সাতক্ষীরায় নতুন করোনা আক্রান্ত ১০৩ ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু ৫

আপডেট: জুন ৮, ২০২১
0

খুলনা ব্যুরোঃ
করোনা সংক্রমণ রোধে সাতক্ষীরায় চলছে সাতদিনের লকডাউন। গত ২৪ ঘন্টায় ১৮৮ টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০৩ জনের করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। এ সংখ্যা সাতক্ষীরার এক দিনের সনাক্ত হিসেবে সর্বোচ্চ। শতকরা হিসেবে ৫৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে পাঁচজন। মৃতরা হলেন, কালীগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের মনিরা খাতুন, দেবহাটা উপজেলার বদরতলা গ্রামের শশাংক কুমার সরকার, শ্যামনগর উপজেলার পাতাখালী দু’সহোদর তোহা কামাল ও সায়েব খান এবং সদর উপজেলার হাওয়াখালী গ্রামের আবুল হোসেন। এনিয়ে জেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন কমপক্ষে ২৩২ জন ব্যাক্তি। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৮ জন। মেডিকেল কলেজ, সদর হাসপাতালে ও হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৪৬৫ জন।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের ঘোষিত সাত দিনের এ লকডাউনর ৪র্থ দিনে তিন স্তরে কাজ করছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। সড়কে পুলিশ, সীমান্তে বিজিবি ও মার্কেটে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের মধ্যদিয়ে চলছে লকডাউন। তবে কঠোর বিধি নিষেধ থাকলেও মানছে না মানুষ। গত ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত প্রথম ধাপের সাতদিন লকডাউন ঘোষণা করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। লকডাউনের চতুর্থ দিনে বেশ কিছু কঠোর বিধি নিষেধ লক্ষ্য করা গেলেও সাধারণ মানুষ মানছেন না বিধি নিষেধ। লকডাউন চলাকালে সাতক্ষীরার সাথে খুলনা ও যশোরের সংযোগস্থলে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে একইভাবে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচল নিয়ন্রণ করা হচ্ছে। ভোমরা স্থল বন্দরে আসা ভারতীয় ট্রাক চালক ও হেলপারদের বন্দরে খোলামেলা চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরা সীমান্ত পথে বৈধ-অবৈধ যাতায়াত পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সীমান্ত জুড়ে টহল রয়েছে বিজিবি সদস্যরা। সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারী, টহল তৎপরতা এবং বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে বিজিবি।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গণমানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। এখনো প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে অনেকেই বের হচ্ছেন। কঠোর অবস্থানে জেলা পুলিশ। গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত তিনদিনে ৪১টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, মামলা দায়ের করা হয়েছে ২১৭ টি এবং এই সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও লকডাউনের বিধিনিষেধ প্রতিপালন না করায় এক লাখ ২৩হাজার ৫৪৩ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। বেআইনিভাবে চলাফেরার জন্য মামলা, জরিমানা এবং গাড়ি জব্দ করা হচ্ছে। লকডাউন কার্যক্রম পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নর অধিনায়ক লে: কর্নেল আল মাহমুদ বলেন, সাতক্ষীরায় তার ব্যাটালিয়নর দায়িত্বপূর্ণ ৩৬ কিঃ মিঃ স্থল সীমানা এবং ১৮ কিলোমিটার নদী সীমানা সর্বমোট ৫৪ কিঃ মিঃ এলাকায় নিশ্চিন্দ্র নিরাপত্তা প্রদান করে আসছে বিজিবি জোওয়ানরা। গত ২৮ এপ্রিল হতে ৫ জুন পর্যন্ত সর্বমোট ৬৮৪টি অভিযান পরিচালনা করে অবৈধভাবে ভারত হতে বাংলাদেশে প্রবেশের প্রাক্কালে ৩৯জন (বাংলাদেশী-৩৮ জন ও ভারতীয় ১জন) এবং ২জন মানবপাচারকারী আটক করা হয়েছে। আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে খাদিজা বিবি নামের এক ভারতীয় নাগরিককে বিএসএফ’র নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, জেলার ২৪ লাখ মানুষের জীবনের কথা চিন্তা করে প্রথম পর্যায়ে সাতদিনের লকডাউন দেয়া হয়েছে। চলমান লকডাউন বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, সীমান্তে রয়েছে অত্বেন্দ্র প্রহরী বিজিবি, জেলা ও উপজেলা শহর হয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে রয়েছে পুলিশ, র‌্যাবসহ সরকারের অন্যান্য বাহিনী। মানুষের সাথ ভাল আচরণের মধ্যদিয়ে ঘরে রাখতে আইন-শৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

এদিকে করোনা পজিটিভ নিয়ে সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতাল এবং পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনন্টাইন ৩৭১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়ত।