শাল্লা হিন্দু গ্রামে পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে স্থানীয় আ’লীগ ও যুবলীগ নেতারা — বিএনপির সরেজমিন রিপোর্ট

আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২১
0

সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলায় নোয়াগাঁ গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ীঘর, মন্দির, উপসনালয়ে হামলার প্রেক্ষিতে বিএনপি‘র একটি প্রতিনিধি দল গত ২০ মার্চ ঘটনাস্থল সরজমিনে পরিদর্শন করে ।
প্রতিনিধি দলের সরেজমিন প্রতিবেদন আজ দুপুরে গণমাধ্যমের কাছে বিএনপি প্রকাশ করেছে।

বিএনপি বলেছে , হিন্দু গ্রামে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের নেতারা হামলা করেছে। হামলার ঘটনা স্থানীয় প্রমাসন আগে থেকেই জানতো বলে তারা নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা করেনি বা তাৎক্ষনিকভঅবে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

বিএনপির রিপোর্ট সম্পূর্ণভাবে তুলে ধরা হলো দেশ জনতা ডটকমের পাঠকদের জন্য ………………………..

সম্প্রতি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হিন্দু অধ্যুষিত নোয়াগাঁ গ্রামে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের বাড়ী ঘরে, মন্দিরে উপাসনালয়ে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট ও নারকীয় ধ্বংসযোগ্য চালানো হয়। এই সংবাদে বিএনপি চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং গত ১৮ মার্চ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি প্রদান করেন।

১৯ মার্চ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়। প্রতিনিধি দলটি ২০ মার্চ সুনামগঞ্জের শাল্লায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম সরেজমিনে পরিদর্শন করে। প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুরুল, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, শাল্লা ও দিরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অসংখ্য নেতা কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

ঐদিন বেলা ১টার সময় শাল্লার নোয়াগাঁয় উপস্থিত হয়ে সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগীদের বাড়ী ঘরে, উপাসনালয়ে যে অবর্ণনীয় ধ্বংস লীলা দেখা যায়। ক্ষতিগ্রস্থরা ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় অকপটে বলেছেন, ঘটনার দিন মাইকে প্রচার করে ঘটনার সময় স্থানীয় যুবলীগ নেতা স্বাধীন মিয়ার নেতৃত্বে তার অনুসারী শত শত মানুষ ঐ গ্রামে উপস্থিত হয়ে প্রায় ৬০/৭০টি বাড়ী ঘরের সমস্ত মালামাল ও আসবাবপত্র লুটপাট করতে থাকে, বাড়ী ঘরের জানালা, দরজা, বেড়া কুপিয়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে, নারী পুরুষ ও শিশুদের মারধর করে। শিশু বাচ্চাদের নিয়ে বাথরুমে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে থাকা মহিলাদের বের করে এনে লাঞ্ছিত করে। আওয়ামী যুবলীগের সন্ত্রাসী হারমাদ বাহিনী হিন্দুদের বাড়ীঘর, মন্দির উপাসনালয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।

শাল্লা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান,গনেন্দ্র চন্দ্র দাশ আমাদের সাথে ঘটনাস্থলে দেখা করে বিস্তারিত বলেন।
বর্তমান চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুলের সাথেও আমাদের কথা হয়। তিনি হামলার ভয়াভয়তা আমাদের কাছে তুলে ধরেন। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম পরিদর্শনকালে নারী,পুরুষ সকলে হামলার বর্ননা দেন।

আমাদের সাথে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যাক্তি অশোক তালুকদার, রমাকান্ত দাস পিন্টু, সদস্য গনেন্দ্র চন্দ্র দাশ,বানুজয় দাশ প্রমুখ কথা বলেন। ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে হিমাংশু দাস, শিপ্রা রাণী, লক্ষী, মিনতিসহ প্রায় অধশতাধিক ক্ষতিগ্রস্থ ও প্রত্যক্ষদর্শির বক্তব্য আমরা লিপিবদ্ধ করি।

প্রশাসনের গাফিলতি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দের প্রচ্ছন্ন মদদে শাল্লার নোয়াগাঁ গ্রামে ন্যাক্কারজনক এই ঘটনা ঘটে। ঘটনা ঘটার পরেও স্থানীয় প্রশাসন তাৎক্ষণিক কোন ব্যবস্থা নেয় নাই। পরবর্তীতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলার প্রধান আসামী স্থানীয় যুবলীগ সভাপতি স্বাধীন মিয়া। অন্যান্য আসামীরাও ক্ষমতাসীন দলের। এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক। এলাকায় এখনও আতংকিত গ্রামবাসী বাড়ীতে থাকতে ভয় পেয়ে চরম উৎকন্ঠা ও আতংকের মাঝে দিন কাটাচ্ছে।

আমাদের দেশ আবহমানকাল ধরেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কিন্তু যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই সংখ্যা লঘুদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন, বাড়ী দখল, জমি দখল ও লুন্ঠন শুরু হয়।
ইতোপূর্বে রামু, নাছির নগর, পাবনার হেমায়েতপুর, নাটোরের বড়াইগ্রাম, ফরিদপুর, ভোলা , মাগুরাসহ সারাদেশে এধরণের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। কোন ঘটনারই এখনও পর্যন্ত বিচার হয়নি। দোষীরা শাস্তি পায়নি।

আমরা সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ন্যাক্কারজনক নির্মম এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ঘটনার সাথে জড়িত সকলের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করছি। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ী, মন্দির, উপাসনালয় পুনঃনির্মাণ ও পুনর্বাসনে সরকারকে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে আসার এবং ঐ এলাকাসহ হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত অন্যান্য এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

ঘটনার প্রেক্ষিতে যে মামলা হয়েছে,তার অপব্যাবহার যেন না হয় এবং নিরপরাধ কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়, সে দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে প্রশাসনকে।