সরকারের নির্দেশেই বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা — রিজভী

আপডেট: জুলাই ১৪, ২০২২
0

আওয়ামী মরণঘাতি ভাইরাস গোটা রাষ্ট্র ও সমাজকে কুরে কুরে খাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যায়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘যশোর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি বদিউজ্জামান ধনিকে ঈদের ২য় দিনে দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে তার বাড়ির সামনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার সময় বদিউজ্জামান ধনী নিজের বাড়ির সামনে একটি দোকানে বসে চা পান করছিলেন। এসময় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে চলে যায়। এলাকাবাসী তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়াও গতকাল কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলাধীন কালীগঞ্জ ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলামকে মধ্যযুগীয় কায়দায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে।’

বাংলাদেশে প্রকৃত আইনের হাতের চেয়েও অবৈধ ক্ষমতার হাত অনেক লম্বা। ছাত্রলীগ, যুবলীগ এক সর্বনাশা- সময় সৃষ্টি করেছে। বর্তমান এই ঘোর দুর্দিনে জনগণের জান-মাল এখন ভয়ানক বিপন্ন। তাদের অব্যাহত গুম, খুন, নারী শিশু নির্যাতনে সারাদেশে এক বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। সরকারের নির্দেশেই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হত্যা ও নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।

দেশব্যাপী সরকার হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। দেশে বেকারত্ব, দারিদ্র, অনাহার, জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য থেকে দৃষ্টি সরাতেই এই সকল হত্যাকান্ড। এর উপর দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে, তথাকথিত উন্নয়নের মাধ্যমে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে, দেশ থেকে লাখ-লাখ কোটি টাকা পাচার করে অর্থনীতিকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ তলানীতে ঠেকেছে- যা দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ম, সমাজ থেকে ন্যায় বিচার উচ্ছেদ করা হয়েছে, দলীয়করণের মাধ্যমে প্রশাসনকে তছনছ করে দেয়া হয়েছে, বিচার বিভাগ এখন সরকারের অবৈধ সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।

নানা কালাকানুনের মাধ্যমে কেড়ে নেয়া হয়েছে মানুষের বাকস্বাধীনতা, মানুষের ভোটের অধিকার নেই, মুক্তভাবে কথা বলার অধিকার নেই, দেশের সকল সেক্টরে এখন নৈরাজ্য চলছে। দেশের চার বারের সাবেক প্রধামন্ত্রী গণতন্ত্র উদ্ধার ও প্রতিষ্ঠা এক অবিসংবাদীত নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে প্রতিহিংসামূলক আওয়ামী বিচারের বন্দিশালায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় একের পর এক সাজা দেয়া হচ্ছে দেশ নায়ক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানকে। এতেই দেশের যে বিপজ্জনক পরিস্থিতির উপলব্ধি করা যায়। আওয়ামী মরণঘাতি ভাইরাস গোটা রাষ্ট্র ও সমাজকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

এখন যেদিকে তাকানো যায় নৈরাশ্য, নৈরাজ্য আর প্রহসনের ছবি। শ্রীলঙ্কার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্তমানে বাংলাদেশেও বিদ্যমান। এই যখন দেশের অবস্থা তখন বাংলাদেশের জনগণ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে কিনা সেই আতঙ্ক থেকে বিরোধী দল নিধনে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবেই যুবদল নেতা বদিউজ্জামান ধনীকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে কুড়িগ্রামের শফিকুল ইসলামকে। এই সমস্ত হত্যাকান্ড পরিকল্পিত, এক বৃহত্তর মাস্টার প্ল্যানেরই অংশ। মানুষ যাতে সরকারের বিরুদ্ধাচ্চারণ করার সাহস না পায় এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে জনগণকে সেই মরণবার্তা দেয়া হলো।

মূলত: পায়ের নিচ থেকে শেখ হাসিনা সরকারের মাটি সরে যাওয়া টের পেয়ে আওয়ামী সরকার দেশে এখন মৃত্যুদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন দূর্নীতি ও স্বজন পোষণ এবং বিলাসী জীবনযাপন এবং বিপুল সম্পত্তি অর্জন সংকটাপন্ন হবে ভেবেই ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে তারা এখন মরণ কামড় দিচ্ছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তারা উন্মাদ হয়ে গেছে। তাই সহিংস রক্তপাতের মধ্য দিয়ে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই প্রতিটি হত্যাকান্ডেরই বিচার হবে বাংলাদেশের মাটিতে। সময় আর বেশি নাই। এই সরকারের পতন আসন্ন।