রুপগঞ্জ ট্রাজেডি : চরফ্যাশনে পাঁচ শ্রমিক পরিবারের আহাজারি যেন থামছে না

আপডেট: জুলাই ১১, ২০২১
0

মোঃ সিরাজুল ইসলাম, চরফ্যাশন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার হাসেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় অগ্নিকান্ডে নিখোঁজ রয়েছেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার পাঁচ শ্রমিক। গত চার দিনেও তাদের সন্ধান মেলেনি। ওই পাঁচ শ্রমিক অগ্নিকান্ডের দিন কারখানার চতুর্থ তলায় কাজ করছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে তাদের পরিবার। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা জানেন না পরিবারের সদস্যরা। তারা বেঁচে আছেন কিনা, তাও জানা নেই স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের। উপজেলা প্রশাসন খোঁজ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

এদিকে নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবারে চলছে আহাজারি। ছেলের কথা বারবার মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন স্বজনরা। অগ্নিকান্ডের পর থেকেই পরিবারগুলোয় চলছে শোকের মাতম। কেউ সন্তান, কেউ বাবা হারিয়েছেন।

দরিদ্র পরিবারগুলো হয়ে পড়েছেন বাকরুদ্ধ।
নিখোঁজ পাঁচ শ্রমিক হলেন চরফ্যাশন উপজেলার আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের আমিনাবাদ গ্রামের ফজুলের ছেলে হাসনাইন (১২) ও একই বাড়ির কবিরের ছেলে রাকিব (২৮) এবং এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের আবদুল মান্নানের ছেলে নোমান, ওমরপুর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে মহিদউদ্দিন ও চর মাদ্রাজ ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামের তাইজুলের ছেলে রাকিবুল হাসান। হাসনাইন ও রাকিব সেমাই প্যাকেটজাতের কাজ করত। নিখোঁজ পাঁচ জনের মধ্যে দুজন পুড়ে মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় আবদুল্লাহপুর ইউপি চেয়ারম্যান আল এমরান প্রিন্স।

চেয়ারম্যান জানান, রাকিব ও হাসনাইন নিহত হয়েছেন এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা তখন ( অগ্নিকান্ডের দিন) কারখানার চতুর্থ তলায় কাজ করছিলেন।
নিখোঁজ হাসনাইনের বাবা ফজলু সেলফোনে জানান, তার ছেলে (হাসনাইন) ফ্যাক্টরিতে কাজ করত। কারিগর রাকিবের সহকারী ছিল সে। অগ্নিকান্ডের দিনও তারা কারখানায় কাজ করেছিল।
কান্নাকণ্ঠে ফজলু বলেন, গত বুধবার ছেলের সঙ্গে সেলফোনে শেষ কথা হয়েছিল। সে বলেছিল (হাসনাইন) বাবা ছয় দিন পরেই বাড়িতে চলে আসব। কিন্তু আমি তাকে বলেছি, লকডাউনের মধ্যে আসার দরকার নেই, তুমি তোমার মামার বাড়িতে থাকো। আমি সেখানে ফোন করে দেব। এর পর আর ছেলের সঙ্গে কথা হয়নি। আমার একমাত্র ছেলে। সে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। ছেলে তো আর ফিরে এলো না। আমি এখন কী নিয়ে থাকব। আমার তো সব শেষ হয়ে গেছে।
আব্দুল্লাহ পুর ইউপি চেয়ারম্যান আল এমরান ফ্রিন্স রবিবার (১১জুলাই) সকাল সাড়ে এগারোটায় নিহত শ্রমিক পরিবার কে শান্তনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি আরো বলেন, আমার ইউনিয়নের দুই শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা গেছে। আমি তাদের পরিবার কে কি বলে শান্তনা দিব ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা পাঁচ জনের নাম-ঠিকানা পেয়েছি। তারা সবাই চরফ্যাশন উপজেলার বাসিন্দা এবং পুড়ে যাওয়া কারখানার শ্রমিক ছিলেন। তবে তাদের এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আমরা ঢাকায় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।