সৈয়দপুরে আ’লীগ-জাপার সংঘর্ষে আহত ২৫, মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২১
0

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি ॥ নীলফামারীর সৈয়দপুরে পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ২৫ জন আহত হয়েছে। এসময় ২০টি মোটর সাইকেল ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারী শনিবার দিবাগত রাত ১০ টার দিকে সৈয়দপুর শহরের গোলাহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গোলাহাটের ২ নং উর্দূভাষী ক্যাম্পে পৌর নির্বাচনের প্রচারণা চালায় জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ও ইকু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক। প্রচারণা শেষে শহরের প্রধান নির্বাচনী অফিসে ফেরার পথে ২ ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি হিটলার চৌধুরী ভলু’র বাসার সামনে আসলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সাথে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের বাকবিতন্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ২৫ জন সমর্থক আহত হয়। এসময় জাতীয় পার্টির সমর্থকদের ২টি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগসহ ২০টি মোটর সাইকেল ভা ঙ্গচুর করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সৈয়দপুর থানা পুলিশ পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

আহতরা হলেন, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল দিদার দিপু, সৈয়দপুর পৌর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুদ্দিন অরুণ, যুগ্ম সদস্য সচিব মেহেদী হাসান সুরুজ, যুব সংহতির সদস্য ও ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী সবুজ, জাতীয় মহিলা পার্টির পৌর কমিটির সদস্য সচিব রানু। অপরদিকে আওয়ামীলীগের কর্মী আরমান, বাবু ও সাকিল আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক জানান, পথসভা শেষে ওই পথে ফেরার সময় পূর্ব পরিকল্পিত আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা আমাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তারা মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙ্গচুর করে। তাদের হামলায় ২০ থেকে ২২ জন নেতাকর্মী ও সমর্থক গুরুত্বরভাবে আহত হয়েছে। নির্বাচনী ভীতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে তারা এমন কাজ করেছে। যেন আমরা নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়াই। তিনি সৈয়দপুরের ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, হামলা মামলা করে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পারবেনা। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারী ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমেই এ অপকর্মের জবাব দিবে ইনশা আল্লাহ।

সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন জানান, লাঙ্গল প্রতীকের পথসভায় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের ্উদ্দেশ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বক্তারা। এতে স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করলে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীসহ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আওয়ামীলীগ নেতা হিটলার চৌধুরী ভলৃুর বাসায় হামলা চালালে সংঘর্ষ বাঁধে। হামলাকারীরা বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ ওই নেতার বাসার আসবাবপত্র ভাঙ্গচুর করে।

হিটলার চৌধুরী ভলু অভিযোগ করেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে একটি জীপ গাড়ি ভাঙ্গচুর করে এবং তার দুই কর্মীকে আহত করে। এসময় তারা বঙ্গবন্ধুর ছবিও ভাঙ্গচুর করে।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল হাসনাত খানের সাথে রাত ৩ টায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ঘটনায় কোন পক্ষই এখন পর্যন্ত মামলা করে নাই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ মোটর সাইকেলগুলো পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ রবিউল আলম বলেন, সংঘর্ষের খবর শুনেছি। যেহেতু সেখানে ফৌজদারী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। সেহেতু ক্ষতিগ্রস্থরা আইনী আশ্রয় নিতে পারেন। মামলা হলে সে অনুযায়ী প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে। আর যদি নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘনের লিখিত অভিযোগ পাই তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে সংবাদ পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিন, পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক দিলনেওয়াজ খান, যুগ্ম আহবায়ক আসাদুল ইসলাম আসাদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজির হোসেন, কামারপুকুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি রাসেল জোতদার প্রমুখ।
এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এবং নির্বাচন নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন অনেকে।