‌`লক্ষ জিয়ার জন্ম না হলে দেশ বাঁচবে না ‘

আপডেট: মে ৩০, ২০২৩
0

ডা. জাকারিয়া চৌধুরী :

পত্রিকার প্রকাশক লেখা চেয়েছেন। আমার যত বই পত্তর লেখা যোখা আছে সব খুজলাম। আর্কাইভ, ইথার কোথাও কিছু নেই। জিয়ার শাহাদাৎ বার্ষিকী নিয়ে টু শব্দটি কোথাও কিছু লেখা নেই। আমি আমার বন্ধু মহলে একটা কথা প্রায়ই বলি। সে হলো, আমি না,মাঝে মাঝে ফ্রোজেন হয়ে যাই। যেন যখন যে অবস্থায় ফ্রোজেন হয়েছি, সেটা সেরে না উঠা পর্যন্ত আমি যেন অবিকল সেই অবস্থাতেই আটকে আছি। এটা কোনো অসুখ, মানসিক সমস্যা বা অন্য কিছু কিনা আমি পরবর্তীতে অনেক ভেবেও বের করতে পারিনা।

যেমন কেউ যদি এসে বলেন ( আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। জীবনে যেন এমন কিছু শুনতে না হয়। ) – তোমার সন্তান সড়ক দুর্ঘটনায়… আর লিখতে কিংবা ভাবতে আমি পারিনা। শহীদ জিয়াউর রহমান আমাদের মাঝে নেই সে সত্য আমি উপলব্ধি করি, কিন্তু লেখার জন্য যে বিশ্বাস বা দমের প্রয়োজন হয় তা আমার নেই। সেই সকাল থেকে ইতিহাসের যত ছিন্নপত্র আছে সেসব নিয়ে বসে আছি। নিহত বা শহীদ জিয়ার নিহত হবার বিষয়ে এক লাইনও মাথায় ঢুকছে না। কিছু কিছু ব্যাপার আছে যা মানুষ তার মানবীয় গুনাবলী দিয়ে নিরুপন করতে পারে না। একজন পিতা তার একমাতে সন্তানকে কতড়া ভালোবাসে তার সব দিক বিবেচনার কোনো প্যারামিটার পৃথিবীতে আছে বলে আমি বিশ্বাস করিনা।

জিয়া শহীদ হয়েছেন জানি, কিন্তু তার দর্শন, চলন বলন এবং মাত্র তিন বছরে দেশটাকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো আমার চোখে একটা সত্যের বিভ্রম। আমি যেন এই বিভ্রমের ঘোরে আটকে গেছি। কিভাবে সম্ভব ? প্রভুর একান্ত ইশারা ছাড়া এ হবার নয়। সত্তরের দশকে অশিক্ষিত, ক্ষুধা দারিদ্র পীড়িত এবং দুর্ভিক্ষের মত মহামারীতে কান্তশ্রান্ত, আক্রান্ত একটা জাতিকে নিয়ে ঘুরে দাড়ানোকে আমার চোখে,বিভ্রম ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। জিয়া, দ্যা প্রেসিডেন্ট অব রিপাবলিক অব বাংলাদেশ হ্যাজ কাম ব্যাক উইথ দ্যা হোল নেশন !! কৃষকের পাশে সগর্বে দাঁড়িয়ে জাতিকে দিয়ে হাততালি দেয়ানো কি সহজ কথা !! মানুষ যেন তেন কারনেই হাততালি দেয় বুঝি !! সেও লাখে লাখে !!! আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন, যাকে ইচ্ছা লাঞ্চিত করেন- কথাটা মনে গেথে রাখবেন। জিয়া যেখানে পা রেখেছেন সেখানে পদ্ম ফুটেছে। যে ফসলি মাঠ চষে বেড়িয়েছেন সেখানে সোনা ফলেছে। দুর্ভিক্ষের ভারে জর্জরিত একটা দেশ রাতারাতি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানা গুলোর চাকা গুম গুম করে ঘুরতে শুরু করেছে। দেশে বসন্তের হাওয়া লেগেছে। আমার ছেলে স্কলারশিপ পেয়েছে। সে কোত্থাও কোনো প্রাইভেট পড়েনি। শেষ দু লাইন কেবলমাত্র ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের মনে ও মগজে মারাত্মক নাড়া দেয়। যিনি খুশিতে ধুলো উড়াতে উড়াতে সবাইকে বলে বেড়াতে বের হয়ে যান, তিনি জানেন না তার পরশির ছেলেও পরীক্ষা দিয়েছিল। নকলে ধরা খেয়ে এক্সপেল্ড হয়েছে। তার সরল সাধাসিধে আনন্দ আর উচ্ছাসকে ওরা দেখে উস্কানি হিসেবে…. ওরা অপেক্ষা করে, আমি ছেলের জন্যে মিষ্টি বিতরন করে বেড়াই।

অজ্ঞাতনামা আইডি’ থেকে একজন লেখক জিয়া হত্যার কিছু বাহ্যিক কারন লিখেছেন। চলুন সেগুলোও দেখি-
১. জিয়াউর রহমানের ক্যারিসম্যাটিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিলো। তিনি ক্ষমতায় এসেই বাংলাদেশকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনেন এবং মুক্তিযুদ্ধের যে মূল উদ্দেশ্য ও চেতনা সেটিকে বাস্তবায়ন করেন। তিনিই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের যে মূল কারণ জাতীয়তাবাদ সেটির প্রবক্তা। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে উনি বিশ্বাসী ছিলেন।
২. তার আমলে এই অগ্রগতি পাশ্ববর্তী একটি দেশের ( মানে ভারতের ) সহ্য হচ্ছিলো না। এর প্রমাণ লাগে? পদ্মা ব্রিজে বারবার হামলা চালানো লোকগুলোই সেই একই দেশের নাগরিক যারা বাংলাদেশের মঙ্গল চায় না।
( নিজেকে রেখে অন্যের মংগল চাওয়ায় কি মাহাত্ম্য আছে আমি জানিনা। )
৩. জিয়াউর রহমান জগদ্বিখ্যাত পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানী ড. আবদুস সালামের সাথে সাক্ষাৎ করেন। বলেন তো কেনো? চিন্তা করুন শহিদ জিয়ার চিন্তাভাবনা কতো সুদূরপ্রসারী ছিলো। এখন বলতে পারেন পাকিস্তানের সহায়তা কেনো? ভারত আমাদের পারমাণবিক প্রোগ্রামে সাহায্য করবে? যে ভারত আমাদের অস্ত্রই দেয় না, সাবমেরিন কিনলে মিয়ানমারকেও সাবমেরিন দেয়, সেই ভারত??

৪. উগ্র বামপন্থী মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট কর্ণেল তাহের এবং তার সাঙ্গপাঙ্গ বাংলাদেশকে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য কি কমিউনিজম ছিলো? নাকি ইয়াহিয়াসহ একনায়কতন্ত্র- স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ ছিলো। বলেন তো? আমরা সবাই জানি কিভাবে ১৯৮০র দশকে সোভিয়েতের পতন হয় কারণ কমিউনিজম একটি ভ্রান্ত ধারণা, পিওর কমিনিজম একটি উটোপিয়ার মতো, একটা ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড যা বাস্তবতা বিবর্জিত। এদের অনেকের ক্ষোভ ছিলো জিয়ার প্রতি। তাই পাশের দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার সাথে মিলে তারা এই হত্যাকান্ডটি ঘটায়।

৫. জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন সৎ প্রেসিডেন্ট। তিনি আর ১০-১৫ থাকলে বাংলাদেশ তখনই মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর এসব দেশকে ছাড়িয়ে যেতো আর এতোদিনে একটি উন্নত রাষ্ট্র হয়ে যেতো গ্রেট ব্রিটেনের মতো। ভারত কি উন্নত? বলুন তো, কেনো একটি বড় দেশ চাবে তার পাশের ছোট একটি দেশ তার আগেই উন্নত হয়ে যাক? আমাদের বাংলাদেশটা খুব ছোট, আমাদের জনগোষ্ঠী এক, চিন্তা ভাবনা এক, ধর্ম এক। কিন্তু আমরা পারিনি। জিয়াউর রহমান বেচে থাকলে অবশ্যই পারতেন।
বাস্তব ঘটনাঃ- যেদিন জিয়াউর রহমান মারা যান সেদিন সমাজতান্ত্রিক দলগুলোর অফিসে মিষ্টি বিতরণ হচ্ছিলো। মিষ্টি খেতে খেতে এক লোক বলে ওঠেন, “আমরা উদযাপন করছি ভালো, কিন্তু লোকটা কিন্তু আসলেই সৎ ছিলো!” এটাই শহিদ জিয়ার সততার নমুনা। শত্রুও মিষ্টি মুখে নিয়ে বলছেন লোকটি সৎ ছিলো!

আপনারা বুঝেন কোন নেতাকে হারাইসেন? মুর্খের দল, ইতিহাস আগে ভালো করে জান। অন্ধ হয়ে বিবেকবোধ লোপ পায় তোদের? যুদ্ধটা না এতো সহজ ছিলো না। জিয়াউর রহমানরা একেবারে ফ্রণ্টলাইনের যোদ্ধা। উনি একজনই। আরো হাজার হাজার জিয়াউর রহমান যেনো বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে। না হলে এই দেশটাকে বাঁচানো যাবে না, পুরোপুরি দাসে পরিণত হবে।

দেখেছেন, উনি রাগের কারনে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলো গুছিয়ে বলতে পারলো না। উনার কথায় অনেক মিনিংফুল সাইট, স্পেস, ইন্ডিকেশন এন্ড ফিউচারিস্টিক দিক চাইলেই খুজে নেয়া যায় এখনো। জিয়া নেই, তার দর্শন আছে। তার দর্শন জীবন্ত বলেই জিয়া জীবিত নেই কথাটিতে আমার মনে বিভ্রম হয়। জিয়ার দর্শনকে, তার জীবনে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দকে একটা লগ টেবিলে ফেলুন। বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই টেকসই ভাবে গড়ে তোলা, স্থিতিশীল রাখা এবং বাচিয়ে রাখা বলতে যা বোঝায়, তা চাইলে লগ টেবিলটার উপর আলো ফেলুন। চুপচাপ তাকিয়ে থাকুন। প্রতিটা মিনিংফুল শব্দকে যতভাবে বিন্যাস ও সমাবেশ করা যায় তাই করুন। প্রান গেলেই মানুষ মরে যায় না। বলে না, কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। ইয়েস ডিয়ার ফ্রেন্ডস, ট্রাস্ট দিস। ট্রাস্ট মি।

লেখক: চিকিৎসক, কবি , রাজনৈতিক