লাউ চাষে স্বাবলম্বী দুলাল: এখন লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন তার দুচোখে

আপডেট: অক্টোবর ১১, ২০২১
0

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
দীগন্ত জুড়ে লাউ ক্ষেত। মাচার উপরে সবুজের সমারোহ। তার নিচে ঝুলছে শত শত লাউ। দেখলে দুচোখ জুড়িয়ে যায়। কুড়ি বছর ধরে লাউ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন দুলাল খন্দকার (৬৫)।তার বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মীরের বাড়ি গ্রামে।।
চলমান খরিফ-২ মৌসুমে বসত বাড়ির পাশেই চল্লিশ শতক জমিতে লাউয়ের আবাদ করেছেন তিনি। তার ক্ষেতের উৎপাদিত লাউ তার নিজ জেলা থেকে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায় ।
লাউ চাষী দুলাল খন্দকার (৬৫) বলেন, বিশ বছর আগে অনান্য সবজির পাশাপাশি লাউয়ের আবাদ শুরু করি। তবে অনান্য সবজিতে তেমন লাভের মুখ না দেখলেও লাউ চাষে যথেষ্ট লাভ করতে থাকি। তখন থেকেই লাউ চাষে ঝুকে পড়ি। লাউ চাষের আয়ের টাকা দিয়ে পরিবারের সকল সদস্যদের ভরন পোষন সহ সংসারের যাবতীয় খরচ বহন করে আসছি। এছাড়াও লাউ চাষে আয়ের টাকা দিয়ে আমার তিন ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছি। বড় ছেলে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে পুলিশে চাকুরী করছে। দ্বিতীয় ছেলে ডিগ্রি পাশ করে এনজিওতে চাকুরী করছে এবং তৃতীয় ছেলে ডিগ্রী পাশ করে মাস্টার্সে পড়ছে। লাউ চাষে কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হইনি। বিশ ধরে লাউ চাষে যথেষ্ট লাভবান হয়েছি। এবার ৪০ শতক জমিতে লাউ চাষ করেছি। আমার লাগানো লাউয়ের জাত হলো এসিআই ময়না। ৪০ শতকে জমি তৈরী, সার, সেচ, কীটনাশক, মাচা তৈরী সহ পরিচর্যা খাতে আমার ব্যায় হয়েছে ১০ হাজার টাকা। তাতে প্রতি শতকে ব্যায় হয়েছে ২৫০ টাকা করে। ফলন ভালো হয়েছে। এবার মৌসুমের শুরুতেই আট হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি। ৪শ টি লাউয়ের প্রতিটি ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আশা করছি এবার লাউ বিক্রি করে এক লাখ টাকা আয় করবো। যদি আবহাওয়া অনুকুলে থাকে এবং বাজার দর ভালো থাকে তাহলে লাউ বিক্রি করে ব্যাপক লাভ করব ইনশাআল্লাহ।
লাউ চাষী দুলাল খন্দকারের ছোট ছেলে মাস্টার্স পড়ুয়া আশিক খন্দকার (২৪) বলেন, আমি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে মাস্টার্সে পড়ছি। পড়ালেখার পাশাপাশি অামার বয়স যখন ৭-৮ বছর তখন থেকেই বাবার সাথে লাউ ক্ষেতে কাজ করি। আমাদের লাউয়ের ফলন অত্যন্ত ভালো হয়। আমরা লাউ চাষ করে প্রতি বছর গড়ে সত্তুর হাজার টাকা করে আয় করি। লাউ চাষে আয়ের টাকা দিয়েই আমাদের পরিবারের খরচ চলে।
কৃষক দুলাল খন্দকারের ছোট ভাই কৃষক নাজিমুল হক খন্দকার (৪৮) বলেন, আমরা প্রতি বছর আলু ও লাউয়ের চাষ করি। আমার বড় ভাই দীর্ঘদিন থেকে লাউয়ের চাষ করে আসছেন। লাউ চাষে আয়ের টাকা দিয়ে তিনি তার ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ এবং সংসারের ব্যায় বহন করেন। তার লাউ চাষ দেখে মুগ্ধ হয়ে আমিও লাউ চাষের চেষ্টা করতেছি।
রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সম্পা অাক্তার জানান, উপজেলায় এ মৌসুমে ৭শ হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। তবে এখনও অনেক জমিতে।শাকসবজি চাষ না করায় লক্ষ্যমাত্রা এখনও পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। কিন্তু খরিফ-২ এ চল্লিশ হেক্টর জমিতে লাউয়ের চাষ হওয়ায় লাউয়ের ফলন ভালো হয়েছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলমান মৌসুমে জেলার নয়টি উপজেলার ১ হাজার ১শ ৪৮ হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। তবে সে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে ১ হাজার ১শ ৯৫ হেক্টর জমিতে শাকসবজির চাষ হয়েছে। এতে শাকসবজির ভালো ফলন হয়েছে।

####