সরকার পুলিশী নির্যাতন চালিয়ে আন্দোলন দমনোর পায়তারা করছে—মির্জা ফখরুল

আপডেট: আগস্ট ১, ২০২২
0

সরকার পুলিশ দিয়ে আন্দোলন দমনোর পায়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভোলায় পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহত আবদুর রহিমের স্মরণে গায়েবানা জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার পুলিশ দিয়ে গুলিবর্ষন করে জানান দিয়ে দিয়েছে যে, তারা পুলিশ দিয়ে নির্যাতন করে এই আন্দোলনকে দমন করতে চায়। কিন্তু ভোলার মানু্ষের রক্তের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এদেশের মানুষ কখনো ফ্যাসিবাদী সরকার, আওয়ামী লীগ সরকারের দমননীতিকে মেনে নেবে না।”

‘‘ তারা দেশকে মুক্তি করবার জন্য, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবার জন্য তারা জীবন দিয়ে হলেও, রক্ত দিয়ে হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। আমরা আবদুর রহিমের রক্তকে বৃথা যেতে দিতে পারি না। তাই এই শোককে শক্তিতে রুপান্তরীত করতে হবে। তার এই রক্ত যাওয়া, তার এই আত্মাত্যাগকে আমাদের ধারণ করে আমাদেরকে সামনে দিকে এগিয়ে আরো গতিশীল হয়ে, আরো দূর্বার হয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করতে হবে।”

মির্জা ফখরুল বলে, ‘‘ পুলিশের গুলিতে আমার গণতান্ত্রিক ভাইদের রক্ত ঝরেছে, রক্ত ঝরেছে ভোলায়। ভোলায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ গুলিবর্ষন করেছে। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের ভাই আবদুর রহিমকে হত্যা করেছে। এতে আহত হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেনসহ এক‘শ জনের উপরে নেতা-কর্মীকে গুলিবর্ষন করে আহত করা হয়েছে।”

‘‘ এটা ছিলো একটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। বিদ্যুতের দাবিতে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ছিলো। সেই সমাবেশে আজকে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পুলিশ দিয়ে গুলিবর্ষন করা হয়েছে।”

বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে রোববার জেলায় জেলায় সমাবেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভোলার নির্ধারিত কর্মসূচিতে পুলিশ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায় ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুর রহিমসহ ৫০ এর অধিক নেতা-কর্মী আহত হয়। বিএনপি এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ সারাদেশে গায়েবানা জানাজা এবং আগামীকাল বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে।

দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ১১টায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীঢ কার্যালয়ের সামনে ভোলায় নিগত আবদুর রহিমের স্মরণে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি মহানগর, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুব দল, কৃষক দলসহ অঙ্গসংগঠনের সহাস্রাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন। গায়েবানা জানাজারপ আবদুর রহিমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বি্শেষ মোনাজাত করা হয়।

এই গায়েবানা নামাজে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, হারুনুর রশীদ, আমিরুজ্জামান শিমুল, আকরামুল হাসান মিন্টু, শায়রুল কবির খান, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, মহানগর বিএনপির আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, হাবিবুর রশীদ হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, যুব দলের মামুন আহমেদ, মোনায়েম মুন্না, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির বাইরে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, এনড়িপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই গায়েবানা জানাজায় অংশ নেন এবং মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।

গায়েবানা জানাজার আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘জনগন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে আজকে গুম-খুন-হত্যার রাজনীতির মাধ্যমে এরা(আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় থাকতে চায়, যেতে চায় এবং অব্যাহতভাবে থাকার আর কোনো সুযোগ নাই।”

‘‘দেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ঘুরে দাঁড়াবে। এদেশের মানুষ অতীতে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, এবারো স্বৈরাচার মুক্ত করবে।”

দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ ভোলা একটি শান্তিপূর্ণ জেলা। কিন্তু গতকাল বিনা উস্কানিতে পুলিশ নিরহ শান্তিপূর্ণ কর্মীদের ওপরে আক্রমন চালিয়েছে। পার্টি অফিস থেকে বেরুনো মাত্রই যে মিছিল শুরু করেনি তখন তারা অতর্কিতে গুলিবর্ষন করা হয়েছে। এভাবে গুলিবর্ষন অনাকাঙ্খিত এবং এটিই কেবলমাত্র নির্লজ্জ পেশীশক্তি প্রদর্শনের জন্যে, জনতার কন্ঠ স্বরকে দাবিয়ে রাখার জন্য ন্যাক্কারজনকভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।”

‘‘ গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুর রহিম নিহত হয়েছেন। বিএনপির সভাপতি থেকে শুরু করে প্রত্যক নেতা মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছেন। সিনিয়র নেতাদের ওপরে এভাবে হামলা অতীতে কখনো হয়নি। এভাবে দমন-পীড়ন করে বুটের নিচে পিষ্ট করে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা যাবে না- ভোলাতে এটা প্রমাণ হয়েছে।