করবো।
###
মোঃ রেজাউল বারী বাবুল
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।
২৪/০৫/২০২৩ ইং।