সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন বন্ধ, ডিএসএ বাতিল ও নতুন কালাকানুন পাশ থেকে বিরত থাকার আহ্বান বিএফইউজের

আপডেট: আগস্ট ১৩, ২০২২
0

সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতর ক্রমাগতভাবে ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) নির্বাহী পরিষদ। একই সঙ্গে প্রতিটি নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলা হয়, প্রশাসনের নির্লিপ্ততার কারণেই সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলেছে। চলতি আগস্ট মাসে বিভিন্ন স্থানে ১৭টি সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণ করে ভয় ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে মুক্ত গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতাকে রুদ্ধ করতে চায়

আজ শনিবার (১৩ আগস্ট, ২০২২) জাতীয় প্রেসক্লাবে নিজস্ব কার্যালয়ে বিএফইউজে’র নির্বাহী পরিষদের সভায় গৃহীত প্রস্তাবে এ কথা বলা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ। সঞ্চালনা করেন মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন।

সভায় জ্বালানি তেলের মূল্য একসঙ্গে রেকর্ড ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, সব ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার ব্যয়ে নজিরবিহীন উল্লম্ফন সাধারণ মানুষের মত দেশের সাংবাদিক সমাজও দিশেহারা। গোটা সংবাদমাধ্যম জুড়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরাজমান মন্দা, অস্থিরতা ও এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। সাংবাদিকেরা প্রতিনিয়ত কর্মচ্যুত হচ্ছেন, বেতন ভাতা অনিয়মিত ও কমিয়ে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোও লাগামহীন ব্যয় বৃদ্ধিতে টিকে থাকার সংগ্রাম করছে। এ দুঃসহ পরিস্থিতিতে বিএফইউজে মালিকদের প্রতি সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের জন্য নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ ছাড়াও অবিলম্বে ৬৮ ভাগ আপৎকালীন ভাতা দেয়ার দাবি জানিয়েছে।

সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) প্রণয়নের শুরু থেকে সাংবাদিক সমাজ আশঙ্কার কথা প্রকাশ করে এ কালো আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু সরকার আইনটি পাশের সময় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও তা রক্ষা করা হয়নি। বরং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যথেচ্ছভাবে এ নিপীড়নমূলক আইন ব্যবহার হচ্ছে। এখন সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ ও গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন নতুন আইনের ফন্দিফিকির চলছে। যার ধারাবাহিকতায় গণমাধ্যম কর্মী আইন সংসদে পাসের প্রক্রিয়া চলছে। তোড়ঝোড় চলছে ডাটা প্রটেকশন আইন নামে আরো একটি কালাকানুন প্রণয়নের। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের জরিমানার বিধান রেখে প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিএফইউজে নির্বাহী পরিষদ যে কোন ধরনের কালো আইন প্রণয়ন থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে কোন আইন প্রণয়নের প্রয়োজন হলে অংশীদার হিসেবে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করতে হবে।

সভার অপর এক সিদ্ধান্তে বলা হয়, দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে। রাতের আঁধারে ভোট কিংবা প্রশাসনকে ব্যবহার করে ব্যালট বাক্স ভরে দেবার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার প্রবণতায় দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলেই সভায় অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বিএফইউজের সহ-সভাপতি মোদাব্বের হোসেন, রাশিদুল ইসলাম, ও ওবায়দুর রহমান শাহীন, বিএফইউজের সহকারি মহাসচিব নাসির আল মামুন, শফিউল আলম দোলন ও মোঃ সহিদ উল্লাহ মিয়াজী, কোষাধ্যক্ষ মুহাম্মদ খায়রুল বাশার, দফতর সম্পাদক তোফায়েল হোসেন, প্রচার সম্পাদক মাহমুদ হাসান, নির্বাহী সদস্য এইচ এম আলাউদ্দিন, আবদুস সেলিম, জিয়াউর রহমান মধু, শামসুদ্দিন হারুন, এ কে এম মহসীন ও মো. জাকির হোসেন, ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সভাপতি মো. আনিসুজ্জামান, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি মীর্জা সেলিম রেজা, সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি মোহাঃ আবদুর রাজ্জাক বাচ্চু, সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুরের সাধারণ সম্পাদক মাহফিজুল ইসলাম রিপন, সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ প্রমুখ।