সরকার পরিবর্তন’ এখন জনগনের দাবি–মির্জা ফখরুল

আপডেট: অক্টোবর ২৬, ২০২১
0

সরকার পরিবর্তন’ এখন জনগনের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার সকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সম্প্রীতি সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, এই দেশে সরকার পরিবর্তন এখন জনগনের দাবি। আওয়ামী লীগের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নাই।তারা কোনো সমস্যারই সমাধান করতে পারেনি। তারা আজকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরি করে, তারা আজকে মানুষের অধিকার ব্যাহত করে, তারা আজকে জনমানুষের জীবনকে দূর্বিষহ করে তুলেছে।”

‘‘ তাই বলব, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটা নতুন নির্বাচন, গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দিন যাতে সকলে ভোট দিতে পারে, ভোটের মাধ্যমে তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।”

‘মিছিলে বদলে সম্প্রীতি সমাবেশ’

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব অভিমুখে সম্প্রীতি শোভাযাত্রা হওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করার কারণে ছোট ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব।

ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইলের মোড় পর্যন্ত হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশে পরিণত হয়। নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফ্যাষ্টুন নিয়ে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে আমরা একটা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে একটা র‌্যালীর মাধ্যমে সরকার যে পরিকল্পিতভাবে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে তার প্রতিবাদ জানাতে শান্তিপূর্ণ র‌্যালী করে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত যাবো। আমরা চিঠিও দিয়েছিলাম আগে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকে সকাল থেকে আমাদের নেতা-কর্মীদের এখানে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা এখন সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করছি।”

আজকে ৫০জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দাবি করে অবিলম্বে তাদের মুক্তি চান বিএনপি মহাসচিব।

সমাবেশ শুরু হয় সকাল ১১টায়, শেষ হয় ১১টা ২৮ মিনিটে।

সমাবেশের শেষ পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মহাসচিব বলেন, ‘‘ আমি ভাইদের বলতে চাই আপনারা অনেক কষ্ট করে, এভাবে অনেক প্রতিকুলতা এড়িয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ। আমি অনুরোধ করবো, এখান থেকে শান্তিপূর্ণভাবে যে যেখান থেকে এসছেন চলে যাবেন। আমরা কোনো মিছিল বা র‌্যালী করছি না সম্প্রীতির স্বার্থে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দেশে একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করার জন্য সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হিন্দু, মুসলমানের মধ্যে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এক সাথে বাস করছি। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের, মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপরে তারা আঘাত হেনেছে। তাদের লক্ষ্য একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আজকে ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় এসে অত্যন্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধবংস করেছে, তারা প্রশাসনকে ধবংস করেছে,তারা নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করেছে এবং মিডিয়াকে তারা অত্যাচার-নির্যাতনের মাধ্যমে দমন করে রাখতে চায়।”

‘‘ আমাদেরকে কোনো গণতান্ত্রিক স্পেস দেয় না আমরা যারা বিরোধী দল করি, আমাদেরকে একটা সভা করার জায়গা দেয় না, একটা মিছিল করার জায়গায় দেয় না। মানুষের যে অধিকারগুলোকে সেগুলোকে দমন করার জন্য তারা সবরকম নির্যাতনমূলক-দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করেছে।”

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘ আপনারা একটু দয়া শান্ত থাকবেন। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভাইদের ওপর কোনো আঘাত আসলে সেটা আমরা সামনে গিয়ে অবশ্যই আমরা প্রতিহত করবো, প্রতিরোধ করবো। আজকে সরকার যে ব্যর্থ হয়েছে এই সরকারের মানুষদের নিরাপত্তা দিতে সেজন্য এর বিরুদ্ধে আমরা সমাবেশ করছি।”

‘‘ আমরা পরিস্কার বলে দিতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে একটি মুক্ত সমাজ, একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবার জন্য যেখানে সম্প্রদায় সম্প্রদায় কোনো বিভেদ-বৈষম্য থাকবে না। সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে আজকে ধবংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হতে দেয়া হবে না এবং নির্বাচনে যাবো না। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে হটিয়ে একটি নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে আগামী দিনে নির্বাচন করব।”

‘‘ সকলে আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য আপনারা প্রস্তুতি গ্রহন করুন।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আপনাদের আমাদের যে সংগঠিত করছেন, আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। যেকোনো মুহুর্তে আন্দোলনের ডাক পড়বে। সময় পাবেন অথবা সময় পাবেন না। আজকে যেমনি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তার থেকে শতগুন শক্তি নিয়ে রাজপথে থাকতে হবে। রাজপথে যে বাঁধা আসবে সেই বাঁধা অতিক্রম করতে হবে। আঘাত করলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”

‘‘ আঘাত করলে আমরা নির্ভয়ে মাথা পেতে নেবো না- এই কথাটা পরিস্কারভাবে প্রশাসনকে বলতে চাই, এই কথাটা পরিস্কারভাবে সরকারকে বলতে চাই। সময় থাকতে পদত্যাগ করুন, দেশে শান্তি অবস্থা ফিরিয়ে আনুন। আর মন্দির হামলার সাথে জড়িত সেই প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করুন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে যে মামলা দিয়েছেন তা প্রত্যাহার করুন, যাদের গ্রেফতার করেছেন তাদের মুক্তি দিন।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘ গণতন্ত্রের মা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ আন্দোলনের মাধ্যমেই, অন্য কোনো পথ নেই। সেজন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে।”

‘‘ এরশাদের সময়েও মন্দিরে হামলা হয়েছে। কিন্তু এরশাদের পতন কেউ ঠেকাতে পা্রে নাই। আজকে মন্দিরে হামলা করে ক্ষমতা টিকানো যাবে না।এই জুলুমবাজ, স্বৈরাচারী, দুর্নীতিবাজ, তাবেদারী সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।”

প্র্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের মহানগর উত্তরের আহবায়ক স্থায়ী কমিটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিনের আহবায়ক আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে বিএনপির নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, হায়দার আলী খান লেলিন, আমিরুজ্জামান শিমুল, নিপুণ রায় চৌধুরী, অঙ্গসংগঠনের আফরোজা আব্বাস, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, হেলেন জেরিন খান, মামুন হাসান, এসএম জাহাঙ্গীর, নুরুল ইসলাম নয়ন, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আবুল কালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।