হে শরৎ তুমি শুভ্র মেঘের রথে এসো চির নির্মল নীল পথে

আপডেট: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১
0
ছবি : আবু সালেহ আকন

সকালে সেনাঝড়া রোদ্দুর, দুপুরে পেঁজা ,পেঁজা তুলোর মতো নীল আকাশ আর রক্তসন্ধ্যায় সেজেছে শরত রানী।
শরত প্রকৃতিকে অপরূপ রূপে সাজিয়ে যায় যার আবেশে অতি সাধারন মানুষ ও ভাবাবেগে আপ্লুত হয়।শরত অবসাদগ্রস্ত মনেও নতুন প্রেরণার সঞ্চার করে।তাই তো আমরা প্রকৃতিতে দেখি, এই ঋতুতে কি অপূর্ব রঙের খেলা, কি অপরূপ রঙিন ভুবন সাজায় প্রকৃতি। শরতে প্রাণবন্ত রূপ নিয়ে হেসে ওঠে গ্রাম বাংলার বিস্তৃত দিগন্ত।

মুস্তফা মনোয়ার বলেছিলেন, ‘‘গ্রামের বধূ যেমন মাটি লেপন করে নিজ গৃহকে নিপুণ করে তোলে, তেমনি শরৎকাল প্রকৃতিকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়৷ বর্ষার পরে গাছগুলো সজীব হয়ে ওঠে৷ আকাশে হালকা মেঘগুলো উড়ে উড়ে যায়৷’

বাংলা সাহিত্যর মহাকবি কালিদাস ‘মেঘদূত’ কাব্যের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন । মহাকবি কালিদাস শরৎ বন্দনায় ও ছিলেন অগ্রবর্তী।

Autumn
তিনি বলেন-“প্রিয়তম আমার, ঐ চেয়ে দেখ, নব বধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎ কাল সমাগত।’ কবি ‘ঋতুসংহার’ কাব্যে শরৎ কাল বিষয়ে লিখেছেন—‘কাশ ফুলের মতো যার পরিধান, প্রফুল্ল পদ্মের মতো যার মুখ, উন্মত্ত হাঁসের ডাকের মতো রমণীয় যার নূপুরের শব্দ, পাকা শালি ধানের মতো সুন্দর যার ক্ষীণ দেহলতা, অপরূপ যার আকৃতি সেই নব বধূর মতো শরৎকাল আসে । ” কবি কল্পনায় শরতের সাথে প্রকৃতি ও নারীর এই উপমা দেখে বিস্ময়াভিভূত না হয়ে উপায় নেই।

শরতের আরেকটি উল্লেখ যোগ্য দিক হলো—এ সময় মাঠ জুড়ে থাকে সবুজ ধানের সমারোহ। ধানের কচিপাতায় জমা হওয়া শিশিরের ওপর প্রভাতের তরুণ আলো মুক্তার মতো দ্যুতি ছড়ায়। আমাদের দেশের কৃষকরা নবান্নের আশায় দিন গোনে। আর বাঙালির সার্বজনীন প্রাণের উৎসব, হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দূর্গাউৎসবের কথা বলাই বাহুল্য। শরৎকাল শারদীয় আরাধনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যেমন উৎসব মুখর করে, তেমনি বিজয়ার বেদনায়ও করে তোলে ব্যথিত। শরৎ বাঙলার প্রকৃতিতে আসে শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে, নানা মাত্রিক আনন্দের বারতা নিয়ে।

ভারতীয় কবি বিনয় মজুমদার শরতের একটি চিত্র এঁকেছেন—
“শরতের দ্বিপ্রহরে সুধীর সমীর-পরে জল-ঝরা শাদা শাদা মেঘ উড়ে যায় ;
ভাবি,এক দৃষ্টে চেয়ে, যদি ঊর্ধ্ব পথ বেয়ে শুভ্র অনাসক্ত প্রাণ অভ্র ভেদি ধায়!”
তবে শরৎকে কবি গুরু বরাবরই দেখেছেন শান্তি, মঙ্গল ও সমৃদ্ধির ঋতু হিসেবে।

শরৎ নিয়ে বাঙালির উদ্দীপনার শেষ নেই। তবে রুশ সাহিত্যিকেরাও কম কথা বলেননি এ ঋতু নিয়ে।শরৎকে গোর্কি সাহেব বিষাদের সময় বললেও কবি আলেকজান্ডার পুশকিন একে ‘বোল্ডিনো অটাম’ বা উদ্যমী শরৎ বলেছেন। ১৮৩০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নিজের পরিবারের কাছে বোল্ডিনোতে ফিরে আসেন পুশকিন। মস্কোতে তখন শুরু হয়েছিল কলেরা মহামারি।

ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি পরিবারের সঙ্গেই ছিলেন। এ সময় তিনি পাঁচটি কাব্যিক উপন্যাস ও ত্রিশটির মতো কবিতা লিখেছিলেন। এক চিঠিতে প্রকাশককে পুশকিন বলেছেন, ‘চারপাশ ফাঁকা, প্রতিবেশ নেই বললেই চলে, ইচ্ছেমতো ঘোড়া দৌড়ানো যায়, বাড়িতে বসে যতক্ষণ খুশি লেখা যায়। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এ সময় আমাকে কেউ বিরক্ত করেনি।’