লকডাউনকালীন বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশ সদর দফতরের জবাব

আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২১
0

ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২১ খ্রি.

করোনা সংক্রমণরোধে চলাচল নিয়ন্ত্রণে সরকারি আদেশ বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্য কর্তৃক হয়রানি ও অসহযোগিতার কিছু অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ সকল তথ্য ও সংবাদ উঠে এসেছে গণমাধ্যমেও। এ প্রসঙ্গে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বক্তব্য সম্মানিত জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে উপস্থাপন করা হলো।

১। করোনার এই অতিমারীতে ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার), ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশ সর্বতোভাবে দেশের মানুষের পাশে থেকেছে। অতিমারীর শুরুতে যখন প্রচন্ড ভয় ও বিভীষিকা গ্রাস করেছে সারা পৃথিবীকে, সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবে অনেকেই যখন দায়িত্বপালনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশের দুই লক্ষাধিক সদস্য জীবনের পরোয়া না করে ভালবেসে মানুষের পাশে থেকেছে। করোনায় মৃতের জানাজা ও দাফন, খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ, চিকিৎসক ও জরুরি সেবাকর্মীদের যাতায়াতে সহায়তা, শিল্প উৎপাদন ও কৃষি পণ্যের পরিবহন ও বিপণনে সহায়তা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের অকুন্ঠ ভালবাসা পেয়েছে পুলিশ।

২। পাশাপাশি, কর্তব্যরত অবস্থায় আক্রান্ত হয়ে ১৬ এপ্রিল ২০২১ খ্রি. পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের মোট ৯১ জন কর্মকর্তা ও সদস্য শাহাদাতবরণ করেছেন। অবসরোত্তর ছুটি ও অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা ও সদস্য এবং পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা বিবেচনায় নিলে নিহতের এই সংখ্যা অনেক বেশি। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন বিশ হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য। দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় আত্মোৎসর্গকারী এই বীর সেনানীদের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ গর্বিত।

৩। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তে করোনা মোকাবিলায় পৃথিবীর সফলতম দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশ পুলিশও সরকারের সকল নির্দেশনা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও ডেডিকেশনের সাথে পালন করেছে। ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার), ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ এর উদ্যোগে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স দ্রততম সময়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোসিডিওর) প্রণয়ন করেছে। চালু হয়েছে প্যান্ডেমিক পুলিশিং, যা সারাদেশে করোনা সংক্রমণ রোধে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করেছে। করোনার প্রথম ঢেউ সফলভাবে মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

৪। বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। ১৪ এপ্রিল ভোর হতে ২১ এপ্রিল মাঝরাত পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যগণ নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা সংক্রমণ রোধের স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে গ্রীষ্মের এই দাবদাহে সার্বক্ষণিক রাস্তায় রয়েছে। পাশাপাশি, চলমান রয়েছে দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার নিয়মিত দায়িত্ব পালনও। দৃশ্যত বিনা কারণে বের হওয়া এবং জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য নিরুপন করতে গিয়ে এবং অহেতুক কাজে বের হওয়া থেকে তাদেরকে বিরত রাখতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদেরকে। এছাড়া, বিনা জিজ্ঞাসাবাদে জরুরি প্রয়োজন নিরুপন করার কোনো উপায়ও নেই।

৫। করোনাকালে মানুষের মুভমেন্ট ও কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাম্প্রতিক নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ। জনকল্যাণে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুবিধার্থে আইজিপি’র নির্দেশে জনস্বার্থে ১৩ এপ্রিল চালু হয়েছে মুভমেন্ট পাস। মুভমেন্ট পাস গ্রহণ বাধ্যতামূলক নয় এবং সরকার ঘোষিত জরুরি সেবায় নিয়োজিত কতিপয় পেশার সাথে যুক্ত ব্যক্তিগণের জন্য এই পাসের প্রয়োজন নেই, যা উ‌দ্বোধ‌নের দিন প্রেস ব্রি‌ফিং এ স্পষ্ট করা হ‌য়ে‌ছে। জরুরি কাজে যাতায়াতকারী ব্যক্তিগণ পুলিশ চেকপোস্ট অতিক্রমের সুবিধার্থেই এই পাস সংগ্রহ করছেন।

৬। এপ্রিল ১৭, ২০২১ খ্রি. সকাল ১০টা পর্যন্ত মুভমেন্ট পাসের জন্য প্রায় ১৭ কোটির বে‌শি হিট বা চেষ্টা হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় কি বিপুল সংখ্যক মানুষ মুভমেন্ট পাস পেতে চেষ্টা করেছেন। বিপুল সংখ্যক মানুষ একই সাথে এই পাসের জন্য আবেদন করায় প্রথমদিকে সার্ভারের ওপর বাড়তি চাপ ছিল। সে জন্য সঙ্গে সঙ্গে পর্যাপ্ত সংখ্যক সার্ভার বাড়ানো হয়েছে।

৭। মুভমেন্ট পাস চালু হওয়ায় মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়েছে, যা করোনার ভয়ানক সংক্রমণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকারি নির্দেশনার কঠোর বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের সকল পুলিশ সদস্য সর্বোচ্চ ধৈর্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।

৮। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যগণ বৈশাখের এই তীব্র দাবদাহে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাজ করছেন। জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন তারা। কাজ করছেন দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। সকলকে সহায়তা করাই পুলিশের উদ্দেশ্য।

৯। এ সময় অনেক মানুষ নিয়ম ভেঙে বাইরে বেরিয়েছেন। অনেকেই জিজ্ঞাসাবাদে বাইরে বেরোনোর স্বপক্ষে উপযুক্ত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সম্মানিত কোনো কোনো নাগরিক মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের নিকট পরিচয়পত্র প্রদর্শনেও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তীব্র অনীহা দেখাচ্ছেন। অনেকে ব্যর্থ হচ্ছেন পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে।

সরকারি নিষেধ থাকা সত্বেও সরকারি দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো কোনো ব্যক্তি নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করার সময় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন। জরুরি চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত স্টিকারযুক্ত গাড়িতে ব্যক্তি বিশেষের জন্য উপহার সামগ্রী বয়ে বেড়িয়েছেন, এমন সংবাদও মিডিয়ায় এসেছে। গাড়িতে চিকিৎসক নেই; চিকিৎসকের গাড়ি বলে দাবী করা হয়েছে; গাড়ির কাগজপত্র বলছে গাড়ি অন্যের নামে। ঘটছে এমন ঘটনাও। এছাড়া, জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের সাথে অপ্রয়োজনীয় তর্কে জড়িয়েছেন কেউ কেউ । এর ফলে, তার গাড়ির পেছনে লম্বা গাড়ির সারি তৈরি হয়েছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে।

১০। কেউ কেউ অনাবশ্যক ক্ষিপ্ত হয়ে ফেসবুকে একতরফাভাবে পুলিশের ওপর দায় চাপিয়েছেন। মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তা ভাইরাল করেছে