স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি সারাবিশ্বে নজির সৃষ্টি করবেঃ মেয়র ব্যারিস্টার তাপস

আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২৩
0

দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা সেবা নিশ্চিতকরণে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নিয়ন্ত্রনাধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি সারাবিশ্বে নজির সৃষ্টি করবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

আজ সোমবার (৩ জানুয়ারি) নগর ভবনের মেয়র হানিফ মিলনায়তনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ঢাদসিক) এলাকায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবহিতকরণ ও মতবিনিময় কর্মশালায় ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ মন্তব্য করেন।

ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “এই কার্মসূচি একটি অত্যন্ত গর্বিত কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বছরের প্রথম দিন সকল শিক্ষার্থীর কাছে পুস্তক পৌঁছে দিচ্ছেন, যা সারা বিশ্বে গর্বিত নজির সৃষ্টি করেছে। এই স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচিও সারা বিশ্বে কাছে এ রকম গর্বিত নজির সৃষ্টি করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

বাংলাদেশকে সারাবিশ্বে এ ধরনের সুরক্ষা কর্মসূচি চালু করা দ্বিতীয় দেশ হিসেবে উল্লেখ করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আমার জানামতে শুধুমাত্র যুক্তরাজ্য ছাড়া এই কর্মসূচি সারা বিশ্বে আর কোনও দেশে নেই। ইউকে-তে ইউনাইটেড ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের অধীনে যে কোনও বয়সের মানুষ এই স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরম্ভ করে উন্নত বিশ্বের কোথাও সর্বজনীনভাবে সকল জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসা হয়না। সেটা সারা বিশ্বে নজিরবিহীন। বাংলাদেশ দ্বিতীয় দেশ হিসেবে নজির সৃষ্টি করতে যাচ্ছে।”

স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “জননেত্রী শেখ হাসিনা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস কারার কারণে সরকারি হাসপাতাল হোক বা বেসরকারি হাসপাতাল হোক তাদের সেই আর্থিক স্বচ্ছলতা নিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নেওয়ার মতো কোনও সক্ষমতা নেই। সেই অক্ষম, দুর্বল জনগোষ্ঠী যাতে করে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পায় সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। সেজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”

ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নতুন করে তালিকা প্রণয়নের আহবান জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি চালুর লক্ষ্যে আপনারা আড়াই লাখ লোকের তালিকা প্রস্তুত করেছেন। আপনারা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে হয়তো এই তালিকা প্রণয়ন করেছেন। কিন্তু আমি মনে করি, প্রস্তুতকৃত তালিকা কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য অনুযায়ী করা হয়নি। সেজন্য প্রকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে আপনারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের কাউন্সিলরদের এই কাজে সম্পৃক্ত করুন। কাজ আপনাদের লোকই করবে কিন্তু কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ত করলে যথাযথ লোককে আমরা তালিকাভূক্ত করতে পারব। এছাড়াও জাতীয় গণশুমারির তথ্য থেকে প্রকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তথ্য নিন। তাহলেই কেবল কর্মসূচি প্রকৃত উদ্দেশ্য যথাযথভাবে সফল হবে।”

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) ড. সৈয়দা নওশীন পর্ণিনী, করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের উপপরিচালক ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বিষয়ক উপস্থাপনায় অংশ নেন।

কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের কাউন্সিলরবৃন্দ, সচিব আকরামুজ্জামান ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাগণ অংশ নেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের নিয়ন্ত্রনাধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের আয়োজনে উক্ত অবহিতকরণ ও মতবিনিময় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) সম্পর্কিত তথ্যাদিঃ
উদ্দেশ্যসমূহ (Objectives)

(১) হাসপাতালে অন্তঃবিভাগীয় সেবাগ্রহণের ক্ষেত্রে গরীব জনসাধারণের জন্য বিদ্যমান আর্থিক প্রতিবন্ধকতা সমূহ দূর করা;
(২) দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিজস্ব ব্যয় (OOP) হ্রাসকরণ:
(৩) চিকিৎসার বিপর্যয়মূলক ব্যয় (Catastrophic Health Expenditure-CHE) থেকে দরিদ্রদের রক্ষা করা; (৪) স্বাস্থ্যখাতে কার্যকরী উন্নয়নের (Functional Improvement) লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা বৃদ্ধি; এবং
(৫) স্বাস্থ্যখাতে দক্ষতা অর্জন এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার, বিশেষত দাবী প্রক্রিয়াকরণ (Claim Processing), হিসাব নিয়ন্ত্রণ এবং ইলেক্ট্রনিক উপায়ে রোগীর রেকর্ড সংরক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ICT’র প্রয়োগ।

এসএসকে’র রূপরেখা (Overview)
(১) প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি, ঘাটাইল ও মধুপুর উপজেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) এর কার্যক্রম শুরু হয়।
(২) দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী (BPL) প্রতিটি পরিবারকে রেজিস্ট্রেশন পূর্বক একটি করে এসএসকে কার্ড প্রদান করা হয়ে থাকে;
(৩) প্রতিটি এসএসকে হাসপাতালে একটি এসএসকে বুথ ও এসএসকে ফার্মেসী রয়েছে, যা ২৪/৭ খোলা থাকে। এসএসকে বুথ রোগীর সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করে থাকে এবং এসএসকে ফার্মেসী হতে শুধুমাত্র এসএসকে রোগীদেরকে ঔষধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে;
(৪) বর্তমানে শুধুমাত্র হাসপাতালে অন্ত:বিভাগীয় সেবাগ্রহণের ক্ষেত্রে বেনিফিট প্যাকেজভুক্ত ৭৮ টি রোগের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা (রোগ নির্ণয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ঔষধ, রেফারেলের ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ ইত্যাদি) প্রদান করা হচ্ছে;
(৫) প্রতিটি পরিবারের জন্য বার্ষিক ১,০০০০ (এক হাজার) টাকা প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ সরকারি কোষাগার হতে প্রদান করা হচ্ছে;
(৬) বছরে পরিবার প্রতি সর্বোচ্চ ৫০,০০০.০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকার স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে;
(৭) প্রাথমিকভাবে সরকারি হাসপাতাল থেকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে এবং পরবর্তীতে বেসরকারী (Private hospitals/clinics) ও এনজিও হাসপাতালকে এ কার্যক্রমে সেবাদানকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে;
(৮) উপজেলা হাসপাতাল হচ্ছে সেবা প্রদানের প্রবেশদ্বার। প্রতিটি রোগীকে সেবা গ্রহণের জন্য উপজেলা হাসপাতালে অবস্থিত এসএসকে বুদ্ধে আসতে হয়। রোগীর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়;
(৯) কর্মসূচিকে টেকসই (sustainable), ঝুঁকি একত্রিতকরণ (risk pooling) এবং আন্ত:ভর্তুকি ব্যবস্থা (cross-subsidization) চালুর লক্ষ্যে পরবর্তীতে দারিদ্র্যসীমার উপরে বসবাসকারী (APL) পরিবারসমূহকে এই স্কীমে চাঁদা প্রদানকারী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে; এবং
(১০) এসএসকে স্বাস্থ্য সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী দরিদ্র পরিবারসমূহের নিজস্ব পকেট হতে ব্যয় (OOP) উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস এবং তাঁদেরকে স্বাস্থ্য ব্যয়জনিত আর্থিক বিপর্যয় (CHE) থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হওয়ায় সরকার ইতোমধ্যে টাঙ্গাইল জেলার সদরসহ অবশিষ্ট ০৯ (নয়) টি উপজেলায়, ঢাকা মহানগরী এবং দেশের আরো ০৬ (ছয়) টি জেলায় (বরগুনা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, মানিকগঞ্জ, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম) এসএসকে কার্যক্রম সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে । সম্প্রসারিত এলাকায় এসএসকে কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি চলমান রয়েছে ।