শহীদ জিয়া ও বাংলাদেশ

আপডেট: মে ২৬, ২০২১
0
ziaur rahman

হামিদ কল্লোল

“প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ,
জীবন বাংলাদেশ, আমার মরন বাংলাদেশ। বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ”।
বাংলাদেশ নামক রক্তে লেখা নামটি যিনি আমৃত্যু হৃদয়ে ধারণ করেছেন তিনিই হলেন স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।তিনি বাংলাদেশের শহীদ জিয়া। শহীদ জিয়া শুধুই একটি নাম বা দুটি শব্দ নয়। শহীদ জিয়া একটি আদর্শ। একটি চেতনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বের প্রতীক।যার কন্ঠে স্বাধীনতার ভিত্তি প্রস্থর রচিত হয়েছিল,যাঁর জনপ্রিয়তায় সিপাহী জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল তিনিই হলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, স্বনির্ভর বাংলাদেশের রুপকার স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
১৯৩৬সালের ১৯শে জানুয়ারি বগুড়া জেলার বাগবাড়ি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। কমল ছিল তার শৈশবের ডাকনাম। তার পিতার নাম মনসুর রহমান।মাতার নাম জাহানারা বেগম ওরফে রানী। জিয়াউর রহমান শৈশব কালে বাবার চাকরির সুবাদে ভারতবর্ষের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়ান। তিনি নামীদামী বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষাগ্রহণ করার সুযোগ পান। কলকাতার হেয়ার স্কুল,করাচি একাডেমি,ডিজে কলেজে লেখাপড়া করেন।

শিক্ষা জীবন
শেষে ১৯৫৩ সালে কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট পদে যোগদান করেন।
তিনি ১৯৫৫সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদোন্নতি পান। সামরিক বাহিনীতে তিনি একজন সুদক্ষ সেনা কমান্ডো হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি স্পেশাল ইন্টেলিজেন্সের উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিয়ে করাচি থেকে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট স্থানান্তরিত হয়ে আসেন। তিনি সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখাতেও কাজ করেছিলেন। চাকরিতে থাকাকালীন ১৯৬০সালে দিনাজপুর শহরের বালিকা খালেদা খানমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তিনি কোম্পানি কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি খেমকারান সেক্টরে যুদ্ধে অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন।দূর্ধর্ষ সাহসীকতার জন্য বীরত্ব সুচক হিলাল ই জুরাত পদক পান। এছাড়া তাঁর ইউনিটও দুটি সেতারা ই জুরাত এবং তামঘা ই জুরাত পদক লাভ করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে পেশাদার ইন্সট্রাক্টর পদে নিয়োগ পান।সে বছর কোয়েটার স্টাফy কলেজে কমান্ড কোর্সে যোগ দেন।১৯৬৯ সালে তিনি মেজর পদে উন্নীত হয়ে জয়দেবপুর ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড পদে দায়িত্ব লাভ করেন। উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি জার্মানিতেও যান। তিনি ব্রিটিশ আর্মির সাথে কাজ করেন।১৯৭০ সালে একজন পরিপূর্ণ মেজর হিসেবে দেশে ফিরে আসেন। চট্টগ্রামে নবগঠিত ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে সেকেন্ড ইন কমান্ড পদের দায়িত্ব লাভ করেন।

১৯৭১সালের ২৫শে মার্চ কালোরাতে এদেশের জনগণের উপর বর্বর ভুমিকায় হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। গ্রেফতার করেন শেখ মুজিবুর রহমানকে। সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আত্মগোপনে চলে যান।ঠিক তখন এই সঙ্কটময় মুহূর্তে মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের পরিচালনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে গর্জে উঠলেন। তিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬শে মার্চ এবং পরে ২৭শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর ঘোষণা শুনে এদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।মেজর জিয়াউর রহমান সম্মুখ থেকে দেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। তিনি কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুক্তিবাহিনীর প্রথম নিয়মিত সশস্ত্র ব্রিগেড জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। দেশব্যাপী বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যক্রম গ্রহণ করেন।মুজিব নগর সরকার গঠন পর্যন্ত তিনি দেশ পরিচালনা করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাব পান। স্বাধীনতার পরে তিনি কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর ৪৪তম ব্রিগেডের কমান্ডার হন।৭২সালের জুন মাসে কর্ণেল পদে এবং উপসেনা প্রধান পদে নিযুক্ত হন।১৯৭৩ সালে ব্রিগেডিয়ার পদে এবং ঐ বছর অক্টোবরে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
“একাত্তরের পর
এদেশের বুকে স্মরনীয় হলো ৭ই নভেম্বর”।
১৯৭১ সালের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয়।এই বিপ্লবের মুল নায়ক ছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। তিনি ছিলেন সকলের জনপ্রিয়তার শীর্ষে।তাই যখনই খবর এলো বাকশাল পন্থী সেনা কর্মকর্তা ক্যু ঘটানোর জন্য জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করেছেন তখনই সমগ্র দেশের সিপাহী জনতার মাঝে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। তখন সিপাহী জনতা বিপ্লব ঘটিয়ে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেন। এদিন স্বজাতির স্বাধীনতা রক্ষায় দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনতার অনন্য সংহতির স্ফুরণ ঘটে।১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বরের দিন সিপাহী জনতা “নারায়ে তাকবীর- আল্লাহ আকবর,রুশ ভারতের দালালেরা- হুঁশিয়ার সাবধান,সিকিম না ভুটান না- এদেশের বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ- জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ” ইত্যাদি শ্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে। সিপাহী জনতার সেদিনের বিপ্লব দেশের তৎকালীন রাজনীতির গতিধারা পাল্টে দিয়ে নতুন পরিচয় দিয়েছিল। সিপাহী জনতার বিপ্লব না হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব কুক্ষিগত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো।
“সিপাহী বিপ্লবের হাতিয়ার
গর্জে উঠুক আরেকবার”।

জনতার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া এই শ্লোগান বলে দেয় ৭ই নভেম্বরের ঐতিহাসিক তাৎপর্য অপরিসীম। স্বাধীনতাত্তোর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন মহল নিজ স্বার্থে রাষ্ট্র ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন করে। জনগণের বাক, ব্যক্তি,মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে গলাটিপে হত্যা করে। বাকশালের বিভীষিকাময় শাসনব্যবস্থা চালু করে। দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে। দেশে নেমে আসে অশান্তি ও হতাশা। অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী কায়দায় জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার হরণ করে।
৭ই নভেম্বরের বিপ্লবের মাধ্যমে বাকশাল পন্থীদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যায়। এদিন থেকেই গণতন্ত্র অবমুক্ত হয়ে অগ্রগতির পথে যাত্রা শুরু করে।
জনতার জিয়া ১৯৭৬সালের ১৯শে নভেম্বর পূনরায় চীফ অব আর্মি স্টাফ নিযুক্ত হন। তিনি দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যান। মহিলা পুলিশ গঠন, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন,৭জাতী গ্রুপের চেয়ারম্যান,খালখনন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন, একুশে পদক প্রবর্তন ইত্যাদি উন্নয়নমূলক কর্মসূচির বাস্তবায়ন করেন।

১৯৭৭সালের ২১শে এপ্রিল তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন। দেশের রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির আভাস দিয়ে তিনি বলেন”I will make politics difficult- for the politicians”.১৯৭৮ সালের নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন।মে মাসে একুশ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন। তিনি জাতীয়তাবাদের তত্ত্বকে জনপ্রিয় করে তোলেন।বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রণয়ন করে সকল নাগরিকের ঐক্য ও সংহতির গুরুত্বারোপ করেন। তিনি রাজনীতিতে গণতন্ত্রায়ণের ব্যবস্থা করেন। বাকশালের নিষিদ্ধ ঘোষিত সকল রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দেন। তিনি সংবাদপত্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ০১লা মে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি গঠন করেন।এই দলটি বাংলাদেশে সর্বাধিকবার সরকার গঠন করেছে। বাকশালের”তলা বিহীন ঝুড়ি”আখ্যা পাওয়া দেশকে তিনি সোনার বাংলাদেশে রুপান্তরিত করেন।

স্বাধীনতা এবং ৭ই নভেম্বর পরবর্তী এদেশে জিয়াউর রহমানের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড লক্ষনীয়। তিনি জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, কৃষি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব ঘটান।সেচ ব্যবস্থা ১৪০০খাল খনন করেন। হাজার হাজার বর্গমাইল রাস্তাঘাট তৈরি করেন। পল্লী চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে গ্রামীণ চিকিৎসা সেবার উন্নয়ন করেন। অর্থনৈতিক বন্ধ্যা দূরীকরণে কৃষি উন্নয়ন, খাদ্য রফতানি, যুব উন্নয়ন,নারী উন্নয়ন, সকল নাগরিকের ধর্ম পালনের অবাধ স্বাধীনতা, প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন,গ্রাম সরকার ব্যবস্থা সৃষ্টি, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য পদ লাভ,আর কুদস কমিটি গঠন,সার্ক গঠন, বেসরকারি খাতে উৎসাহিত করা, জনশক্তি রফতানি, হিমায়িত খাদ্য, হস্তশিল্প সহ সকল পন্যের রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টিসহ শিল্প খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।
শহীদ জিয়ার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিদেশি শক্তির কতিপয় অনুচরদের হাতে ১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে স্বাধীনতার মহান ঘোষক, বাংলাদেশের মহান নেতা, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহাদাত বরণ করেন।

শহীদ জিয়া ও ৭ই নভেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের আর একটি নাম। তিনি শাহাদাত বরণ করলেও তার আদর্শে উজ্জীবিত জনগণ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় এখনো দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।তার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আজো এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সংগ্রাম করে যাচ্ছে। বর্তমানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ভোটারবিহীন নির্বাচনের বাকশাল সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেছে।গোপন চুক্তি, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে প্রভুত্ব কায়েমের বেপরোয়া কার্যক্রম চালাচ্ছে।তারা গণতন্ত্রের পক্ষের কর্মিদের বিভৎস কায়দায় নির্মমভাবে নির্যাতন করছে। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে নির্দয় ফ্যাসিবাদী আচরণ করছে।এই বাকশালী রা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার সহধর্মিণী গণতন্ত্রের প্রতীক মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে। স্থায়ী মুক্তি দেয়নি। তাকে রাজনীতি করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি শহীদ জিয়ার জৈষ্ঠ্য পুত্র বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা নিয়ে সূদূর প্রবাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকতে হচ্ছে।লাখ লাখ হামলা, মামলা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অনেক নেতাকর্মী। এভাবেই গণতন্ত্রের টুটী চেপে ধরে ক্ষমতায় আছে দুর্নীতিবাজ জালিম সরকার।

রৌদ্র উদ্দীপ্ত একটি নতুন সকালের আশায় দীর্ঘ প্রতীক্ষার আছে এদেশের লক্ষকোটি জনগন। অবশেষে শহীদ জিয়ার আদর্শে উজ্জীবিত প্রেরণায় ও ৭ই নভেম্বরের চেতনায় সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
“সিপাহী জনতা ঐক্যবদ্ধ এখনো নভেম্বরে,
গণতন্ত্রের মুক্তি আসুক রাজপথে ঘরে ঘরে।
হামিদ কল্লোল
সাহিত্য সম্পাদক,
বান্দরবান জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল।