রাবিসহ বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি বন্ধে মহিলা পরিষদের মানববন্ধন

আপডেট: মে ৩১, ২০২৩
0

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানিমূলক ঘটনা বন্ধের দাবি জানিয়ে’’ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ ৩১ মে ২০২৩ বিকাল ৪:০০ টায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে,তোপখানা রোড,ঢাকাতে “রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানিমূলক ঘটনা বন্ধের দাবি জানিয়ে’’ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস; প্রশিক্ষণ,গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ; অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম; ঢাকা মহানগর কমিটির আন্দোলন সম্পাদক জুয়েলা জেবুননেসা খান ।

মানববন্ধনে বক্তারা গত ২১ মে ২০২৩ তারিখে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় সভাপতির অফিসকক্ষে বিভাগের সভাপতি এবং অন্যান্য শিক্ষকগণের সম্মুখে একই বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এনামুল হক কর্তৃক উক্ত বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. নাজমা আফরোজ-এর প্রতি যৌন উসকানিমূলক বক্তব্য এবং আচরণের তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেন। তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান। একইসঙ্গে ২০০৯ সালে হাইকোর্টের প্রদত্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমসহ সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ নামে কমিটি গঠন করা বিষয়ক রায়ের বাস্তবায়ন এবং অনতিবিলম্বে এসংক্রান্ত আইন প্রণয়নের দাবি জানান। পাশাপাশি তারা নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহŸান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, একসময় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া বিশ^বিদ্যালয়গুলোর কিছু সংখ্যক শিক্ষকের নারীবিদ্বেষী ও কুরুচিপূর্ণ মনোভাবের কারণে যে অধোগতি দেখা যাচ্ছে তার দায় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিতে হবে। তিনি আরো প্রশ্ন রাখেন বিশ^বিদ্যালয়কে যেখানে মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয় সেখানে একজন শিক্ষকের চেহারা যদি এমন হয় তাহলে তিনি কেমন ছাত্র তৈরি করবেন? তিনি এসময় সকল বিশ^বিদ্যালয়ে যৌন হয়রানিমূলক ঘটনা প্রতিহত করতে এবং অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে বিশ^বিদ্যালযের শিক্ষক সমিতিকে রুখে দাড়াতে জোরালো আহŸান জানান। পাশাপাশি তিনি গণমাধ্যমকে ঘটনার প্রকৃত সত্য উন্মোচন করতে আহŸান জানান এবং হাইকোর্টের নির্দেশনামা বাস্তবায়নে আইন মন্ত্রণালয়কে আরো তৎপর ভুমিকা পালনের উপর গুরুত¦ারোপ করেন।

সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, একটি নারী বিদ্বেষী সমাজে আমরা বসবাস করছি যেখানে নারীর সংগ্রাম করে টিকে থাকার মত শক্ত অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। যৌন হয়রানির ঘটনায় নারী সহকর্মীর অভিযুক্ত শিক্ষকের নিকট জবাবদিহিতা চাওয়া কে মেনে নিতে না পারা একই সাথে পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোয় নারীর ক্ষমতায়নকে অস্বীকার করার বিষয়টি এবং সমাজের ভেতরের অবস্থা যে নারীর প্রতি অনুকুল নয় তার প্রতিফলন।

উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা সরকার প্রধান এবং শিক্ষা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই রায়টি সঠিকভাবে মেনে না চলায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। সমগ্র দেশে যখন সমতার আন্দোলন চলছে তখন সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে নারীর এই দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তারা প্রশ্ন রাখেন এই ঘটনা তরুণ সমাজের জন্য কি মেসেজ দিবে? তাদের নীতি নৈতিকতা কোন পথে চালিত হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির ঘটনা প্রতিরোধে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্যে থ্কাা ব্যাপক ব্যবধানকে দূর করে যৌন হয়রানির ঘটনায় চিহ্নিত অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের জোরালো দাবি জানান।

মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের জয়া সরকার। এছাড়াও সংহতি প্রকাশ করে একশন এইড বাংলাদেশ

উক্ত মানববন্ধন কর্মসূচীতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ সহ প্রায় ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন।

কর্মসূচী পরিচালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাড. দীপ্তি শিকদার।