“১০ ডিসেম্বরে দেশের জন্য নৈতিক লড়াইয়ে আপনি তৈরী তো ?”

আপডেট: ডিসেম্বর ৬, ২০২২
0


ডা.জাকারিয়া চৌধুরী:

এলোয় রিমের চশমা পরা কুচকুচে কালো একজন লোক বসে আছেন আমার সামনে এবং নিচের সাড়িতে। আর আমার সকল মনোযোগ কেন্দ্রীভুত আমার হাতে থাকা কটবেলে। বাদাম ফাটার একটা মৃদু আওয়াজ কানে এলো। অনেকক্ষন ধরে-ই বুঝতে পারছিলাম আশপাশে কেউ বাদাম খাচ্ছে। আমি তাঁর দিকে তাকালাম। তিনি সেই বাদামের খোসা ছাড়ালেন। দুই বিচি বের করলেন। সেসব ফাটিয়ে চার বিচি করে একটা ফু দিলেন। খুব কেয়ারফুল্লি এই কাজটা তিনি করছেন কোন বাদাম যেন ছিটকে না যায়। তারপর সময় নিয়ে এক বাদামকে চারবারে খাচ্ছেন। এক স্টেপ নেমে পাশে বসলাম।
– কোত্থেকে এসছেন ?
– বোগড়া।
– ক’জন ?
– আমাদের থানা থেকে আমরা দশ বাস লিয়ে এসেছি। কিন্তু পথে একটা খারাপ হয়ে গেল………… এই পুলিশে সিকনাল দিয়ে বাস থামায়ে দিল। আর কিছু গুন্ডা পান্ডা আমাদের সব খাবার লুট করে লিয়ে গেল। আমাদের আজ দু’দিন একেবারে না খাবার দশা ! কেমন লাগে বলেন ত দেখি ! আমার বাস প্রতি দু’বস্তা চাল, দুইটা খাসি আর মাছ লিয়েছিলাম। একজন বাবুর্চি আর একজন সহকারী ছিল বাস প্রতি। কি কারবারডা হয়া গেল, তাই না !

– এজন্য কি অল্প অল্প করে বাদাম খাচ্ছেন ?
– নালি কি আর করতে পারি ? আমি সামান্য একটা স্কুলের মাস্টর। ১১ টা মামলা, সোজা কথা !! জেল থেকে বের হই, আমার জেলে ঢুকে দেয়………… বউকে বাচ্চা সহ বাপের বাড়ি ফেলে রাখিছি। কি খায় না খায় খবর নিতে পারিনে। ছোটো মেয়েটার জন্য কান্না আসে, বুইঝলেন ! এখেনে হোটেলে ঢুঁকে খাওয়া দাওয়া বড় দায়……… গত দু’দিন ধরে এসব খেয়েই আছি।


ভাইয়া আমি শুয়েল। ফেসবুকে কথা হয়েছিল। আমি আপনার নাম্বার রেখেছিলাম। চিনেছেন ?
তোমার শরীর, মুখ এতো মলিন কেন ?
গত তিনরাত এই বালুচরে তাবু খাঁটিয়ে আছি। গোসল নেই, থাকার পরিবেশ নেই, খাওয়ার ঠিক নেই……
ঠিক নেই কেন ? পদ্মার চরে-ই কেন পরে আছো ?
জানেন না, মাঠে আমাদেরকে ঢুকতে দিচ্ছে না। আজ অনুষ্ঠানের আগের রাত অথচ ………………

– আরে আসলেই তো ! মাঠে কোনো তাবু দেখছিনা। তুমি তিনদিন ধরে এই তীব্র শীতে বালুচরে ঘুমাচ্ছ ?
জ্বি ভাইয়া। সে হাসি দেবার চেষ্টা করছে। আমি মনে প্রানে চাইছি সে হাসি না দিক। তাঁর ঠোঁটের চামড়াগুলো এমনভাবে ফেটে আছে যে, আমি নিশ্চিত সে হাসলেই তিন চারটা ব্লিডিং পয়েন্ট তৈরী হবে। তাঁর বাড়ি পিউর বরেন্দ্র অঞ্চলে……… সেইটা কিন্তু এখান থেকে ৪২ কিলো দূর…………… বাসেও যাওয়া যায় আবার অনেকটা পথ অটোতে করে লিয়ে যাব…………… সেখান থাকি কি কি দেখা যায় বলছে। আমার মনে হল যেমন করে মা’য়ের গল্প বাড়িয়ে বাড়িয়ে শিশুরা বলে ঠিক সেভাবেই যেন সে বর্ননা করছে। সে আমার চোখে অসপষ্ট হয়ে গেল। আমি শুনতে পাচ্ছি অন্যকিছু…… যেন আমার জিম্মি হয়ে থাকা শিশুটা জোরে কেদে উঠেছে ! স্যরি শুয়েল তাঁর কথা বলে যাচ্ছে………………… বলেই যাচ্ছে, বলেই যাচ্ছে, বলে-ই যাচ্ছে………… এদিকে আমি উঠে চলে যাচ্ছি, অন্ধকারের দিকে যেখান থেকে কান্নার আওয়াজটা শুনতে পেলাম।

ভাই বসেন, যান কই ?……… কেউ যেন আমাকে হাত ধরে থামিয়ে দিল।
এর নাম খুব সম্ভব @Shariful islam যার বয়োতে লেখা আছে- ধংশস্তুুপের মাঝে দাঁড়িয়ে…হাসি মুখ নিয়ে চলা একজন ”মানুষ”। দাড়ালাম। তিনি আরও দু’নেতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। কি আশ্চর্যের ব্যাপার যে, আমার থাকার স্থান সুনির্দিস্টভাবে আছে জেনেও আমি তাদের সাথে হোটেলে উঠি।

আগে একজনকে দেখলাম কাফনের মত সাদা আলখাল্লা পরে আসছে। আরেকজন সেই একই কাপড়ে নানা আরবি ফলক লিখে রেখেছে। কেবল একজনকে দেখলাম তাঁর পিঠের পাশে বেধে কাফনের কাপড়ের বান্ডিলটা এনেছেন। এরা সবাই ৬০+……………কিন্তু আমার চেয়েও কত তরুন ! এখানকার মানুষ একদমই দুধ চা খেতে পছন্দ করে না। খুব লাইট টি এদের নেশা ও পছন্দ। আসার পথে অনেক গুলো নামকরা শাড়ি ফেব্রিকস ফ্যাক্টরি গুলো বন্ধ হয়ে জং ধরে আছে দেখলাম। রেডিওতে এই কোম্পানি গুলোর এড শুনে শুনেই বেড়ে উঠেছিলাম । এতো সুন্দর পরিপাটি একটি গ্রীন সিটি করার আইডাটা না জানি কোন প্রেমিক এ শহরকে একে দিয়েছলেন ! এরপর ঠিক সেই কাগজে আকা নকশায় যেন এ শহর গড়েছেন কেউ। সমাবেশের মাঝখানে শিরিনের বাড়ি গিয়ে শুনলাম তাঁর দল পাগল বাবাটা মারা গেছেন। এরা এখন মনে প্রানে বিএনপিকে ঘৃণা করে কথাটা যখন বলছে তখন গভীর মনোযোগ দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য শুনছে।
জয়পুরহাট থেকে এসেছি। আমরা পিছাবার নই। যারা ফাঁকি দেয় তারা সে দিক। আমরা না।
নাটোর থেকে আসছি। ++++++++ কাকার লোক।
পরা, রাজশাহী। এসেছি ব্যাংকের কান্ড আর ব্যাঙ্গের কান্ড দেখতে।
আমরা পাবনা আসছি ভাইয়া রাশেদুল। নাম্বার নিছিলাম। আসার পথে আমরা হামলার শিকার হইছি ভাইয়া…… ট্রেনে যাব।
আমরা সিরাজগঞ্জ থেকে নৌকো নিয়ে এসেছি। আমরা **** স্যারের লোক।

আমি হাঁটছি। এইখানে দলীয় লংগরখানা কই ? এই বিভাগে কত কত হাই প্রোফাইল নেতা আছেন। এ অঞ্চলের মানুষের মনোশাসনকে আমার কাছে অদ্ভুত লাগে। কেউ যদি লীগ হয় তবে তাঁর বামাশক্তি জন্মগত। আবার কেউ যদি বিএনপি হয় তাঁর বামাসক্তিও জন্মগত। ( ব্যাক্তিগত মতামত )। অন্যান্য জেলায় দলীয় উদ্দ্যেগে রান্নার একটা আয়োজন ছিলই। আর সেটা মাঠেই আয়োজন থাকত। এখানে কি হয়েছে কে জানে ? দূর থেকে এখানে আসা অভাবী মানুষগুলো দলীয় কোন ফুড সাপ্লাইয়ের ব্যাবস্থা না পাওয়া ছিল দুঃখজনক। গরীবের প্রতি অবহেলা ধনীদের কারো বুকে দারুন আঘাত লাগে।

রাজশাহীতে জনসমাবেশ এত বড় হয়েছে, এত বেশি মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়েছেন তা বিষ্ময়ক !! সবচে বেশি এসেছেন প্রবীনবেরা। দেশের জন্য এই নৈতিক লড়াইয়ে যেতে আপনি তৈরী তো ?