সৈয়দপুরে প্রথমবারেই লক্ষমাত্রার চেয়ে ১৫ গুন বেশি জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ

আপডেট: মার্চ ১৬, ২০২১
0

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৫ গুন বেশি জমিতে চাষ হয়েছে সূর্যমুখী ফুল। সরকারী প্রণোদনার সুবিধা পাওয়ায় কৃষকরা ভোজ্যতেল উৎপাদনীয় সূর্যমুখী বীজের ফলনে উৎসাহিত হয়েছে। আর তাই আশাতীতভাবে নতুন এই ফসল চাষ করেছে তারা। এখন লাভের স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। ইতিমধ্যে প্রায় সব গাছেই কলি এসেছে, কোনো কোনোটাতে ফুল ফুটতে শুরু করেছে।

সৈয়দপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেত। জমিতে একেকটি ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের আলো ছড়াচ্ছে। চারদিকে হলুদ ফুল আর সবুজ গাছের অপরূপ দৃশ্য। ।দিগন্ত জোড়া এ রকম চিত্র দেখে মন জুড়িয়ে যায়। তাইতো এ সৌন্দর্য দেখতে আশপাশের এলাকা থেকেও ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই।

উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ললক্ষমাত্রা নেয়া হয়েছিল দুই হেক্টরের। সেখানে ২৯ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে সূর্যমুখী। সরকারের দেওয়া প্রণোদনা বীজে সূর্যমুখী চাষ করেছে চাষীরা।

কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ পেয়ে চলতি বছর তাঁরা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ও মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তাঁরা এই সূর্যমুখীর চাষ শুরু করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালো আয় হবে বলে আশা করছেন তারা।

কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পশ্চিম বেলপুকুর সিপাইগঞ্জ বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী মোঃ জিয়াউর রহমান বলেন, বাজারের পাশেই কুঠিপাড় ব্রীজ সংলগ্ন চিকলী নদীর ধারে ৬৫ শতক জমি আছে। এই জমিতে ইতোপূর্বে ভুট্টা আবাদ করতাম। এবার সূর্যমুখী ফুল চাষ করেছি। আশানুরূপ ফলন হয়েছে। প্রায় ৫ হাজার গাছে প্রতিটিতে ন্যুনতম ১ থেকে ৩ টি ফুল ধরেছে। কোন কোন গাছে আবার ৫/৭ টি ফুলও আছে। এতে ফুল প্রতি প্রায় ১০০ গ্রাম থেকে ১২০ গ্রাম বীজ পাওয়া যাবে। প্রতি কেজি বীজের দাম ৭৫ টাকা। সে হিসেবে সূর্যমুখী ফুল চাষ ভুট্টার চেয়েও লাভজনক। দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ ও স্বাস্থ্যকর হওয়ায় উপকারীও। আগামীতে আরও ব্যাপকভাবে এ ফুল চাষ করবেন বলে তিনি জানান।

সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিনা বেগম জানান, সৈয়দপুরে এই প্রথম সূর্যমুখীর চাষ শুরু করা হয়েছে। চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনা মূল্যে বীজ দেওয়া হয়েছে। চাষিদের স্বাবলম্বী করতেই সূর্যমুখী ফুল চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে। যদি সফল হওয়া যায়, আগামী দিনে চাষ অনেক বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এটি একটি লাভজনক ফসল, খরচও অনেক কম। এ ছাড়া সূর্যমুখী বীজের তেল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী ও সূর্যমুখীর শুকিয়ে যাওয়া গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

তিনি আরও বলেন, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে সরকারের কৃষি প্রণােদনার আওতায় ১৯০ জন চাষিকে সূর্যমুখীর বীজ দেওয়া হয়েছে। চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে ৩০টি প্রদর্শনী ক্ষেতও তৈরি করা হয়েছে।


সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবু মোঃ আলেমুল বাসার জানান, সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের চেয়ে একটু আলাদা। প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল মানব শরীরের দুর্বলতা দূর করে, কার্যক্ষমতা বাড়ায়। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চেয়ে এর তেল ১০ গুণ বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ।

রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ আবু জাহিদ বসুনিয়া জানান, কোলেস্টেরল মুক্ত হওয়ায় হৃদরোগীদের জন্য অত্যন্ত আদর্শ ভোজ্যতেল হলো সূর্যমুখী বীজের তেল। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও খুবই উপকারী।