সৈয়দপুরের এমপি আদেল সহ ৮ জন করোনা আক্রান্ত

আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২১
0

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আহসান আদেলুর রহমান আদেলসহ ৮ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একই পরিবারের ৩ জনও রয়েছে। এমপি আদেলের করোনা সনাক্ত হয়েছে ২৯ মার্চ সোমবার। নিশ্চিত হওয়ামাত্র তাকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে চিকিৎসার জন্য। অন্যরা গত এক সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছেন।

সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আহসান আদেলুর রহমান আদেল গত প্রায় এক সপ্তাহ থেকে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে তার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করেছেন। এসময় তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করেছেন। এসব অনুষ্ঠানে উপজেলার বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটেছে।

এদিকে পরীক্ষায় সনাক্ত কোভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর পাশাপাশি অনেকে পরীক্ষা না করলেও করোনা লক্ষণ নিয়ে ভুগছেন এবং বাড়িতেই অবস্থান করছেন। এমন আক্রান্ত কেউ কেউ এ অবস্থাতেও নির্দ্বিধায় সর্বত্র যাচ্ছেন। ফলে ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

কারন টিকা কার্যক্রম শুরুর পর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে উদাসীন হয়ে পড়েছে উপজেলাবাসী। ফলে সড়ক, হাট-বাজার, মার্কেট, গণপরিবহনে মাস্ক ব্যবহার না করেই অধিকাংশ মানুষ চলাচল করছে। বিশেষ করে শহরে জনসমাগম স্থানগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কিঞ্চিত চেষ্টা নেই কারই।

উপজেলায় গণ টিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর থেকে সরকারের ‘নো মাস্ক-নো সার্ভিস’ নীতি শিথিল হয়ে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা গ্রহীতাদের মাঝে মাস্ক পরার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও। এতে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি চরম উদাসিন হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

উপজেলার হাট-বাজার, মার্কেট, জনসমাবেশ, গণপরিবহনে মাস্ক পরিধান না করে অধিকাংশ মানুষ চলাচল করছে। অনেকে মাস্ক পরলেও সঠিকভাবে তা পরিধান করছে না। তারা মাস্ক থুতনির নীচে নামিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সর্বত্র। ফলে গুরুত্ব হারাচ্ছে মাস্ক পরিধান বজায় রাখার সরকারি পরামর্শ।

তবে এ পরামর্শ আমলে না নিলেও টিকা গ্রহণে উৎসাহ বেড়েছে সাধারণের মাঝে। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন শিক্ষিত-সচেতন শহরবাসী।দিন দিন টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা উচ্চহারে বাড়ছে।টিকা কার্যক্রম শুরুর দিন ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত উপজেলায় টিকা গ্রহণ করেছেন মোট ১০ হাজার ২৮০ জন মানুষ। এদের বেশীর ভাগ পঞ্চাশ উর্ধ্ব নারী-পুরুষ। এই প্রথম ডোজের টিকাপ্রাপ্তদের ৬ হাজার ৯৬২ জন পুরুষ এবং ৩ হাজার ৩১৮ জন নারী।

আবার টিকা গ্রহণকারীদের মাঝেও দেখা যাচ্ছে উদাসীনতা। এখন খুব নগণ্য সংখ্যক মানুষ মাস্ক পরিধান করে চলাফেরা করছে। এতে টিকা না পাওয়া মানুষের করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এমনকি ঝুঁকিতে থাকছেন টিকা গ্রহীতারাও। মানুষজনের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলাসহ মাস্ক পড়ার প্রবণতা কমে যাওয়ায় তাদের কাছে মনে হচ্ছে করোনাকে তারা ভয় পান না। কিন্তু দিনের পর দিন যে অবস্থা যাচ্ছে তাতে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের খালেদ মার্কেটের সামনে চা বিক্রেতা মোঃ রহিম বলেন, আগুনের সামনে কাজ করতে হয়, মুখে মাস্ক ব্যবহার করলে অস্বস্তি লাগে। তাই মাস্ক থাকলেও ব্যবহার করা হয় না। টিকা গ্রহণ করা নিয়ে এই চা বিক্রেতার মন্তব্য আমরা গরীব মানুষ, আমাদের করোনা আক্রমণ করবে না। আমাদের ওপর আল্লাহর রহমত আছে। তাছাড়া টিকা নিতে কি করতে হয়, তাও জানি না। এসব করতে ঝামেলা পোহাতে হয় বলে শুনেছি।

শহরের বাসটার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায়, টার্মিনালে ও প্লাটফর্মে যাত্রীদের ভীড়। অথচ কারো মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক ছাড়াই গণপরিবহনে যাতায়াত করছে মানুষ। এ নিয়ে কোন ভাবান্তরও দেখা গেল না পরিবহন সংশ্লিষ্ট লোকজনসহ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।

শহরের পৌরসভা কাঁচা বাজারেও দেখা গেল একই চিত্র। আহমাদ আলী নামে এক সবজি বিক্রেতা বলেন, সবজি বেচার সময় কাস্টমারের সঙ্গে কথা বলতে হয়। মুখে মাস্ক লাগিয়ে কথাবার্তা ঠিকভাবে বলা যায় না। ব্যবসার খাতিরে মাস্ক পরা হয় না।

একই কথা বললেন শহরের রেলওয়ে কারখানা গেট বাজারের কাল্লু নামে এক মুদি দোকানদার জানান, মাস্ক পরে কথা বলা অসুবিধা হয় বলে অনেক কাস্টমার চলে যায়। তাছাড়া মাস্ক বেশিক্ষণ পরে থাকলে দম আটকে আসে।

এ ব্যবসায়ীকে টিকা নেয়ার কথা বললে তিনি জানান, ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় টিকা নেয়ার সময় হয়ে উঠছে না। এছাড়া রেজিস্ট্রেশনের ঝামেলায় তা করা হচ্ছে না। নিয়ম-কানুন সহজ করলে আমাদের মত সাধারণ মানুষের জন্য ভালো হয়।

গ্রাম থেকে বাজার করতে আসা এক কৃষিজীবী বলেন, গ্রামে করোনা দেখি না। আমার ছবিওয়ালা মোবাইল নেই। কিভাবে কি করতে হয় জানি না, কোথায় গেলে কাজ হবে তারও প্রচার দেখি না। টিকা কেন্দ্রে গেলে টিকা পাওয়া যাবে এমন কিছু করার কথা বলেন তিনি।

স্থানীয় চিকিৎসকরা জানান, করোনা ভাইরাস ঠেকাতে ভ্যাকসিন নেয়ার পাশাপাশি মাস্ক পরিধান করা বেশি কার্যকর। অথচ সরকারের পরামর্শ মানছে না বেশীর ভাগ মানুষ। এর জন্য মাঠ পর্যায়ে আরও প্রচার-প্রচারণা দরকার।

টিকা নিয়ে অহেতুক ভুল ধারণা রয়েছে সাধারণের মধ্যে, এসব ভুল ধারণা ভাঙ্গাতে হবে। তবে তারা বলেন, মানুষ পরামর্শ পালনে উদাসিন হলেও টিকা নেয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। এজন্য সব পক্ষের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।

সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবু মোঃ আলেমুল বাশার বলেন, আগের চেয়ে সব মানুষের মাঝে ভ্যাকসিন নেয়ার আগ্রহ বেড়েছে। প্রতিদিনই টিকা কেন্দ্রে ভীড় বাড়ছে আগ্রহীদের।

এর পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহারে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে লোকজনের মাঝে। যা করোনা সংক্রমণের জন্য খুবই বিপদজনক। কারণ করোনা প্রতিরোধে মাস্কের বিকল্প নেই। টিকা গ্রহণ ও মাস্ক পরিধান করতে মাঠ পর্যায়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তবে করোনা নির্মূল করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। (ছবি আছে)