শরতের শুভ্রতায় সকালের নৈসর্গিক কাপ্তাই লেক

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২
0

ডেস্ক রিপোর্ট :

পৃথিবীর বৃহত্তম কৃত্রিম লেকটি এখন প্রাকৃতিক নৈ:সর্গ হয়ে ওঠেছে। সকালের নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতরণা হয়। অপরূপ সৌন্দর্যে টানছে অসংখ্য পর্যটক।

লেককে ঘিরে রাঙামাটির সর্বত্র গড়ে উঠেছে নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের পর্যটন স্থাপত্য। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের পদভারে মুখরিত প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্যের লীলাভুমি রাঙামাটি। কিন্তু এর ইতিহাসের কথা আমরা কখনো স্মরণ করার ফুরসত পাই না। অবশ্য এখন আর এসব খেয়াল রাখার প্রয়োজনীয়তাও অবস্থাদৃষ্টে অনেকটা কেটে উঠা গেছে বলে মনে হয়। তারপরও আজ রাঙামাটিতে এসে বিশ্বকবি রবী ঠাকুরের- গ্রামছাড়া এই রাঙামাটির পথ আমাকে শুধু মন ভুলায়নি পথ ভুলিয়ে বর্তমান থেকে ইতিহাসেও নিয়ে গেছে। তাই লেকের ঐতিহাসিক স্মৃতি রোমন্থন না করে পারলাম না।

বাংলাদেশের বৃহত্তর পার্বত্য অঞ্চলের রাঙামাটিতে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম কৃত্রিম লেক। কৃত্রিম লেক বললাম এ কারণে, এটি কোন প্রাকৃতিক লেক নয় রাজনৈতিক অর্থনীতির কারণে সৃষ্টি হয়েছে লেকটি। যে লেকের স্বচ্ছ বিশাল জলধারার উপর দিয়ে নৌকা চলছে, তার গভীর তলদেশে লুকায়িত লক্ষ লক্ষ মানব সন্তানের সর্বস্ব হারানোর বুকফাটা কান্নার ইতিহাস।

picture by সুমনা শিল্পী

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬০ সালে লর্ড কানিং এর ২২তম প্রশাসনিক নির্দেশে চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানকে একত্র করে একটি প্রশাসনিক এলাকা সৃষ্টি করা হয়, যার নাম পার্বত্য চট্টগ্রাম। গভীর অরণ্যে ঢাকা পার্বত্য এলাকায় বেশিরভাগ বাসিন্দাই ছিলেন বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। ১৯০৬ সালে ব্রিটিশ সরকার এই পাহাড়ি ভূখন্ডের জলধারা কর্ণফুলি নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
কাপ্তাই লেক, বাংলাদেশ।

ছবি: সুমনা শিল্পী

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্গত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার এবং দাতা সংস্থা ইউএসএইড এর সহায়তায় শুরু হয় কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে একটি সমন্বিত প্রকল্পের মাধ্যমে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ। দৈর্ঘ-প্রস্থ ও উচতায় বিশাল এই বাঁধ নির্মাণ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয় বিরাট সমস্যা, বিরাট মানবিক বিপর্যয়। কাপ্তাই বাঁধ তৈরির কারণে ৬৫৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়। যারমধ্যে ছিলো ২২ হাজার একর চাষাবাদযোগ্য জমি ও ২৩৪ কিলোমিটার বনাঞ্চল। জমির ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট চাষাবাদযোগ্য জমির প্রায় ৪০ শতাংশ।

কাপ্তাই লেক নির্মাণে প্রায় ১৮ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি বিলুপ্ত হয়েছে, প্রায় এক লাখ মানুষকে তাদের আবাসভূমি থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। যারমধ্যে ছিল ৭০ শতাংশই চাকমা জনপদের মানুষজন। যে লেকের জলের উপর আজ আমরা নৌকা ভ্রমণের মত আনন্দ উপভোগ করছি, তার তলদেশে রয়েছে লক্ষ মানবের বাড়ি-ঘর, রয়েছে রাজা সরদার কারবারীদের প্রাসাদ। এ কারণে তখন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনপদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ বেদনা, অসন্তোষ ও শান্তি বাহিনী নাম দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রাম।


সুমনা শিল্পী