লকডাউনের নামে ক্রাকডাউনে নেমেছে সরকার : মীর্জা ফখরুল

আপডেট: এপ্রিল ১৫, ২০২১
0

লকডাউনের নামে ক্রাকডাউনে নেমেছে সরকার । ফখরুল হেফাজতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে জড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কর্তৃত্ববাদী, নির্যাতনকারী, একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের সামনে এ অভিযোগ করেন।

লকডাউনের এই সুযোগে সরকার যেন ক্র্যাক ডাউন চালাচ্ছে। ভয়াবহ করোনা, রমজান এবং লকডাউনের মধ্যেও গ্রাম-শহর, পাড়া-মহল্লায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালাচ্ছে। সর্বত্র আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কেউ যাতে টু শব্দ উচ্চারণ করতে না পারে সেজন্যই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালানোকে লক্ষ্য হিসেবে ধরে নিয়েছে সরকার। নির্যাতন-নিপীড়ণ, গুম-খুন ইত্যাদি অপকর্মের মাধ্যমে দেশকে এক ভয়াবহ অরাজকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে তারা। এর মাধ্যমে দেশকে তারা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশকে বিএনপিশুন্য করাই যেন আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর এখন প্রধান লক্ষ্য। বিএনপি’র বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কাল্পনিক কাহিনী তৈরী করে মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই সরকারের নিষ্ঠুর থাবা থেকে অন্যান্য বিরোধী দল ও মতের মানুষরাও রেহাই পাচ্ছেন না।

বর্তমান সরকার পরিকল্পিতভাবে নিজেদের সৃষ্ট অনাচার এবং করোনার মহামারীর অভিঘাতে তাদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্যই বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, এই সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাই দেশের ভয়াবহ সংকটে বা জনগণের দুর্দশা লাঘবে তাদের কোন উদ্যোগ নাই। তারা নিজেদের অনৈতিক শাসন টিকিয়ে রাখতে দমন-নিপীড়ণের স্টিম রোলার অব্যাহত রেখেছে।

হেফাজতে ইসলাম বা তাদের কোন কর্মসূচির সাথে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোন সম্পর্ক না থাকলেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হেফাজত সংশ্লিষ্ট মামলাতেও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম জড়িয়ে তাদেরকে গ্রেফতার ও হয়রানী করা হচ্ছে।

আমি অবিলম্বে এ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, শাহাদাত হোসেন এবং রফিকুল আলম মজনুসহ দেশব্যাপী গ্রেফতারকৃত বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহবান জানাচ্ছি।

খুলনা মহানগর বিএনপি নেতা বাবুল কাজী পুলিশের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে গত ১১ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। গত ২৯ মার্চ খুলনায় বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি পুলিশের হামলায় মারাত্মক আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর সভাপতি রফিকুল আলম মজনুকে দেড় মাস আগে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গত পরশু মজনুর জামিন হয়, গতকাল জামিনে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় সকল মামলায় জামিনে থাকা সত্বেও কারাফটক থেকে তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও যুবদল ময়মনসিংহ মহানগর সভাপতি মোজাম্মেল হক টুটু, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেনসহ সারাদেশে যুবদলের ৩০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি জে এম আমিনুল ইসলাম, ফরিদপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক হাসান মৃধা, গাইবান্ধা জেলা শাখার সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জসিম উদ্দিন জনিসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের ১১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ময়মনসিংহ দক্ষিণ থানার সদস্য সচিব গোবিন্দ রায়, ছাত্রদল ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখার আহবায়ক ইমন চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ জেলাধীন বাজিতপুর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ইফতেখার হায়দার, কটিয়াদি উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আশিক রহমান, খুলনা মহানগর ছাত্রদলের য্গ্মু আহবায়ক হেলাল হোসেন গাজী, যশোরের এম এম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক হাসান ইমাম, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদলের আহবায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সম্পাদক আরিফুল হক, মাহবুব মিয়াসহ ছাত্রদলের ৮১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দল চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি, যুগ্ম সম্পাদক আঁখি সুলতানা, প্রচার সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদা লিটা এবং রিনা খানসহ মহিলা দলের ১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২৬ মার্চ ২০২১ থেকে এপর্যন্ত বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ১৭৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।