সাহায‍্যের আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না দৃষ্টিহীন বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনি

আপডেট: অক্টোবর ৩, ২০২১
0

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পারায় ক্রমেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চরভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের একাত্তরের রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা উসমান গনি (৭২)। যিনি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে জীবন বাজি রেখে অসীম সাহসিকতার সাথে দেশমাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি অর্থের অভাবে নিজের দুচোখের আলো ফেরাতে আর শরীরের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। উসমান গনি প্রায় ছয় বছর ধরে দুচোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন। এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত।তাঁর ভিটেবাড়ি ছাড়া নেই কোন জমি জমা। সংসার চালানোর একমাত্র আয়ের উৎস মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকা। তাঁর বাড়িতে বসবাস করার ঘরটিও জরাজীর্ণ। এই জরাজীর্ণ ঘরে জীবনে শেষ প্রান্তে এসে প্রায় চিকিৎসাহীন অবস্হায় এখন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন।
বয়সের ভারে তিনি চলাফেরা করছেন হুইল চেয়ারে। শুধু তাই নয় তাঁর স্ত্রী হামিদা বেগমের (৬০) এক চোখ অন্ধ অন্য চোখটিও দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলার উপক্রম হয়েছে। তাঁর পরিবারটি এখন অসহায়। সম্মানী ভাতার টাকা দিয়ে ঔষধ কিনে খাওয়া আর সংসার চালানো তার পক্ষে কঠিন হয়ে পরেছে।
তাই সাহায্যের আশায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে ছোট ছেলে হান্নান মিয়া আর্থিক সহায়তা চেয়ে গত ১৮/১১/১৯ খ্রী: তারিখে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোতে আবেদন করেছেন। কিন্তুু আবেদন করার প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হলেও কোন দপ্তর থেকে সাহায‍্যের আশ্বাস পায়নি তাঁর পরিবার।
জানা গেছে মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনির বাড়ী উপজেলার চর-ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের নতুন হাট বাজার সংলগ্ন গ্রামে। তাাঁর সন্মানী ভাতার বই নং-১৮ ক্রমিক নং- ৪০৫৬১ এফ এফ নং- ১০১/৩৩ লাল মুক্তিবার্তা নং-৩১৬০৪০৫০৭ ,জাতীয় তালিকা নং-৪৬৩। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ৬নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেছেন।
জন্ম থেকেই তিনি অভাব অনটনের সাথে যুদ্ধ করে দিনযাপন করেছেন। দীর্ঘদিন চর- ভূরুঙ্গামারীর নতুন হাট বাজার জামে মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও মানুষের বাড়ী গিয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়িয়ে যে সামান্য সম্মানী পেতেন তা দিয়ে সংসার চালাতেন । পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সম্মানী ভাতা চালু করলে তার নাম অন্তভূক্ত হয় । সম্মানী ভাতা দিয়ে কোন রকমে সংসার চললেও তার ও স্ত্রীর চিকিৎসা ব্যয় মিটানো সম্ভব হচ্ছেনা । স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা করেও তাদের শারিরীক অবস্থার কোন উন্নতি না হয়ে দিন দিন অবনতি হচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনির দুই ছেলে,দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার পরিবার। বড় ছেলে আঃ হালিম (৩৫) মাংশ বিক্রি করে সংসার চালালেও মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় একটি হাত ও একটি পা ভেঙ্গে যায়। অনেক চিকিৎসার পর ভেঙ্গে যাওয়া হাত ও পা কোন রকম চলার মত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। কিন্তুু ওই হাত ও পা দিয়ে ভারী কাজ করে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না তার।
ছোট ছেলে আঃ হান্নান (৩০) ঢাকা শহরে রিকসা চালান।কিন্তুু তাদের অসুস্থতার কারনে ঢাকায় যেতে পারছেন না।ফলে তার পরিবারের চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে কষ্ট হচ্ছে। অন্য দিকে তাঁর এক কন্যা স্বামী পরিত্যাক্তা হয়ে এক সন্তান নিয়ে তার বাড়ীতেই আশ্রয় নিয়েছেন। এমন অবস্থায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনির পরিবারটি চরম দুঃখের সাথে জীবন যাপন করছেন।
উসমান গনির ছোট ছেলে আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে দুচোখের আলো হারিয়ে বিভিন্ন জটিল রোগে ভোগছেন। বর্তমানে শুধু ঔষধপত্রের জন্য প্রতিদিন হাজার টাকার উপরে খরচ হয়। যা যোগান দিতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই বাবার চিকিৎসার অর্থ ও আমাদের পারিবারিক সচ্ছলতা ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব‍্যাবস্হা গ্রহনের জন্য বঙ্গবন্ধু কন‍্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাই।
অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা উসমান গনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন বিছানায় পড়ে আছি। যে পতাকার জন‍্য নয় মাস যুদ্ধ করেছি সেই লাল সবুজের উড়ন্ত পতাকা দেখতে না পেরে নিজেকে খুব হতভাগ্য মনে হচ্ছে।
ইউ,পি চেয়ারম্যান এ,টি,এম ফজলুল হক বলেন আমার পক্ষ থেকে সামান‍্য কিছু সাহায্য করেছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনির যে অবস্থা তাতে বড় ধরনের আর্থিক সাাহায্য ছাড়া তার চিকিৎসা সম্ভব নয়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন,বীর মুক্তিযোদ্ধা উসমান গনি দীর্ঘদিন থেকে অসুস্হ‍্য এ বিষয়ে আমি অবগত আছি। বীরমুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সহায়তায় জন‍্য ইতোপূবে অনুদানের ব‍্যাবস্হা ছিল। বর্তমানে সেটি বন্ধ থাকায় আমাদের পক্ষে সহযোগিতা করা সম্ভব হচ্ছেনা।তবে তাঁর চিকিৎসার জন্য মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনসহ সকলকে পাশে দাড়ানোর জন্য বিনীত আহবান জানাচ্ছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
###
আমিনুর রহমান বাবু