সৌদির সঙ্গে দুই চুক্তি ও সমঝোতা সই

আপডেট: মার্চ ১৭, ২০২২
0

মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে শুল্ক খাতে সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি ও দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতার একটি সমঝোতায় স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সাউদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ চুক্তিতে সই করেন। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে এসব চুক্তি ও সমঝোতা সই হয়।

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ও সৌদি আরব রাজনৈতিক পরামর্শক সভা করেছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বৈঠকে অনেক বিষয় আমরা আলোচনা করেছি। সৌদি আরব সবুজায়নের বিষয়ে কাজ করছে। শুধু সৌদি আরবের মধ্যে নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যে পাঁচ হাজার কোটি গাছ লাগাবে দেশটি। এর মধ্যে ১ হাজার কোটি সৌদি আরবের মধ্যে, বাকি ৪ হাজার কোটি মধ্যপ্রাচ্যে। এখানে অংশীদারিত্বের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশ গাছ দেয়ার পাশাপাশি এর রক্ষণাবেক্ষণ করতে চায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ফয়সাল বিন ফারহান আল সাউদ। পরে তিনি রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। একান্ত বৈঠক শেষে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

সংলাপের পর দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুল্ক খাতে সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি সই করেন। এ ছাড়া, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের সরবরাহ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে রিয়াদ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।

দুই দেশের প্রথম রাজনৈতিক পরামর্শক সভা শেষে ফয়সাল বিন ফারহান আল সাউদ বলেন, ‘আমরা নিজ নিজ অঞ্চল এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে একত্রে কাজ করব। বৈঠকে দুই দেশের অংশীদারিত্বকে আরো বিস্তৃত করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের ঐতিহাসিক শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশী সৌদি আরবে বসবাস করছেন এবং সেখানের উন্নয়নযাত্রায় অবদান রাখছেন। সৌদি অনেক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বেশ ভালো পরিমাণ বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। এ সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

সৌদি আরবের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়ার বিষয়ে জানিয়ে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, এরই মধ্যে ২০টি সৌদি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আসার আগ্রহ দেখিয়েছে। এ বিষয়ে কাজ চলছে, যা দ্রুত বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করি।

সৌদি আরবের দেয়া শিক্ষাবৃত্তিতে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী যাচ্ছে না জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের গত বছরের জন্য ২৬৫টি বৃত্তি দিয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ৮০ জন গিয়েছেন। কেন বাকিরা গেলেন না, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশও সৌদি শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে পড়তে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

হজযাত্রীদের হয়রানি বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ থেকে এবার যারা হজে যাবেন, তারা যেন এ দেশ থেকেই ভিসার অনুমোদন পান, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সুখের বিষয় হচ্ছে, এবার যারা হজে যাবেন, তাদের শতভাগেরই ভিসার অনুমোদন হবে এখানে, যাতে কোনো হয়রানি না হয়।

প্রসঙ্গত, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত মঙ্গলবার দুদিনের সফরে ঢাকায় আসেন। গতকাল বুধবার বেলা দেড়টায় তিনি ঢাকা থেকে বিদায় নিয়েছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।