রূপগঞ্জে কথিত স্ত্রী বন্ধু ও বন্ধুর স্ত্রীই হত্যা করে আকাশকে আদালতে স্বীকারোক্তি

আপডেট: এপ্রিল ২০, ২০২১
0

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : আকাশ, শাবনুর, সুমন মিয়া ও সাবিনা আক্তার। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ওরা থাকতো রূপগঞ্জে। এরমধ্যে গত ১২ এপ্রিল বিকেলে রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার বরাব বাজার এলাকার একটি আবদ্ধ ঘর থেকে আকাশ (২২) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এরপর থেকেই পালিয়ে যায় আকাশের কথিত স্ত্রী শাবনুর, বন্ধু সুমন মিয়া ও তার কথিত স্ত্রী সাবিনা আক্তার । পুলিশের সন্দেহ হয় এ হত্যাকান্ডের পিছনে জড়িত রয়েছে পলাতকরা। ওদের গ্রেফতার করতে মাঠে নামে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাতে হবিগঞ্জ জেলার হবিগঞ্জ জেলার সদর থানার পোদ্দার বাজার এলাকার বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে নিহত আকাশের কথিত স্ত্রী শাবনূর, সুমন ও তার কথিত স্ত্রী সাবিনা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে।

রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জসিম উদ্দীনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। গ্রেপ্তারকৃত সুমন মিয়া হবিগঞ্জ জেলার সদর থানার পোদ্দার বাজার এলাকার সোহেল মিয়ার ছেলে, সাবিনা আক্তার একই এলাকার মালেক মিয়ার মেয়ে ও নিহত আকাশের কথিত স্ত্রী শাবনূর একই এলাকার জিতু মিয়ার মেয়ে। নিহত আকাশও একই এলকার হেকিম মিয়ার ছেলে।

গ্রেপ্তারের পরই বের হয়ে আসে হত্যাকান্ডের মূল রহস্য। তাদের স্বীকারোক্তি মতে আকাশের পিতার দায়ের করা একটি মামলার প্রতিশোধ নিতেই প্রতিপক্ষ এ হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করে। আকাশের কথিত স্ত্রী শাবনুর, বন্ধু সুমন মিয়া ও তার কথিত স্ত্রী সাবিনা আক্তার খাবারের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে শ^াসরোধ করে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটনায়।

রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জসিম উদ্দীন বলেন, নিহত আকাশ হবিগঞ্জ জেলার সদর থানার পোদ্দার বাজার এলাকার হেকিম মিয়া ছেলে। হেকিম মিয়া তার প্রতিবেশী সিদ্দিকের কাছে কিছু টাকা পেত। পাওনা টাকা না দেওয়ায় হেকিম মিয়া বাদী হয়ে সিদ্দিকের নামে হবিগঞ্জে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
গতমাসে আকাশ মিয়া শাবনূরকে স্ত্রী বানিয়ে ও তার বন্ধু সুমন মিয়া সাবিনা আক্তারকে মিথ্যে স্ত্রী বানিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলার বরাব এলাকার শুক্কুর আলীর বাড়িতে ভাড়া উঠেন। এরপর থেকে আকাশ-শাবনূর ও সুমন মিয়া-সাবিনা আক্তার স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে এখানে বসবাস করে আসছিল।

সিদ্দিকের সঙ্গে সুমন মিয়া ও আকাশের কথিত স্ত্রী শাবনূরের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। সিদ্দিক তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিশোধ নিতে সুমন ও শাবনূরের সঙ্গে আকাশকে হত্যা করার কনট্রাক্ট করেন। কন্ট্রাক্ট গত ১১ এপ্রিল রবিবার রাতে আকাশের ঘরে কথিত স্ত্রী শাবনূর ও সুমন মিয়া নুডলসের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে আকাশকে অজ্ঞান করে ফেলেন। এসময় শাবনূরের ওড়না দিয়ে শাবনূর, সুমন মিয়া ও সাবিনা আক্তার ওড়না গলায় পেচিঁয়ে আকাশকে শ^াসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
পরিদর্শক (তদন্ত) জসিম উদ্দীন আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা বলেন, তাদের উভয় দম্পত্তির কেউই বিবাহিত ছিল না। মিথ্যা স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে তারা বসবাস করছিল।

আসামিরা জানায়, হবিগঞ্জের সিদ্দিক মিয়া নামে এক ব্যক্তির কাছে আকাশের বাবা হেকিম কিছু টাকা পেতো। হেকিম তার পাওনা টাকা আদায় করতে না পেরে সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলার প্রতিশোধ নিতে সিদ্দিক সুমন, সাবিনা এবং শাবনুরকে অর্থের বিনিময়ে আকাশকে হত্যা করাতে প্ররোচিত করে।

এম আর কামাল