সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হলো : ফখরুল

আপডেট: নভেম্বর ২০, ২০২১
0
file photo

খালেদা জিয়াকে দ্রুত বিদেশে পাঠানো না হলে ‘সরকার হটানো’র আন্দোলন শুরু করার হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার বিকালে গণঅনশনের কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব সরকারের প্রতি এই হু্শিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারকে খুব পরিস্কার ভাষায় আমরা এই গণঅনশন থেকে বলে দিতে চাই যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তাকে বিদেশে চিকিতসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।”
‘‘ তা না হলে এবার যে আন্দোলন শুরু হলো গণঅনশনের মধ্য দিয়ে সেই আন্দোলন আপনাকে গদিচ্যুত করবে।”
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আগামী সোমবার ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণাও করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘‘ আগামী ২২ তারিখে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে সুচিকিতসা করার দাবিতে এবং একই সঙ্গে তার মুক্তি দেয়ার দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ এবং সারাদেশে মহানগর-জেলা-উপজেলাগুলো সমাবেশ হবে। এই সমাবেশে আমরা আবারো এই দাবি নিয়ে সামনে আসবো।”
‘‘ তারপরে যদি না হয়, আমরা আবারো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
‘বিদেশী ডাক্তাররা বলেছেন, দেশে খালেদার চিকিতসা অসম্ভব’

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র চেয়ারপার্সন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবিতে আজ শনিবার (২০ নভেম্বর ২০২১) বিএনপি’র উদ্যোগে নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত গণ-অনশন কর্মসূচির একাংশ।

খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ তিনি আজকে এতো অসুস্থ, তিনি আজকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে অবস্থান করছেন। আমরা ডাক্তারদের সাথে কথা বলেছি বার বার, বিদেশে ডাক্তারদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাংলাদেশে চিকিতসা দেয়া অসম্ভব।”
‘‘ তার যেসব জটিলতা আছে সেই জটিলতাগুলো বিদেশে আরো এডভান্স সেন্টারে টিট্রমেন্ট দেয়া না হলে তাকে সুস্থ করা যাবে না। তার(খালেদা জিয়া) পরিবার থেকে আবেদন জানানো হয়েছিলো তাকে বিদেশে ট্রিটমেন্ট করার সুযোগ দেয়ার জন্য। তারা সেই সুযোগ দেয়নি। উপরন্তু পার্লামেন্টে সংসদ নেত্রী এমনভাষায় কথা বলেছেন যে ভাষা কোনো মতে গ্রহনযোগ্য নয়।”
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘ মিথ্যাচার করেছেন আইনমন্ত্রী। ৪০১ ধারায় এই সরকারের সম্পূর্ণ অধিকার আছে এবং এটা তাদের দায়িত্ব।যেকোনো নির্দেশে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিতসার ব্যবস্থা করতে পারে।”
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন,‘‘ এটা আমাদের জীবন-মরণের সমস্যা, আমাদের অধিকারের সমস্যা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এদেশের মাটির সাথে একেবারে অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছেন। মা ও মাটি বলতে আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বুঝি। নেত্রীকে অবশ্যই আমাদের মুক্ত করতে হবে। সেজন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা প্রস্তুত আছি।”
‘‘ আসুন আমরা সবাই মিলে শপথ গ্রহন করি দেশনেত্রীর মুক্তি এবং তার চিকিতসার জন্য বিদেশে প্রেরণ করা হওয়ার পর্যন্ত আমরা কোনোদিন ঘরে ফিরে যাবো না।”
এভারকেয়ার হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিতসাধীন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিতসার জন্য দ্রুত বিদেশে পাঠানোর দা্বিতে বিএনপির উদ্যোগে সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই গণঅনশনের কর্মসূচিহয়। কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁও থেকে ফকিরেরপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের এক দিকের ফুটপাতে মাদুর বিছিয়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষজন এই গণঅনশনে অংশ নেয়।
নেতা-কর্মীরা খা্লেদা জিয়ার প্রতিকৃতি হাতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে গণঅনশনে আসে এবং ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘জ্বালাও জ্বালাও আগুন জ্বালাও, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে’ ইত্যাদি শ্লোগান দিয়ে পুরো এলাকা তারা সরব করে রাখে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তে্লোয়াতের পর খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
কেন্দ্রীয় এই কর্মসূচির পাশাপাশি সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরেও একযোগে এই অনশন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
‘আমি সাক্ষী রাজবন্দিকে বিদেশে পাঠানো যায়’
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, ‘‘ শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বৃহত রাজনৈতিক দলের প্রধান খালেদা জিয়া বিদেশে পাঠানো হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিদেশে চিকিতসার জন্য পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা নাই। আমি সাক্ষী, আমি সাক্ষী জিয়াউর রহমানের আমলে ৭৯ সালে আমাকে জার্মানীতে পাঠানো হয়েছিলো। আমি একবছর জার্মানীতে ছিলাম।”
‘‘ আমার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিলো। আমি কী এই সরকারের কাছে জানতে পারি সংবিধানের কোন আর্টিক্যালে, কোনো চ্যাপ্টারে, কত পৃষ্ঠায় কোনো রাজনৈতিক বন্দিকে বিদেশে চিকিতসার জন্য পাঠানো করা যাবে না- এই কথা আমি জানতে চাচ্ছি।”
তিনি বলেন, ‘‘ পৃথিবীতে এমন কোনো জিনিস নাই যার কোনো শেষ না। আমি সরকারকে বলতে চাই, এখন এই দিনও দিন নয়,এরপরও দিন আছে। সেদিন ক্ষমতা থেকে যাবেন সেদিনের কথা একটু চিন্তা করুন। বাংলাদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছেন, অনেক নির্যাতন করেছেন।মনে রাখবেন এটারও শেষ আছে।”
‘‘ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, তার চিকিতসার ব্যবস্থা করতে হবে।যদি তার কোনো ক্ষতি হয় তখন কিন্তু এই সরকারের কী হবে আমি জানি না, আমি ভাবতেও পারি না। আমার লোম শিহড়ে উঠে। যদি খালেদা জিয়ার কিছু হয় ঘরে ঘরে আগুন জ্বলবে আমি পরিস্কার করে বলে দিচ্ছি।”
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘ আমি কামনা করি, যত অসুস্থতা থাক বেগম খালেদা জিয়া যেন সুস্থ থাকেন। যত ধরনের বিপর্যয় আসুক আপনারা আজ থেকে যে আন্দোলন করছেন এই আন্দোলন অব্যাহত রাখুন।”
‘‘ এই ধারণা সম্ভবত ভালো ব্যাপক মানুষকে এক সাথে করে ধীরে ধীরে এই আন্দোলনকে এমন জায়গা নিয়ে যেতে হবে যাতে এই স্বৈরাচারের পতন হয়।”
৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত ১৩ নভেম্বর থেকে তিনি গুরুতর অসুস্থাবস্থায় বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে চিকিতসাধীন আছেন।

‘আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন’
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘আমরা হাঙ্গার স্টাইকের মাধ্যমে বলছি, দেশনেত্রীকে চিকিতসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি যদি অনতিবিলম্বে পুরণ না হয়, তাহলে দেশের জনগনের যে দাবি এই দাবি পুরণের জন্য সরকারের পতনের আন্দোলনে আমাদেরকে আগামী দিনে অগ্রসর হতে হবে।”

‘‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তার উন্নত চিকিতসা, এদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধার এটা শুধু বিএনপির দাবি নয়, এদেশের জনগনের দাবি। তাই এই দাবি বাস্তবায়ন করতে হলে আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। সেই আন্দোলনে আমরা যেতে বাধ্য হবো প্রয়োজনীয় কর্মসূচির মাধ্যমে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য সকল প্রস্তুতি নিন।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘ আমরা যেন না ভাবি এখানেই আমাদের দায়িত্ব শেষ। যতক্ষন পর্যন্ত আমরা সফল না হবো ততক্ষন আমাদের চলার গতি থামবে না। মাঠ বলে দেবে কথন কী করতে হবে।”
‘‘ নেতারা নির্দেশ দেয়ার সময় নাও পেতে পারেন। সবসময় কোন জায়গায় কোন পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন সেটা নিজের বুদ্ধি দিয়ে ঠিক করতে হবে। আর যারা সেখানকার দায়িত্বে আছেন দয়া করে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করার জন্য সবসময় এলাকায় অবস্থান করবেন। আমাদের সংগ্রাম শুরু। কারণ শেখ হাসিনাকে সবক দিয়ে লাভ নাই।”
বিকাল ৪টায় বিএনপির মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দ পানি থেয়ে অনশন ভাঙেন।
বিএনপির শহীদ উদ্দিন চৌধুরী ও আমিরুল ইসলাম আলীমের পরিচালরনায় গণঅনশনে বিএনপির আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আবদুল্লাহ আল নোমান, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, মাহবুব উদ্দিন খোকন, আসাদুজ্জামান রিপন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শ্যামা ওবায়েদ, এবিএম মোশাররফ হোসেন, শিরিন সুলতানা, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিমউদ্দিন আলম, হায়দার আলী লেলিন, আকরামুল হাসান, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, অঙ্গসংগঠনের আফরোজা আব্বাস, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, তাবিথ আউয়াল, মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, সুলতানা আহমেদ, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, হেলাল খান, সাদেক আহমেদ খান, আবুল কালাম আজাদ, ফজলুল রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমূখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
গণঅনশনের কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, আবদুল করীম আব্বাসী, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক, জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এমএ রকিব, অধ্যাপক আব্দুল করীম এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খন্দকার লুতফুর রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, এনডিপির আবু তাহের, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সংগঠনের অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের শওকত মাহমুদ, শত নাগরিকের আবদুল হাই শিকদার, বিশ্ববিদ্যালয়র সাদা দলের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, এ্যাবের প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ড্যাবের অধ্যাপক আব্দুস সালাম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, নুরুল আমিন রোকন, ঢাাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের ইলিয়াস খান প্রমূখ নেতারা একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।
গণঅনশনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, চেয়াপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাক সাহিদা রফিক, তাহমিনা রুশদীর লুনা, শাহজাদা মিয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গণঅনশন উপলক্ষে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশসহ সাদা পোষাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। কাছাকাছি স্থানে ছিলো পুলিশের সাজোয়াঁ যান, জলকামানের গাড়ি, প্রিজন ভ্যান।