সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর প্রতি সহিংসত বন্ধে কোন অপরাধী যেন ছাড় না পায়– বিশিষ্ট নারী নেত্রীদের আহবান

আপডেট: ডিসেম্বর ২০, ২০২২
0

সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর প্রতি সহিংসত বন্ধে কোন অপরাধী যেন ছাড় না দেয়ার আহবান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নারী নেত্রীরা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইনগত সহায়তা গ্রহণকারীদের অভিজ্ঞতার আলোকে কার্যক্রম আরও সমন্বিতভাবে করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় তারা এ আহবান জানান।

আজ ২০ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে ‘‘ সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যার পাশে দাড়াই, ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করি’’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইনগত সহায়তা গ্রহণকারী এবং প্যানেল আইনজীবীদের অভিজ্ঞতার আলোকে কার্যক্রম আরও সমন্বিতভাবে করার লক্ষ্যে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সহসভাপতি রেখা চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা। আরো বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম। বিভিন্ন মামলা পরিচালনার বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন অ্যাড. হাশেম রাজা স্বপন, অ্যাড. আমিনুল ইসলাম, অ্যাড. সোহানা আক্তার, অ্যাড. মো: নূর উদ্দিন। কর্মশালা সঞ্চালনায় ছিলেন আইনজীবী অ্যাড. ফাতেমা খাতুন।

উক্ত কর্মশালায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম, প্রশিক্ষণ গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক খুরশিদা ইমাম, রোকেয়া সদন সম্পাদক নাসরিন মনসুর, পরিবেশ সম্পাদক পারভীন ইসলাম; কেন্দ্রীয় লিগ্যাল উপ-পরিষদের সদস্য ডা: নাহীদ নবী লেনা, কাজী দ্রাকসিন্দা জেবীন।

লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশ মহিলা পরিষদদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে। নারী নির্যাতন বন্ধের কাজ দুরূহ কাজ। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রায় চার ধশক ধরে আইনগত সহায়তা ও পারিবারিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সালিশে মিমাংসার করা হয়। আমাদের সহায়তা আপনাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষুদ্র পরিসরে সহযোগিতা করা হয়। আপনারা আপনাদের অভিজ্ঞাতা, পরামর্শ, আমাদের সহায়তা কার্যক্রম আরো পরিশিলিত এবং গতিশীল হবে। আপনার নিজেরা সচেতন হবেন, অন্যদের কেউও সচেতন করবেন। মামলায় দীর্ঘসূত্রিতার কারনে একজন নির্যাতনের শিকার তার মনোবল হারিয়ে ফেলে, হারিয়ে ফেলে বিচারের আশা যা নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবি জানান।

সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারী-পুরুষ সমান মর্যাদা নিয়ে যাতে পথ চলতে পারে। সেটা নিয়ে এই সংগঠন ৫২ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে। নারীরা সহিংসতার শিকার হয় পরিবার। সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর প্রতি সহিংসত বন্ধে কোন অপরাধী যেন ছাড় না পায় সেজন্যই এই সংগঠন কাজ করে চলেছে। আমরা যেন নির্যাতনের শিকার নারী ও কন্যাদের আইনগত সহায়তা দিতে পারে সেজন্য আমরা কাজ করছি। যখন আইনগত সহায়তা দেওয়া শুরু হয় তখন থেকে আমাদের যৌথ অভিজ্ঞতা বিষয়ে কর্মশালা শুরু হয়। কিভাবে এই কাজকে আরো গতিশীল করা যায় সে বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করছি। আইনগত সহায়তা গ্রহণকারীদের অভিজ্ঞতা যোগ করতে পারলে আমাদের আন্দোলনটা আরও জোরদার হবে। ন্যায্য অধিকার যদি পূরণ করতে চাই তাহলে অনেক বড় আন্দোলনের প্রয়োজন। এই আন্দোলনের সাথে সবাইকে যুক্ত হবার আহ্বান জানান।

যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বহুমুখী পদ্ধতিতে কাজ করছে। সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা ছাড়াও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নারীদের অধ:স্তন অবস্থা দূর করে পরিবার ও সমাজে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠন সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যাদেরকে এই আইনী সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি। প্রতিবছর আমরা আপনাদের জন্য আইনগত সহায়তা কী করতে পারি এটা নিয়ে এই কর্মশালা করে থাকি। আনশকার মামলা গত বছর ২০২১ সাল থেকে চরছে এই দীর্ঘ সূত্রিতার জন্য বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কাজ করছে এবং বছরের পর বছর লড়াই করছে। আমরা নারী ও কন্যার অধিকার ও তাদের প্রতি সহিংসতার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি।

সহসভাপতি রেখা চৌধুরী বলেন, নারীর প্রতি সংঘটিত কোন সহিংসতার ঘটনাই তুচ্ছ নয়। ঘরে ঘরে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। সহিংসতা প্রতিরোধে নারীদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আইনী সহায়তা প্রদানে সংগঠনের পরিধি আরো বৃদ্ধি করতে সকলকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন আপনারা সাহসী হয়ে উঠুন! যতবেশি নারী পুরুষ সংগঠনের সাথে যুক্ত হবেন ততবেশী আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারবো।

আইনগত সহায়তা গ্রহণকারীরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। আইনগত সহায়তা গ্রহণকারীদের মধ্যে নিজ নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন সালমা আক্তার, নাজমা বেগম (সামিনের মা), শিরিন, সাদিয়া আফরিন, শ্রাবন্তী, ঝর্র্ণা, ঊর্মি, রুনা, ডা. মানসী দত্ত, শম্পা সাহা ও তিথি। তারা তাদের সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরেন এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ হতে তারা যে আইনী সহায়তা পাচ্ছে এবং এই সংগঠন সবসময় তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে তার জন্য তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

কর্মশালায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সংগঠনের প্যানেল আইনজীবী, আইনগত সহায়তা গ্রহণকারীবৃন্দ, কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের সদস্য ও কর্মকর্তাসহ মোট ৬০ জন উপস্থিত ছিলেন।