“শাহ আবদুল হান্নান ছিলেন সামাজিক ন্যায়বিচার, প্রশাসনিক সংস্কার ও মুসলিম উম্মাহর একজন অগ্রপথিক – দাতো সেরি ড. আনোয়ার ইব্রাহিম

আপডেট: জুলাই ৪, ২০২১
0

নিজস্ব প্রতিবেদক:
মরহুম শাহ আব্দুল হান্নান মানবতা, ধৈর্য, বিনয়, নম্রতা ও বাস্তব জীবনে ইসলামী অনুশীলনের এক অনুপম দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। তাঁর সততা, কর্মদক্ষতা ও ব্যক্তিগত জীবন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি আলোকবর্তিকা। তিনি ইসলামী ব্যাংকিং ব্যাবস্থা, লিঙ্গসমতা, সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, দূর্নীতি দূরীকরণসহ মুসলিম উম্মাহর সমসাময়িক সমস্যা ও সমাধান নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। পড়াশুনা ও জ্ঞান অর্জনের প্রতি ছিল তার অসীম আগ্রহ। ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। তার এই আদর্শকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌছে দিতে হবে।

গত শনিবার ০৩ জুলাই ২০২১ সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে ইউ এস (US) ভিত্তিক আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক “ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক থ্যট” (আইআইআইটি)র আয়োজনে “Memorial Webinar on the Thoughts and Contributions of Shah Abdul Hannan” শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধাণ আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে মালয়েশিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, পিপলস জাস্টিস পার্টির সভাপতি এবং ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ইসলামিক থ্যট (আইআইটি), যুক্তরাষ্ট্রের এমেরিটাস চেয়ারম্যান দাতো সেরি ড. আনোয়ার ইব্রাহিম এসব কথা বলেন।

আইআইআইটি বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. এম আব্দুল আজিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় নির্ধারিত আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন আইআইআইটির প্রেসিডেন্ট ড. হিশাম আলতালিব, সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর ড. ওমর হাসান কাসুলি, আইআইআইটি পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক ও বর্তমান পরিচালক যথাক্রমে প্রফেসর ড. ফাউজান নূরদিন ও ইমেরিটাস দাতো ড. হাজী জামিল বিন হাজী ওসমান, ইউনিভার্সিটি অব মালায়ার সাবেক রেক্টর ও ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক থ্যট এন্ড সিভিলাইজেশন (ISTAC) এ অবস্থিত (Al-Ghazali Chair of Islamic Thought) এর প্রফেসর দাতুক ড. ওসমান বকর, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালেশিয়ার সাবেক রেক্টর প্রফেসর তান শ্রী ড. মোহাম্মদ কামাল হাসান, আইআইআইটি ইন্দোনেশিয়ার প্রধান সমন্বয়ক ও বিশিষ্ট মানবাধিকার ব্যাক্তিত্ব হাবিব চিরজিন, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আবু বকর রফিক আহমদ, বিআইআইটির প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি জেনারেল এম জহুরুল ইসলাম, দ্য উইটেনেসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. নাসিমা হাসান প্রমুখ।

ড. হিশাম আলতালিব পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে মরহুম শাহ আব্দুল হান্নানের সুমহান ব্যক্তিত্বকে স্বরন করেন। তিনি বিখ্যাত হাদিস “আল্লাহ্ তায়ালা ইলমকেকে তার বান্দাদের থেকে উঠিয়ে নেবেন না। বরং তিনি আলেমদেরকে উঠানোর মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নেবেন। এমনকি একসময় কোন আলেমই অবশিষ্ট থাকবে না। মানুষ তখন অজ্ঞ-মুর্খ লোকদের নিকট প্রশ্ন করবে, তারা ইলম ব্যতীত ফতোয়া দিবে। ফলে তারাও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে [বোখারী শরীফ, হাদীস নং ৬৮৭৭, মুসলিম শরীফ নং২৬৭৩]। তিনি সুরা আহযাব ২৩, সুরা বাকারা ২৫৪ এর উল্লেখ করে বলেন শাহ আব্দুল হান্নান (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব যার কর্ম ও লেখনি মুসলিম উম্মাহকে পথ চলতে শেখাবে।

প্রফেসর ড. ওমর হাসান কাসুলি বলেন, শাহ আব্দুল হান্নান ছিলেন উম্মাহর ঐক্যের এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি তার কথা, কাজে ও আচরণে অনন্য আদর্শের দৃষ্টান্ত তৈরী করে গিয়েছেন। তিনি যেমন ছিলেন স্রষ্টার ইবাদাতে একনিষ্ঠ, তেমনি মানুষের সাথে ব্যবহারে ও আতিথেয়তায় ছিলেন সুন্দর। তিনি সবার কাছে প্রতিটি লিখা পাঠিয়ে তাঁদের সাথে পরামর্শ করতেন। তার লেখনীতে সুদূরপ্রসারী চিন্তার প্রতিফলন ছিল যা মুসলিম উম্মাহকে এগিয়ে নিয়ে যাবে অনেকদুর।

সভার অন্যান্য বক্তারা আলোচনায় অংশ নিয়ে আরও বলেন, শাহ আব্দুল হান্নানের জীবন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। বিরল চরিত্রের অধিকারী ও বহুমুখী প্রতিভা শাহ আব্দুল হান্নানকে দল-মতের উর্ধ্বে উঠে বিশ্লেষণ করার মধ্য দিয়েই দেশ, জাতি ও মানুষ প্রকৃতভাবে উপকৃত হবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. এম আব্দুল আজিজ তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, শাহ আব্দুল হান্নান নিজেই একটি ইন্সটিটিউশন। তাঁকে স্বরণ রাখার বা তাঁকে শ্রদ্ধা করার ভালো উপায় হলো তাঁর ভারসাম্যপুর্ণ চিন্তা, নীতি ও ব্যাক্তিজীবনের অনুশীলনগুলোকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করা এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাঁর মিশন ও ভিশন অনুযায়ী পরিচালনা ও শক্তিশালী করা। তাহলেই তাঁর স্বপ্নের বাস্তবায়ন হবে এবং তাঁর আমলনামায় তা সাদাকায়ে জারীয়া হিসেবে অনন্তকাল জারী থাকবে।

বিআইআইটি’র সহকারী পরিচালক ড. সৈয়দ শহীদ আহমদের কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদিআরব, সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষক, শিক্ষকসহ প্রায় সহস্রাধিক লোক অংশ গ্রহণ করেন।