বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপরাসন খালেদা জিয়া আবার জেলে গিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আবেদন করলে তা বিবেচনা করা হবে। এখন যে অবস্থায় আছেন তাতে আবেদন নতুন করে বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে পাসের জন্য উত্থাপিত বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২১টি বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এ তথ্য জানান আইনমন্ত্রী।
সংসদে আইনমন্ত্রী বলেন, আইন সবার জন্য সমান। কিন্তু তারপরও খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের চেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতার কারণে এই সুযোগ পাচ্ছেন। বিএনপি বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুনর্বাসন ও পুরস্কৃত করেছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। ওই মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক জিয়া। তারপরও খালেদা জিয়ার প্রতি দয়া করা হচ্ছে। সুচিকিৎসা করা হচ্ছে।
এর আগে বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২১ বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির নারী সাংসদ রুমিন ফারহানা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ‘আইনগতভাবে’ তাকে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি জানান। দণ্ডবিধির ৪০১ ধারা মতে এই সুযোগ দেয়ার এখতিয়ার সরকারের রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রুমিন ফারহানার বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তিনি কখনো বলেননি ৪০১ ধারা মতে খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু উনি বর্তমানে সাজা স্থগিতপূর্বক বাসায় আছেন, সেটা ৪০১ ধারার ভিত্তিতেই। খালেদা জিয়ার পক্ষে যে আবেদন হয়েছিল সেখানে কোনো ধারার উল্লেখ ছিল না। সরকার খুঁজে এই ধারাটি বের করেছে। আবেদনটি ৪০১ ধারার আলোকেই নিষ্পত্তি হয়েছে। আর একটি আবেদন যে ধারার অধীনে নিষ্পত্তি হয়েছে একই ধারায় বিষয়টি পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।
আইনমন্ত্রী যখন এই বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন তার সামনের আসনে ছিলেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী পেছনে ফিরে আইনমন্ত্রীকে বিএনপির কিছু অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। পরে আইনমন্ত্রী বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, খালেদা জিয়া তার চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। আর এটা পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতার কারণে। সাজা স্থগিত রেখে মুক্তির শর্তে তার বাসায় অবস্থান করা এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার কথা থাকলেও উনি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছেন। কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।
এদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রচণ্ড অসুস্থ ও দুর্বল। তাই এই মুহূর্তে তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করা জরুরি।
রাজধানীর নয়াপল্টনে মঙ্গলবার সকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় এক দোয়া মাহফিলে তিনি এই কথা জানান।
ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি জীবন থেকেও সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের কিছু হলে তার দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। মানবিক বিবেচনা করে হলেও খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে পরিবারের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠাতে পরামর্শ দিয়েছেন হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। এর প্রেক্ষিতে পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে আবার সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা।
এর আগে গত মে মাসে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। তখন শামীম এস্কান্দার জানিয়েছিলেন, ‘ডাক্তাররা তার বোন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেওয়ার পর তারা সরকারের কাছে এই আবেদন করেছেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়ার আবেদনের বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই দেখছে। এর আইনগত দিক পরীক্ষা করে দেখার জন্য আবেদনপত্রটি ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোভাবও ইতিবাচক।’
এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মঙ্গলবার সারাদেশে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
শুক্রবার রাত থেকে অসুস্থ বোধ করার গত শনিবার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই দিন রাতেই তাকে কেবিন থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘ম্যাডাম এখন সিসিইউতে আছেন। সেখানেই তার চিকিৎসা ও পরীক্ষাগুলো হচ্ছে।’ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করছেন।
৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। এভারকেয়ার হাসপাতালে ২৬ দিন চিকিৎসা শেষে গত ৭ নভেম্বর বাসায় ফিরেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এর পাঁচ দিন পর আবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো।
২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। মহামারির শুরুতে গত বছর ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এর পর থেকে এ পর্যন্ত তিনবার তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।#