শুভ জন্মদিন বিএনপি : গনতন্ত্রের পথে আপোষহীন একটি নাম

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২
0

শুভ জন্মদিন প্রিয় বিএনপি। ৭৮ থেকে ২০২২, গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলা বিএনপি আজ তাঁর চার দশক পালন শেষ করে পঞ্চম দশকে পা রেখেছে। গত এই চার দশকে বিএনপি সবচে জনপ্রিয় দল হিসেবে এদেশের মানুষের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে। সবচে বেশি সময় দেশ শাসন করেছে গনতান্ত্রিক পথে। সবচে বেশি বার রাষ্ট্র ক্ষমতায় নির্বাচিত যেমন হয়েছে তেমনি এদেশের সবচে বেশি রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছে বিএনপি। বিএনপি যতটা না বহিঃশত্রুর মোকাবেলা করেছে, তারচে বেশি মোকাবেলা করতে হয়েছে বিএনপি বিদ্বেষী সরকার এবং দলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা স্লিপিং এজেন্টদের। এর ফলেই এদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট, স্বাধীনতার ঘোষক ও বীর উত্তম মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান নামের এক সোনালী সুর্যের প্রান হারাতে হয় নির্মম ভাবে। প্রেসিডেন্ট জিয়া খুন হন। তারপরের ইতিহাস এখনো জীবন্ত। বেগম জিয়া দলের হাল ধরার পর থেকে আজ পর্যন্ত দৃঢ় হাতে সামলে চলেছেন সব দায় দায়িত্ব। তিনি প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে কাজ করছেন নাকি জেলখানায় বসে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাতে কিছু যায় আসে না। যিনি দেশের তরে নিজেকে বিলিয়ে দিতে জানেন তিনি এসব ভাবতে শেখেন না। বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন জনাব তারেক রহমান। জনাব রহমানের কার্যপদ্ধতির হয়তো এক অনুপল দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। আমি আশাবাদী, জনাব তারেক রহমানের হাত ধরেই এদেশের সোনালী সুর্য আবারো উদিত হবে।

BNP- Bangladesh Nationalist Party. বাংলায় ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’। ইংরেজিতে এর সংক্ষিপ্ত রুপ ‘বিএনপি’ নামেই দলটি দেশ বিদেশে পরিচিত। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর স্বাধীনতার ঘোষক ও বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এই দল প্রতিষ্ঠা করেন। নানান ঘাত প্রতিঘাত পার করা এই দলটির আজ ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

ডান, বাম, মধ্যপন্থী সহ সব শ্রেনী পেশার লোকের সমন্বয়ে গঠিত হয় বিএনপি যার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং ডাঃ এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির সবচে প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এর নেতাকর্মী বাছাইয়ের পদ্ধতি। প্রায় ৪৫ শতাংশ সদস্য শুধুমাত্র রাজনীতিতে যে নতুন ছিলেন তাই নয়, তারা বয়সে ছিলেন তরুন। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বিকেল ৫ টায় রমনা রেস্তোরাঁয় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষনাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যাত্রা শুরু করেন। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহবায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নাম এবং ১৯ শে সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জন সহ ৭৬ জন সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গনতন্ত্রায়ন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য এবং জনগনের মধ্যে স্ব-নির্ভরতার উত্থান ঘটানো এবং এসবের ভিত্তিতে জিয়াউর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ১৯ দফা ঘোষণা করেন। এসবের মধ্যে বিএনপির রাজনীতির অন্যতম ভিত্তি গুলো হলো-

১। সর্ব শক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস,
২। জাতীয়তাবাদ,
৩। গনতন্ত্র ও
৪। সমাজতন্ত্র ( অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায় বিচারের স্বার্থে )।


বিএনপি গঠনের শুরুতে দেশ বিভিন্নভাবে বিভক্ত ছিল। এসব বিভক্তির মুলে কাজ করেছে পারস্পরিক রাজনৈতিক অবিশ্বাস ( ডান, বাম ও মধ্যপন্থা ), মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষ এবং বিপক্ষের শক্তি। আর এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবি, সাংস্কৃতিক কর্মী, সামরিক বাহিনী এমনকি প্রশাসনও বিভক্ত ছিল। বিএনপি প্রতিষ্ঠার মুল ভিত্তি-ই হলো এই সকল বিভেদ ভুলে সকলে মিলে মিশে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষন, অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট – এই চারটি যে কোনটির অভিযোগ থাকে, সেসব অভিযোগকে চিহ্নিত করা হয় বিচারের উদ্দেশ্যে।


স্বাধীনতা পরবর্তী ভারত ঘেষা পররাষ্ট্রনীতি, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভারত-সোভিয়েত বলয়ের দিকে ঠেলে দেয়। ফলে আন্তর্জাতিক বিশ্বে দারিদ্র পীড়িত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ একে একে কোনঠাসা হতে থাকে। অন্যদিকে আভ্যন্তরীন লুটতরাজ এবং স্বেচ্ছাচারিতার ফল ভোগ করে এদেশের মানুষ। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম দুর্ভিক্ষের। ফলে বিএনপি গঠনের শুরুতেই যেসব বিষয় মুখ্য হয়ে উঠে তাঁর মধ্যে অন্যতম ছিল জাতীয় ঐক্য এবং নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি। বিএনপি মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশ গুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা পালন করে।

এবারে আসি আজকের কথায়। আজকে বিএনপি প্রধান জেলে আছেন। একে আমি বলি দাড়ি-কমা’র জেল। আইন নিয়ে প্রতারনার শাস্তি যদি কার্যকর করা যেত তবে এদেশে যত সংখ্যক আইনজীবি পেশাগত স্খলনের দায়ে দন্ডিত হতো, তারচে বেশি দন্ডিত হতো হয়তো বিচারকের দল। প্রশ্ন আসতে পারে, সেখানে কি খাঁটি সোনা নেই ? আছে। সতীত্ব হারিয়ে ফেলা জাতীতে দুই একটা খাঁটি সোনার জন্ম তাঁর কলংক লেপনে কোন ম্যাটার করে না। আমি বিশ্বাস করি, এদেশে এখনো একদল অসহায় আইনজীবি এবং বিচারক আছেন যারা সময়ের কাছে অসহায় আত্মসমর্পনে আজ বাধ্য হয়েছেন। আমি নিশ্চিত ভাবেই বিশ্বাস করি, আমাদের মা বেগম খালেদা জিয়া অচিরেই আমাদের কাছে ফিরে আসবেন। কোন মা-ই তাঁর সন্তানদের ফেলে বেশিদিনের জন্যে হারিয়ে যায় না। তিনি পরের প্রজন্মকে তুলে দিয়ে যাবেন তারেক রহমানের হাতে। পলিটিক্যাল সায়েন্সে মাস্টার্স কমপ্লিট করা এই যুবক আজ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গেস্ট অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি বিলেতে থেকেও দল পরিচালনা করে চলেছেন দৃঢ় হাতে। গত ১/১১ সরকার তারেক রহমানের পাঁজর গুড়িয়ে দিয়েছিল, ছোটভাই কোকোকে ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে হত্যা চেষ্টা চালিয়েছে। তারেক রহমান কোনরকমে বেঁচে গেলেও বেঁচে যেতে পারেনি তারই সহোদর কোকো। তিনি মালয়েশিয়ার মাটিতে অকালে প্রান হারান। আমি বিশ্বাস করতে চাই দেশি বিদেশী চক্রের হাতে তিনি খুন হননি।

বিএনপি কনস্টিটিউশনালি-ই একটি বহুমাত্রিক দল। এখানে ডান, বাম, মধ্য থেকে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক যেমন আছেন তেমনি আছেন বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কবি কিংবা কেরানী। এখানে বহুমতের চর্চা হয় স্বাধীন ভাবে। যেখানে স্বাধীনতা নিরংকুশ সেখানে আনুগত্যে গাফিলতি থাকে। বিএনপি তাঁর জন্মলগ্ন থেকে-ই নেতাদের কাছ থেকে আনুগত্যে গাফিলতির শিকার হয়ে এসেছে। এর ফল শুধু বিএনপি-ই ভোগ করেনি। ভোগ করেছে এদেশের আপামর জনগন। আবার এ থেকে পিউর ক্রিমটা তুলে নিয়ে খেয়ে ফেলেছে সুবিধাবাদী, বনিক, রাজনীতিবিদ ও আওয়ামীলীগের দল। বিএনপি তাঁর কোন মেয়াদই পুর্ন করতে পারেনি এসব লোকদের কারনেই। আজকে সময় এসেছে এসব খুব ভালোভাবে নিরীক্ষন করবার। এখন সময় পরীক্ষা দেবার এবং নেবার। এখন নেতারা যখন পরীক্ষা দেবেন, তাঁর পরীক্ষক হবেন কর্মীরা। আবার কর্মীদের পরীক্ষা নেবেন যোগ্য এবং দায়িত্বশীল নেতারা। তাহলেই দেশ আবারো সামনের দিকে চলতে শুরু করবে। চেতনার ট্যাবলেট না খাইয়ে দরকার ভালো ইঞ্জিন, বগি আর নির্ভুল ট্র্যাক নির্মান। তবেই না ট্রেন এগিয়ে যেতে পারবে। ফ্যাসিস্টের দল যা ইচ্ছে করে যাক। মনে রাখতে হবে, ফ্যাসিজমের পতন হয় এবং বিচার হয়। এটা আমার মুখের কথা নয়, এটাই ইতিহাস এবং এটা-ই ইতিহাসের শিক্ষা।

আমরা যেদিন হাসিমুখে বিএনপি’র জন্মদিন পালন করবো মহা সাড়ম্বরে সেদিন দেশ মুক্ত হবে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি-ই দেশের মুক্তি। মনে রাখতে হবে কখনো কখনো একজন মানুষ-ই একটা দেশের সিম্বল হয়ে উঠে। আজ খালেদা জিয়া-ই বাংলাদেশ।

আবারো শুভ জন্মদিন প্রিয় বিএনপি, শুভ জন্মদিন।

০১.০৯.২০২২ ইং

* উইকি সহ বিভিন্ন সুত্রের সহায়তা নেয়া হয়েছে।