রাশিয়ার সাথে সমঝোতায় যে শর্ত জেলেনস্কির

আপডেট: মে ৭, ২০২২
0

ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর আগে রুশ সৈন্যরা যেখানে ছিল, সেখানেই ফিরে যায় কিনা, রাশিয়ার সাথে যেকোনো শান্তি চুক্তি তার ওপরই নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

লন্ডন ভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা চ্যাথাম হাউজের সাথে কথা বলার সময় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, শান্তি চুক্তির ব্যাপারে তার দেশের জন্য ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য অবস্থান হচ্ছে এটা।

জেলেনস্কি বলেন, তিনি ‘ইউক্রেনের নেতা, ক্ষুদ্র-ইউক্রেনের নন।’ তবে ২০১৪ সালে রাশিয়া যে ক্রাইমিয়া অঞ্চলকে দখল করে নিজের সীমানায় ঢুকিয়েছে, তার কথা কিছু উল্লেখ করেননি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।

রাশিয়া এখন ইউক্রেনের মারিউপোল শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য লড়াই করছে।

দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এই শহরটির বিশাল ইস্পাত কারখানা আযভস্টাল স্টিল ওয়ার্কসে এখনো কিছু ইউক্রেনিয়ান সৈন্য এবং বেসামরিক মানুষ রয়ে গেছে। সেখানে রুশরা এখন আক্রমণ চালাচ্ছে।

রাশিয়া যদি মারিউপোলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে, গত দুমাসের যুদ্ধে রাশিয়ার জন্য এটি হবে সবচেয়ে বড় অর্জন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ৯ নভেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তখন উদযাপন করার মতো একটি বিজয় দেখাতে পারবেন। রাশিয়ায় প্রতি বছর এই দিনটিতে ঘটা করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয়ের বার্ষিকী উদযাপন করা হয়।

তবে কিয়েভ থেকে লন্ডনের চ্যাথাম হাউজে দেয়া বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া ইউক্রেনের যেসব এলাকা দখল করেছে, সেগুলো তাদের দখলে রেখে দেয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না।

বিবিসির এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ থামাতে হলে যে পদক্ষেপ নিতে হবে, তা হলো ২৩ ফেব্রুয়ারির অবস্থানে ফিরে যাওয়া।’ যে দিনটিতে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে, সেদিনটির কথা উল্লেখ করছিলেন তিনি।

‘আমি ইউক্রেনের জনগণের ভোটে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছি, আমি কোনো মিনি-ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নই। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট’, বলছিলেন তিনি।

জেলেনস্কি যে ২৩ ফেব্রুয়ারির অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কথা বলছেন, তাতে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে তিনি হয়তো রাশিয়ার সাথে সমঝোতায় আসার জন্য ক্রাইমিয়া ফিরে পাওয়ার বিষয়ে অত জোরাজুরি করবেন না। রাশিয়া আট বছর আগে ক্রাইমিয়া অঞ্চল দখল করে নিজের সীমানা-ভুক্ত করে।

জেলেনস্কি রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে কূটনৈতিক সংলাপ পুনরায় শুরুরও আহ্বান জানান।

রাশিয়া বলছে, এই শান্তি প্রক্রিয়া এখন একটি ‘অচলাবস্থার’ মধ্যে পড়েছে।

মারিউপোলের আযভস্টাল স্টিল ওয়ার্কস থেকে শুক্রবার ১১ শিশুসহ আরো ৫০ জন বেসামরিক মানুষকে উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে রাশিয়া এবং ইউক্রেন। এই উদ্ধার অভিযান চলছে জাতিসঙ্ঘ এবং রেডক্রসের তত্ত্বাবধানে। এই বিশাল বড় কারখানার নিচে সোভিয়েত আমলে তৈরি টানেলে এবং বাংকারে আরো বহু মানুষ এখনো আটকে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইউক্রেনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বলেছেন, লড়াইয়ের কারণে উদ্ধার অভিযানের গতি কিছু শ্লথ হয়ে পড়েছে। তিনি জানিয়েছেন, শনিবার আবার উদ্ধার অভিযান শুরু হবে।

রাশিয়া এর আগে গত বৃহস্পতিবার হতে সেখানে তিন দিনের জন্য দিনের বেলায় লড়াই স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেছিল।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজকে ৯ মে ইউক্রেন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। রাশিয়া যেদিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করবে, ঠিক সেদিন ইউক্রেনে জার্মান নেতার সফরের একটা প্রতীকী গুরুত্ব থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

জেলেনস্কি বলেন, তিনি ৯ মে কিয়েভে এসে এরকম একটা শক্তিশালী এবং বিচক্ষণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে পারেন, এর গুরুত্ব আমি আপনাদের বুঝিয়ে বলতে চাই না, এটা বোঝার মতো যথেষ্ট সাংস্কৃতিক পরিপক্বতা আপনাদের আছে বলে আমি মনে করি।

জার্মানি ইউক্রেন যুদ্ধে যেরকম অবস্থান নিয়েছিল, জেলেনস্কি এর আগে তার বেশ সমালোচনা করেছিলেন।

গত এপ্রিলে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, রাশিয়ার জ্বালানি বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টায় জার্মানি বাধা দিচ্ছে।

আরো মার্কিন সামরিক সাহায্য
এদিকে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় আরো দেড় শ’ মিলিয়ন ডলার বাড়তি সামরিক সাহায্য ঘোষণা করেছেন।

একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এই সাহায্যের মধ্যে অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও রেডার এবং ইলেকট্রনিক জ্যামিং সরঞ্জাম আছে।
সূত্র : বিবিসি