সৈয়দপুরে উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১
0

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।মঙ্গলবার দিবাগত সন্ধা ৭ টা থেকে রাত সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোখছেদুল মোমিন। বক্তব্য রাখেন, নীলফামারী জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ সেকেন্দার আলী, সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও খাতামধুপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আজমল হোসেন সরকার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী সানজিদা বেগম লাকী, সৈয়দপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ শাহিন হোসেন, প্যানেল মেয়র-২ আবুল কাশেম দুলু সরকার, পৌর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জোবায়দুর রহমান শাহিন, ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সাবেক যুবলীগ সভাপতি কাজী হায়দার আলী, উপজেলা যুবলীগের আহŸায়ক ও সাবেক ছাত্র নেতা দিলনেওয়াজ খান, যুগ্ম আহŸায়ক আসাদুল ইসলাম আসাদ, বাঙ্গালীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ডাঃ শাহজাদা সরকার, কামারপুকুর ইউনিয়ন সভাপতি আনোয়ার হোসেন সরকার, কাশিরাম ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ রাকিব, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত সরকার, সাবেক সভাপতি নজির হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা পলক প্রমুখ।

বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রভাষক আব্দুল হাফিজ হাপ্পুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রকৃত সৈনিকেরা যে কোন ষড়যন্ত্রকে ভয় পায়না। তারা সকল ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়ে তারা সম্মুখপানে এগিয়ে যায়। কারণ তারা লড়াই সংগ্রাম করেই বাঁচে এবং সকল ক্ষেত্রেই বিজয়ী হয়। সেটা ব্যক্তিগত জীবনে যেমন তেমনি সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও। তাই যত ষড়যন্ত্রই করা হোক না কেন তাদের অগ্রযাত্রা রুখতে পারবেনা কোন অপশক্তিই। প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে সকল অপশক্তিকে প্রতিহত ও পরাজিত করে তারা চলমান উন্নয়ন ও সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে সদা প্রস্তুত। এজন্যই আমাদেরকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে সমাজে হেয় করার শত অপচেষ্টা করলেও সাধারণ নেতা কর্মী ও জনগণের মন থেকে আমাদের প্রতি ভালোবাসা ও সমর্থন কেউ কোন ভাবেই কেড়ে নিতে পারবেনা।

উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক দিলনেওয়াজ খান বলেন, আমি একজন শিল্পপতি। বড় ভাই আমেরিকা প্রবাসী মরহুম পারভেজ খানের হাত ধরে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত হই। দীর্ঘদিন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এখন যুবলীগের আহবায়ক ও পৌর আওয়ামীলীগের ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক সম্পাদক। সকল লড়াই সংগ্রাম আন্দোলনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন নিবেদিত প্রাণ সৈনিক হিসেবে সব সময় দলের জন্য সময়, শ্রম, মেধা ও অর্থ দিয়ে আত্মনিয়োগ করেছি। দলের প্রতিটি নেতার সাথে সদাচারণ করেছি ও শ্রদ্ধাবনত থেকেছি। আওয়ামীলীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কারো সাথেই কখনও খারাপ ব্যবহার করেছি এমন কোন অভিযোগ কেউই করতে পারবেন না বলেই আমি গর্বের সাথে বলতে পারি। মাদক, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, দখলবাজীসহ যে কোন ধরণের অপকর্মের সাথে কোন দিনই আমার সম্পৃক্ততা ছিলনা, এখনই নেই। দল মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের সৈয়দপুরবাসীর সাথে আমার সুসম্পর্ক এবং সব সময় মানুষের পাশে থেকে রাজনীতি করে চলেছি। করোনাকালে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি নিজের সর্বস্ব দিয়ে। যা সৈয়দপুরে আর কেউ করতে পারেনি।
তারপরও আমার দলেরই কয়েকজন নেতা প্রায়ই মিথ্যে অভিযোগ তুলে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করতে সদা সচেষ্ট। নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় আমার সাথে না পেরে তারা ষড়যন্ত্রের পথ অবলম্বণ করেছেন। তারই অংশ হিসেবে আমাকে কুখ্যাত রাজাকারের সন্তান বলে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে বহিস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ তারা তাদের অভিযোগের কোন তথ্য প্রমান দিতে না পেরে একজন হলুদ সাংবাদিক মোতালেব হোসেন হক এর মাধ্যমে মিথ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং থেকে থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে অভিযোগের ফাইল চালাচালি করছে। কিন্তু তাদের কোন ষড়যন্ত্রই সফল না হওয়ায় তারা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তাদের এহেন ন্যাক্কারজনক কাজের জবাবে ইতোপূর্বেও আমি সংবাদ সম্মেলন করে তথ্য প্রমাণসহ তুলে ধরেছি যে, আমার বাবা কখনই কোন হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন না। শুধুমাত্র ঈর্ষা ও হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতেই তারা এমন ঘৃণ্যকাজে মেতেছেন।
তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, তাদের আনিত অভিযোগের যদি একটিও প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আমি নিজেই পদত্যাগ করে রাজনীতি ছেড়ে দিবো এবং সৈয়দপুরে আর মুখ দেখাবো না। কিন্তু তারা সাংগঠনিক নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে না চলে প্রপাগান্ডার পথ বেছে নিয়েছেন। একের পর এক নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বুনে আমাকে বিপর্যস্ত করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু আমি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রকৃত সৈনিক। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দৃঢ় আস্থাবান। তাই ষড়যন্ত্রকারীদের কোন অপচেষ্টাই আমাকে আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে বিচ্যুত করতে পারবেনা। এতোদিন তাদের এহেন দূষ্কর্মের প্রতিবাদে তেমন সো”্চার হইনি। দলের শিষ্টাচার মেনে নেতাদের পরামর্শে নিরব থেকেছি। কিন্তু আর না। এখন থেকে যে কোন ধরণের আঘাত আসলে তার পাল্টা আঘাত করেই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত রাখবো। মিথ্যের কাছে সত্যকে অপমানিত বা হয়রানীর শিকার হতে দিবোনা।
একই রকম অভিব্যাক্তি প্রকাশ করেন সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ মোখছেদুল মোমিন। তিনি বলেন, আমার রাজনৈতিক জীবনে চলার পথের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার দলেরই দুই একজন নেতা। তারা নিয়মতান্ত্রিক প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়ে সম্পূর্ণভাবে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের বিপরিতমুখী আচরণ করছেন। তাদের নানা ষড়যন্ত্র সত্বেও আল্লাহর রহমতে এবং জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় রেলওয়ে শ্রমিক নেতা থেকে আজ আমি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এ পর্যন্ত আসতে অনেক লড়াই সংগ্রাম করতে হয়েছে নিজ দলের ওই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে। এখনও থেমে নেই তাদের অপচেষ্টা। প্রতিনিয়তই আমাকে সভাপতির পদ থেকে সরানোর দূঃস্বপ্নে মগ্ন তারা। এজন্য দলের নেতাকর্মীদের কাছে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা না করে উল্টো সময়ক্ষেপন করছেন সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক। তিনি এমপিপুত্র রাশেদুজ্জামান ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু ও সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক’র সাথে জোগসাজশ করে আমার নামে ভূয়া অভিযোগের ফাইল পাঠিয়েছেন কেন্দ্রে।
তারা এতটাই নি¤œ মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন যে, আমার নামে অভিযোগ দিতে গিয়ে পৌর সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক’র তার ছোট ভাই উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহŸায়ক মোস্তফা ফিরোজ কে শিবির কর্মী হিসেবে উপস্থাপনকৃত সাবেক এমপি মরহুম মারুফ সাকলায়েন এর একটি অভিযোগপও সংযুক্ত করেছেন। এটা তাদের অযোগ্যতার একটা নজির।

আসলে তারা জনমানুষের রাজনীতি করেন না। তাই তারা ভোট বোঝেনা, করেও না। কারণ ভোট করলে তারা কাউন্সিলর হতেও পারবেন না। মূলতঃ তারা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কুক্ষিগত করে রেখে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে মত্ত। একারণে তারা মাঝে মাঝেই আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে সাংগঠনিক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করতে তৎপর। সেই সাথে বিহারী-বাঙ্গালী, বাহে-ভাটিয়া তকমা দিয়ে দলের ভিতর বিভক্তি তৈরীর অপচেষ্টায় লিপ্ত। তাদের এ ধরণের ভন্ডামীতে আমরা বিন্দুমাত্রও বিচলিত নই। বরং সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় সৈয়দপুর আওয়ামীলীগকে ঢেলে সাজিয়ে একটি শক্তিশালী সংগঠনে রুপ দিতে আমি বদ্ধপরিকর। আমরা লড়াই সংগ্রাম করেই বেঁচে আছি এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজয়ী হয়েছি। সংগঠন বিরোধী যে কোন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেই ইনশা আল্লাহ আমরা বিজয়ী হবই। আমি ও দিলনেওয়াজ খানসহ দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ নেতারা সক্রিয় থাকায় তাদের লুটেপুটে খাওয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় তারা প্রপাগান্ডাকে হাতিয়ার বানিয়ে আমাদের ইমেজ নষ্ট করার পায়তারা করছে। এক্ষেত্রে তাদের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছে হলুদ সাংবাদিক মোতালেব হোসেন হক। তথ্য উপাত্তহীন মনগড়া সংবাদ পরিবেশন করে তারা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করলেও সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীরা বোঝে কারা তাদের প্রকৃত নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য। তাই আজ এ সভায় হাজার হাজার কর্মী সমর্থক উপস্থিত হয়েছেন।

সভায় অন্যান্য বক্তারাও দিল নেওয়াজ খান ও মোখছেদুল মোমিনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, দিলনেওয়াজ এতদিন রাজাকার সন্তান ছিলনা। এখন স্বার্থে আঘাত লাগায় মিথ্যে অভিযোগে অসাংগঠিকভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন।

মোখছেদুল মোমিন ছাড়া কোন সভা সমাবেশ মিছিল করতে গেলে দশজন মানুষও জোগার করতে পারেন না। আর বড় বড় কথা, সেজেছেন নেতা। দিলনেওয়াজের টাকা আর মোখছেদুল মোমিনের লোকবল দিয়েই চলছে সৈয়দপুরের আওয়ামী রাজনীতি। আপনাদের বিন্দু মাত্র অবদান নেই। আপনারা শুধু লুটেপুটে খেয়েই চলেছেন। এখনও সময় আছে সংশোধন হন এবং মিলে মিশে দলকে সুসংগঠিত করতে উদ্যোগী হন। নয়তো সাধারণ কর্মী সমর্থকরাই আপনাদের বয়কট করবে। (ছবি আছে)

শাহজাহান আলী মনন,
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি