সিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদন এবং বাস্তবায়নঃ রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা’’ বিষয়ে মিডিয়া রাউন্ডটেবিল অনুষ্ঠিত

আপডেট: ডিসেম্বর ২৯, ২০২২
0

সিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদন এবং বাস্তবায়নঃ রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা’’ বিষয়ে মিডিয়া রাউন্ডটেবিল অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। 

 অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংবাদের নিউজ এডিটর কাজী রফিক, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, আজকের পত্রিকার জেষ্ঠ্য সহকারী সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকার, কালবেলার স্পেশাল করেসপনডেন্ট আঙ্গুর নাহার মন্টি কালের কন্ঠের স্টাফ রিপোর্টার ফাতেমা তুজ জোহরা এবং সিটিজেন টাইমসের এডিটর আহমেদ তৌফিক।

নাগরিক সমাজের বিকল্প প্রতিবেদনে সংযুক্ত সুপারিশ উপস্থাপন করেন সংগঠনের প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদকমাহফুজা জেসমিন। তিনি বলেন প্রতিবেদনে সিডও সনদের ধারা ২ এবং ১৬,১.গ এর উপর সংরক্ষণ প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে, বৈষম্য মূলক আইন, প্রথাগত আচার, রীতিনীতি, রাজনীতি ও জনপরিসরে নারীর সমতাপূর্ণ অংশগ্রহণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর অর্থনৈতিক কর্মসংস্থান এবং সনদ বাস্তবায়নে মিডিয়ার ভ’মিকা সম্পর্কে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি সুপারিশ উপন্থাপন করা হয়। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব বলেন, সিডও সমান অধিকারের কথা বলে কিন্তু আমরা পেছনে যাচ্ছি। নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবেশ এখনো আমরা তৈরি করতে পারিনি। অভিন্ন পারিবারিক আইন হয়নি। সংবিধানে নারীদের অধিকারের কথা বলা হলেও তারা তা ভোগ করতে পারেনা। এজন্য সামাজিক জাগরণ দরকার। এজন্য পারিবারিক, রাষ্ট্রীয়, আইনী বাধাসমূহ দূর করতে হবে। অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাড়াতে হবে। সিডও সনদের দুইটি ধারার উপর সংরক্ষণ প্রত্যাহারে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমকে জোরালো ভ’মিকা পালন করতে হবে।
কালবেলার স্পেশাল করেসপনডেন্ট আঙ্গুর নাহার মন্টি বলেন: ধারা-২টির জন্য সংরক্ষণ তুলে না নেয়ার নারীরা কোথাও কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধারাগুলো সংরক্ষিত থাকার কারণে নারীরা কোন কোন ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তা নিয়ে কেস স্টাডি রিপোর্ট দিতে হবে। সনদ বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরী।
কালের কন্ঠের স্টাফ রিপোর্টার ফাতেমা তুজ জোহরা,
দুটি ধারার উপর সংরক্ষণ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন এজন্য আমাদেও নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। সমাজ প্রস্তত থাকবে না। কাজের মাধ্যমেই সমাজকে প্রস্তুত করতে হবে
 সংবাদ পত্রিকার নিউজ এডিটর কাজী রফিক বলেন, দুটি ধারার সংরক্ষণের কারণে আমরা পিছিয়ে। এই ধারা দুটি থেকে সংরক্সণ প্রত্যাহার করা হলে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর জীবনের সকল বৈষম্য দূর করার পথ সুগম হবে। ডিজিটাল মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কঠোর আইন হওয়া দরকার। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। গণমাধ্যম কর্মীদের সিডও সনদের দুটি ধারা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার।

আজকের পত্রিকার জেষ্ঠ্য সহকারী সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকার, শিক্ষাকে ঢেলে সাজানোর কথা বলেন। সিডও সনদ বাস্তবায়নে সমাজ প্রস্তুত করার কাজ সরকারের ও নাগরিকদের। রাষ্ট্র এবং গণমাধ্যমকে সংবেদনশীল হতে হবে। পাশাপাশি নারী সংগঠকদেরও নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনা করতে হবে। সিডও সনদের ২ নং ধারা ও ১৬.১ গ নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। সাংবাদিকদের জন্য জেন্ডার সংবেদনশীলতার প্রশিক্ষণ ধারাবাহিকভাবে চালু রাখতে হবে।
বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আর হক মিনু বলেন, বাংলাদেশ সরকার সবার আগে অনুমোদন দিলেও এখনো সিডও সনদেও দুটি ধারা থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করেনি। সিডও বিষয়ে সাংবাদিকদের সচেতন করতে বারবার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সম্পত্তিতে নারী পুরুষের সমান অধিকার দিয়ে উত্তরাধিকার আইন প্রণয়ন করতে, ধর্মান্ধতা প্রতিরোধে নারী আন্দোলনের পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে। সকল জনপরিসরে ও গণমাধ্যমে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। গণমাধ্যমে হাইকোর্টে প্রণীত যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধের রায়ও কার্যকর হয়নি। গণমাধ্যমকে এজন্য আরো রিপোর্ট করতে হবে, আন্দোলন করতে হবে। আইনের মাধ্যমে সমাজকে প্রস্তুত করতে হবে। 

সিটিজেন টাইমসের এডিটর আহমেদ তৌফিক: চীফ রিপোর্টার, নিউজ এডিটর দের সাথে মতবিনিময় সভা আয়োজন করতে হবে। বাংলাদেশের নারীরা সম্পদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত। প্রচলিত আইনে কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। এই বিষয়টি প্রতিবেদনে সংযুক্ত করতে হবে। 

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আজ নারীর যে অগ্রগতি হচ্ছে তা প্রতীকী। এই প্রতীকী অর্জনকে প্রাতিষ্ঠানিক করতে না পারলে প্রকৃত উন্নয়ন হবেনা। সমাজের পশ্চাতপদ শক্তি একটা বড় শংকার জায়গা। বিশ^ব্যাপী সুস্থ রাজনীতির ধারা সংকুচিত হয়ে আসছে। প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। নারী নির্যাতনের বিষয় অগ্রাধিকারের জায়গায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের যে জারালো ভ’মিকা আছে তা বলতেই হবে। প্রতিটি ইস্যু ধরে সামনে নিয়ে আসার জন্য গণমাধ্যমকে দৃষ্টি দিতে হবে। গণমাধ্যমের পাশাপাশি ্ ডিজিটাল মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও মত প্রকাশে সরব। এখানে নারীর প্রতি নেতিবাচক প্রচার বন্ধে করণীয বিষয়ে নারী আন্দোলনকে ভাবতে হবে। সমাজ, রাষ্ট্র, গণমাধ্যমকে সাথে নিয়ে সমন্বয় করে কাজ করার আহ্বান জানান।

স্বাগত বক্তব্যে মালেকা বানু বলেন, নারীর জীবনে সকাল প্রকার বৈষম্য নিরসনে সিডও সনদ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের একটা বাধ্যবাধকতা আছে। সরকার ২০১৫ সালে জাতিসংঘ সিডও কমিটির কাছে রিপোর্ট জমা দেয়ার পর এবারের নবম প্রতিবেদন জমা দেবে। একই সাথে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়কে চিহিœত করে সেবিষয়ে নাগরিক সমাজের বক্তব্য নিয়ে একটি বিকল্প
প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে গণমাধ্যম ধারাবাহিক ভ’মিকা রাখছে। সিডও সনদ বাস্তবায়নেও গণমাধ্যম কিভাবে ভ’মিকা রাখতে পারে তা আলোচনার জন্য আজকে মিডিয়া রাউন্ডটেবিলের আয়োজন করা হয়েছে।

মুক্ত আলোচনায় দৈনিক কালবেলার সিনিয়র সাব-এডিটর রীতা ভৌমিক বলেন, সিডও সনদেও ধারা প্রত্যাহার বিষয়টি সরকার বারবার এড়িয়ে যাচ্ছে।

ইত্তেফাকের রিপোর্টার রাবেয়া বেবী বলেন সিডও সনদ বিষয়ে প্রতিবেদন করার সময় সরকারের মন্তব্য চাইলে পাওয়া যায় না এমতাবস্থায় প্রচারের কাজ দুরুহ হয়ে পড়ে।

উক্ত মিডিয়া রাউন্ডটেবিলে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিএনএসকে এর প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সংগঠনের কর্মকর্তাসহ প্রায় ৭০ জন উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা