সব রাজনৈতিক শক্তির বৃহত্তর ঐক্য দরকার গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারে- মীর্জা ফখরুল

আপডেট: মার্চ ২, ২০২১
0

বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন , সব রাজনৈতিক শক্তির বৃহত্তর ঐক্য দরকার গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারে । মঙ্গলবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই আহবান জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে দেশের একমাত্র প্রধান সংকট হচ্ছে যে, আমাদেরকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে-টু রেস্টোর ডেমোক্রেসি। আজকে আমাদের গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে, স্বাধীনতার সমস্ত চেতনা লুন্ঠন করে নিয়েছে।আজকে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিতে হবে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করবার জন্যে।”

‘‘ এখানে আসম আবদুর রবের যে বক্তব্য, মাহমুদুর রহমান মান্নার যে বক্তব্য, নুরুল হক নুরের যে বক্তব্য সেই বক্তব্যে একথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিগুলো যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তারা আজকে ঐক্যবদ্ধ হতে চায়, ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে দূর্বার গণআন্দোলন সৃষ্টি করে তারা সরকারের পতন ঘটাতে চায় এবং সত্যিকার অর্থেই জনগনের একটা পার্লামেন্ট, জনগনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আসুন আজকে আমরা সেই শপথ নিয়ে আমরা সেই লক্ষ্যে আগামী সংগঠিত হই।”

আওয়ামী লীগ জাতিকে বিভক্ত করেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গোটা জাতি বিভক্ত হয়ে গেছে। তারা শুধুমাত্র তাদের নেতা এবং যে সমস্ত নেতৃবর্গ আছেন তাদেরকে ছাড়া আর কাউকে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য, স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্যে স্বীকৃতি দিতে চায় না।”

‘‘ স্বাধীনতা কোনো একজন বিশেষ ব্যক্তি বা কোনো বিশেষ গোষ্ঠি বা দলের কারণে আসেনি। স্বাধীনতা এসেছে দীর্ঘকাল ধরে এদেশের মানুষের যে স্বাধীনতা আকাংখা আমি যতটুকু দেখেছি যে, সেই বৃটিশ পিরিয়ড থেকে এদেশের মানুষ স্বাধীনতার আকাংখা করে আসছিলো, সেজন্য এখানে বৃটিশদের বিরুদ্ধে স্বদেশী আন্দোলন হয়েছে, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠে যার নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ।”

দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বাকারী নেতৃবর্গ শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি বলেন, ‘‘ সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা জানাতে চাই যিনি যুদ্ধ ঘোষণা না করলে এদে্শের স্বাধীন হওয়া হতো না, তিনি যুদ্ধ ঘোষণা না করলে সারাদে্শের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তো না, তিনি যুদ্ধ ঘোষণা না করলে সত্যিকার অর্থেই যে চেতনার জন্য আমরা লড়াইটা করেছিলাম-একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সেটা সম্ভব হতো।”

‘‘ দুর্ভাগ্য আমাদের স্বাধীনতার পরে যারা ক্ষমতায় বসলেন তাদের হাতে গণতন্ত্র হত্যা হলো, তারা সর্বপ্রথম পুরনো কালাকানুন বিশেষ ক্ষমতা আইন, জরুরী অবস্থার আইন এবং সর্বপরি সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করল। তাদের যে রাজনৈতিক ক্যামেস্টি, তাদের যে চিন্তা-দর্শন সেখানে একটা একনায়কতান্ত্রিকতা, একটা স্বৈরাচারী মনোভাব ইনহেরেন্ট তাদের মধ্যে রয়ে গেছে। সেই কারণে এতো দীর্ঘকাল পরে আবার ক্ষমতায় আসার পরে তারা সেই ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার জন্য একই পথ বেঁছে নিয়েছে।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে সরকার গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠান ধবংস করেছেন, রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে ব্যবহার করছেন। আজকে সত্যিকার একটি স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণ করা, সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করা, সত্যিকার অর্থে একটা উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সেটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।”

‘‘ ১৯৭১ সালে আমরা কেনো যুদ্ধ করেছিলাম? আমরা তো যুদ্ধে ছিলাম। কেনো করেছিলাম যে, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। আজকে ইসু একটা, ক্রাসিস একটা- গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

‘আইজিপির বক্তব্য প্রসঙ্গে’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ পত্রিকায় দেখলাম যে, পুলিশের আইজি সাহেব তিনি একটা প্রশ্ন রেখেছে। সেটি হচ্ছে- পুলিশকে প্রতিপক্ষ বলা হচ্ছে কেনো? আমারও একই প্রশ্ন। আপনি তো একজন শিক্ষিত মানুষ, ব্রাইট অফিসার, সুদর্শন। আপনি কি একবারো প্রশ্ন করেছেন নিজেকে যে পুলিশকে কেনো প্রতিপক্ষ ভাবছে জনগন? কারা প্রতিপক্ষ ভাবছে? এই প্রশ্ন আপনি নিজেকে করে উত্তর খুঁজে বের করুন।”

‘‘ আজকে যখন নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে পুলিশ দিয়ে ভোট দিয়ে দেন। অন্য কাউকে দরকার হয় না। আজকে যখন একটা রাজনৈতিক ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো নিয়মতান্ত্রিভাবে গণতান্ত্রিভাবে সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী প্রতিবাদ করতে যায় তখন তাদেরকে এই যে, নিষ্ঠুর ভাবে নির্যাতন কেনো করা হয়? আজকে কেনো বলা হয় থানায় থানায় যে দেশটা আমরা চালাই, আমরা সরকার তৈরি করেছি, আমরাই এই সব ব্যবস্থা করব। সেই প্রশ্নটা নিজেদেরকে করুন, জানার চেষ্টা করুন তাহলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।”

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে দুর্ভাগ্য আমাদের রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো দলবাজ হয়ে পড়েছে, তাদের দলীয়করণ করা হয়েছে। আমাদের স্বপ্ন ১৯৭১ সালের সব স্বপ্ন ভেঙে তচনচ করে দেয়া হয়েছে।”

‘‘ ১৯৭১ সালে যে যুদ্ধ আমরা করেছিলাম, যে স্বপ্ন দেখেছিলাম সেই স্বপ্নগুলো ভেঙে চূরমার করেছে। এই ৫০ বছরে আওয়ামী লীগ দেশকে শুধু বিভক্ত করেছে, এই ৫০ বছর সমস্ত অধিকারগুলোকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। উন্নয়নের কথা বলে, সিঙ্গাপুর বানানোর কথা বলে, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার কথা বলে আজকে আমাদের সম্পদ লুট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। লুটেরাদের হাতে এদেশকে দিয়ে দেয়া হয়েছে।”

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা লগ্নে প্রথম স্বাধীন দেশের পতাকা উত্তোলনকারী জাতীয় সামাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির চেয়ারম্যান আসম আবদুর রব বলেন, ‘‘ একাত্তরের আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে একেবারে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে সীমাবদ্ধ করে রাখতে চায়। এই ধরনের সংকীর্ণতা মুক্তিযুদ্ধকে অসন্মানের শামিল।”

‘‘ সমগ্র জাতির নিরচ্ছিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের পরিণতিতে মুক্তিযুদ্ধ এবং অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই আমরা লাভ করেছি আমাদের স্বাধীনতা।”

সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনার প্রতি ইংগিত করে তিনি বলেন, ‘‘ বাঁচতে হলে লড়তে হবে, লড়াই করে জিততে হবে। এই লড়াই বাঁচার লড়াই, এই লড়াইয়ে জিততেই হবে। বাঁশের লাঠির পা্ল্টা উত্তর দিতে হবে। সেই ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।”

জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব কেড়ে নেয়ার উদ্যোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘এই উদ্যোগ সরকার ‘মুক্তিযুদ্ধের ভিলেন’ হিসেবে চিত্রিত হবে।রাষ্ট্রের যে বীরত্ব প্রদর্শন করা হয়েছে সে বীরত্ব বাতিলের অধিকার কারো নেই। বীরত্ব কারো অনুগ্রহ নয়, এটা অর্জন।”