লাভের স্বপ্ন নিয়ে কুড়িগ্রামের কৃষকরা ফুলকপি চাষে ব্যস্ত

আপডেট: অক্টোবর ২৭, ২০২১
0

কুড়িগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে দীগন্ত জুড়ে সারি সারি ফুল কপি গাছ। নয়নাভিরাম সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ফুলকপি গাছের প্রতিটি সবুজ পাতা যেন দোল খাচ্ছে বাতাসে মেলে ধরেছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। গত মৌসুমে ফুলকপি চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের অনেকেই ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হওয়ার আশা নিয়ে আগাম ফুলকপি লাগিয়ে পরিচর্যায ব্যস্ত সময় পার করছেন কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার ফুলকপি চাষীরা।

সোমবার (২৫ অক্টোবর) কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ফুলকপি চাষের এমনি চিত্র দেখা গেছে।

জানা গেছে, গত মৌসুমে রাজারহাট উপজেলার অনেক কৃষকই লাভের আশায় ধারদেনা করে ব্যাপক জমিতে ফুল কপি চাষ করেছিলেন। ফুল কপির ফলনও বাম্পার হয়েছিল। তবে ফুলকপির বাজার দর প্রথমে ভালো থাকায় অনেক কৃষকই লাভবান হলেও পরবর্তীতে বাজার দর একদম নেমে যাওয়ায় অনেক কৃষকই ফুলকপি লসে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এবং অনেকেই পরিবহন খরচই না উঠার আশঙ্কায় ক্ষেতেই ফুলকপি নষ্ট করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই গত বারের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে লাভের অাশায় অাগাম ফুলকপি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ অঞ্চলের ফুলকপি চাষীরা।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামার বাড়ী অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলমান মৌসুমে কুড়িগ্রাম জেলার নয়টি উপজেলার ৭০০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজী চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় ২০০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজী চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।
উপজেলার পাঙ্গা মীরের বাড়ি এলাকার ফুলকপি চাষী জাহেরুল ইসলাম জানান, এ মৌসুমে ৬০ শতক জমিতে আগাম জাতের ফুল কপির আবাদ শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত ব্যায় হয়েছে ২০ হাজার টাকা। আরও ১০ হাজার টাকা ব্যায় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলন এখন পর্যন্ত ভালো। আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করে যদি এবার বাজার দর ভালো পাই, তাহলে গত মৌসুমের লোকসান পুষিয়ে লাভবান হওয়ার আশা করছি। প্রতি কেজি কমপক্ষে ২০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারলেই লাভবান হতে পারব।

তিনি বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই ফুলকপি চাষ করে আসছি। অনান্য সবজির চেয়ে ফুলকপি চাষে খরচ কম লাভ বেশী। গত মৌসুমে লাভের আশায় ধারদেনা করে ৩০ হাজার টাকা ব্যায়ে ৭০ শতক জমিতে ফুল কপি চাষ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু ফলন দেরীত উঠায় বাজার দর নিম্ন মুখী থাকায় ব্যায়ের খরচটাই তুলতে পারিনি। তাই এবার আগাম ফুলকপি চাষ করেছি।
একই উপজেলার ঝাড় খোলা গ্রামের ফুলকপি চাষী রানা মিয়া জানান, আমি গত মৌসুমে ঋণ করে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যায়ে ১শ ৫০ শতক জমিতে ফুলকপি চাষ করেছিলাম। কিন্তু বাজার দর এতোটাই খারাপ ছিলো যে ফুলকপি বাজারে নিয়ে গেলেও পরিবহন খরচই তুলতে পারিনি। এতে প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাই এবার ২৫ শতক জমিতে আগাম ফুলকপি লাগিয়েছি। ফলনও অত্যন্ত ভালো হয়েছে। যদি আবহাওয়া অনুকুলে থাকা বাজার দর ভালো পাই তাহলে এবার লাভের আশা আছে। উপজেলার ঝাড় খোলা গ্রামের আরেক কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, গত বছরে ১০০ শতক জমিতে ৬০ হাজার টাকা ব্যায়ে ফুলকপির অাবাদ করেছিলাম। তবে বাজার দর খারাপ থাকায় ১০০ শতক জমির ফুলকপি বিক্রি করেছি মাত্র ৪০ হাজার টাকায়। এতে করে লাভ তো দূরের কথা উল্টো ২০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। তাই এবার আগাম ৩৫-৪০ হাজার টাকা ব্যায়ে ৭০ শতক জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছি। যদি এবার অাবহাওয়া অনুকুলে থাকে, ফলন ভালো হয় ও বাজারদর ভালো পাই তাহলে লাভবান হতে পারি।
রাজারহাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফয়সাল আরাফাত বিন সিদ্দিক জানান, এ মৌসুমে উপজেলার ৭০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজী চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। তারমধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৯২ হেক্টর জমিতে শাকসবজী চাষের লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত উপজেলার ৬০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষ হয়েছে আরও কিছু জমিতে ফুলকপির চাষ হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামার বাড়ী কুড়িগ্রামের উপ-পরিচালক মোঃ মঞ্জুরুল হক বলেন, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বেশ কিছু এলাকার জমি উচু ও উর্বর হওয়ায় সেখানে ফুলকপি ছাড়াও অনান্য সবজির আগাম চাষ হয়। তবে আগাম ফুলকপি চাষীরা বাজার দর ভালো পাওয়ায় বেশী লাভবান হবে।
ফুলকপি পুষ্টি গুনে সমৃদ্ধ একটি সবজি। ফুলকপি বপনের উপযুক্ত সময় হল আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাস। প্রতি শতকে বীজের পরিমাণ দুই গ্রাম। বীজতলার জন্য ৩ ×১ মিটার মাপের ১৫ সে.মি. উঁচু বেড তৈরি করলে ভাল হয়। ভালো মানের বীজ বপন, সুষম সারের ব্যবহার ও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে ফুলকপির উচ্চ ফলন পাওয়া সম্ভব।
##