সংলাপের চিঠি দিয়ে হয়রান হচ্ছেন ;পারবেন প্রশাসনকে সোজা করে ভোট দিতে—- সিইসিকে প্রশ্ন মীর্জা ফখরুলের

আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২৩
0

নির্বাচন কমিশনের সংলাপের চিঠিকে ‘অতীতের মতো ভোট করার লেটেস্ট কৌশল’ হিসেবে দেখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার দুপুরে মহানগর নাট্য মঞ্চে এক আলোচনা সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব এরকম মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ অতীতে কেউ ভোট দিতে পারছেন? আবার ওই কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এবার একুট চাপাচাপি বেশি, পরশীরা বলছে যে, আগের মতো ভোট আর চলবে না। জাপানের রাষ্ট্রদূত তো বলেই ফেললেন যে, বাপের জন্মে শুনিনি যে, আগের রাত্রে ভোট হয়।”

‘‘ ওইজন্য এখন আবার নতুন নতুন কৌশল। তারমধ্যে নতুন লেটেস্ট কৌশল হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের আমাদেরকে একটা চিঠি দেয়া।”

নির্বাচন কমিশনের সংলাপের চিঠির বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হবে জানি্য়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এটা নিয়ে আমি এখনই কথা বলতে চাই না। আমাদের সোমবার স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং আছে সেই মিটিংয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।”

বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশরার কাজী হাবিবুল আউয়াল ডিও পত্রের মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আলোচনা ও মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানান।

গত বছরের শুরুতে হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই দফায় সংলাপ করে। তবে বিএনপি ও এর মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোগুলোসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল কোনো সংলাপে যায়নি।

ইসির সংলাপ বিএনপি ছাড়াও বর্জন করে মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জেএসডি, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবি ও বিজেপি।

‘সুষ্ঠু ভোট করার ক্ষমতা ইসির নাই’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের কোনো ক্ষমতা আছে নাকী? সে পারবে এই প্রশাসনকে সোজা করতে পারবে সে ভোটে….।”

এই সময়ে দলের নেতা-কর্মীরা ‘না’ ‘না’ শ্লোগান দিতে থাকলে তিনি বলেন, ‘‘ সঠিক কথা। এই নির্বাচন কমিশন চিঠি-টিঠি দিয়ে অযথা কেনো আপনারা হয়রান হচ্ছে। আপনারা ভদ্র লোকের মতো থাকতেন, ভদ্র লোকের মতো থাকেন, বেতন-টেতন নেন। ইভিএম দিতে চেয়েছিলেন ইভিএম দিতে পারছেন না।”

‘‘ আরো অন্যান্য কি আছে না আছে। অতীতে নির্বাচন কমিশন ছিলো তারা শুধু টেনিং বাবদ কোটি কোটি টাকা খেয়ে ফেলেছেন। আপনারা এই রকম কিছু আছে কিনা সেগুলো দেখেন। অযথা জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনারা এই সমস্ত কথা বলে নিজেকে খাটো করবেন না।”

তিনি বলেন, ‘‘ সংকট একটাই। সেই সংকট হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সময়ে সরকার কে থাকবে? নির্বাচনকালীন সময়ে যদি আওয়ামী লীগ থাকে, এই সরকার থাকে তাহলে এই নির্বাচন কোনোদিনই সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ হতে পারবে না- এটা প্রমাণিত। শুধু জাতীয় সংসদে নয়, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতেও।”

‘‘ সুতরাং এসব অযথা এই এক্সসারসাইজ না করে আসল জায়গায় আসেন। আসল জায়গাটা হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। সেটা নিয়ে কাজ করুন, সেটা নিয়ে কথা বলুন, সেটা নিয়ে ঘোষণা দিন। তা না হলে অন্য কোনো কিছু দেশের মানুষ মেনে নেবে না।”

‘সরকারের নতুন খেলা’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে নতুন একটা খেলায় নেমেছে। এই খেলাটি কি? যে আমার মুখে গণতন্ত্রের কথা বলব, ভোটের কথা বলব, ভোটও করব। কিন্তু আমার কাজটা আমি কবর। আমার মতো করে নির্বাচন কমিশন গঠন করব, আমার মতো করে প্রশাসন চলবে, পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট, বিজেবি সব আমার কথায় চলবে এবং আমি যা চাইবো সেইভাবে চলবে।”

‘‘ এজন্য ২০১৪ সালে যে নির্বাচন করেছে সেই নির্বাচনে কোনো ভোটই হয় নাই। ১৫৪ জনকে আগেই ঘোষণা করে ফেললো যে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত।পৃথিবীর ইতিহাসে এই ধরনের কোনো নির্বাচন হয়েছিলো বলে আমরা জানা নাই। ঠিক একই কায়দায় ২০১৮ সালে আগের রাত্রে ভোট শেষ। অনেকে ভোট দিতে গেছেন ভোট কেন্দ্রে, গিয়ে মরুব্বীদের বলেন, চাচা হামার ভোট তো হয়ে গেছে আগের রাত্রেই। কেউ ভোট দিতে পারেনি।”

রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির উদ্যোগে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

‘আওয়ামী লীগ সব শেষ করে দিয়েছে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ সব শেষ করে দিয়েছে। আপনি যদি ভালোভাবে তাঁকান… তারা(সরকার) খালি বলে তারা এতো উন্নয়ন করেছে তা আমাদের নাকী চোখ অন্ধ, আমরা উন্নয়ন দেখতে পাই না। “

‘‘ আমি মাঝখানে বরিশাল গিয়েছিলাম, বরিশাল থেকে আসার পথে পদ্মাসেতুর উপরে দেখি কী? সেতুর উপরে অর্ধেক রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে রিপেয়ার করা হচ্ছে। একবছর পার হয়নি অলরেডি রিপেয়ারের কাজ শুরু হয়ে গেছে। সেতুর রাস্তায় যে বিটুমিন, সেই বিটুমিনের আস্তর খুলে যাচ্ছে। এই হচ্ছে তাদের উন্নয়নের নমুনা। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট ৩০ হাজার কোটি টাকা করেছো।”

তিনি বলে, ‘‘ দেশের মানুষ খেতে পায়। আর পত্রিকা খুললে দেখবেন মানুষ কিভাবে ন্যায্যমূল্যে চাল-ডাল-তেল কেনার জন্য ট্রাকের পেছনে লাইন দিচ্ছে- তাতে আবার পাচ্ছে না।”

‘‘ আর তারা(সরকার) পাতাল রেল করছে। পূর্বাচলের ওই জায়গায় পাতাল রেল করা কি খুব বেশি প্রায়োরিটি হয়ে গেছে? কোনটাই না। অথচ যেটা প্রায়োরিটি দরকার মানুষ খাদ্যের চাল, চাল, তেল, লবনসহ সব কিছুর দাম এমন দাম বেড়ে যা ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। গ্যাসের দাম বাড়ছে, বিদ্যুতের দাম বাড়ছে।”

‘মানে মানে পদত্যাগ করো’

সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের কথা একটাই- মানে মানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নাও, মানে মানে পদত্যাগ করো, মানে মানে সংসদ বিলুপ্ত করো এবং একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করো।”

‘‘ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই কমিশনের অধীনে এখানে নির্বাচন হবে এবং জনগন ভোট দেবে। এটাই আমাদের শেষ কথা।”

দেশকে রক্ষার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে নেতা-কর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার আহবানও জানান বিএনপি মহাসচিব।

স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিলো বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক দেশ হবে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর একটি দেশ হবে। যে দেশ সাম্য, সামাজিক মূল্যবোধ, অর্থনৈতিক মুক্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।”

‘‘ কিন্তু আমরা ৫১ বছরে পরে যখন স্বাধীনতা দিবসের এই আলোচনায় উপস্থিত হয়েছি আমাদের সকল নেতৃবৃন্দ বলেছেন যে, ৫১ বছর পরে আমাদেরকে অত্যন্ত দূ:খ ভারাক্রান্ত মনে বলতে হয় যে, স্বাধীনতার মূল চেতনা, মুক্তিযোদ্ধাদের যে স্বপ্ন আজকে বাংলাদেশে ধূলিসাত হয়ে গেছে। কেনো হয়েছে? একটি দল যে দল ক্ষমতায় থাকার জন্য স্বৈরাচারি, ফ্যাসিস্ট প্রক্রিয়ায় এদেশের মানুষের কথা বলার অধিকারকে, গণতন্ত্রকে, অর্থনৈতিক অধিকারকে তারা লুট করে শুধু একটি গোষ্ঠির স্বার্থে বাংলাদেশকে আজকে গণতন্ত্রহীন, বাংলাদেশকে আজকে অর্থনৈতিক ধবংসের কিনারায় নিয়ে গিয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে লজ্জ্বায় ফেলে দিয়েছে। সেই দলটি কে তারা হচ্ছে বর্তমানে যারা সরকারের আছে।”

মুক্তিযুদ্ধের ্ এই ২৫ মার্চের কালো রাত্রে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার পটভূমি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘ রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেদিন ব্যর্থ হয়েছিলেন তাদের দায়িত্ব পালনে। জিয়াউর রহমানই পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বাঙ্গালী অফিসার ও সৈন্যদের সশ্বস্ত্র করেন এবং পরদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এদেশের মানুষ সেদিন প্রথম জানতে পারে জিয়াউর রহমানের নাম।”

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ প্রচার সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলিমের যৌথ সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান বক্তব্য রাখেন।