১১ নভেম্বরের পর রাজপথ থাকবে যুবলীগের দখলে : চেয়ারম্যান পরশ

আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২২
0

বিএনপিকে ভণ্ড ও প্রতারক রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছেন, ‘১১ নভেম্বর যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যুব মহাসমাবেশ। এরপর থেকে রাজপথ থাকবে যুবলীগের দখলে। তখন বোঝা যাবে কত ধানে কত চাল।

শনিবার (৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় রংপুর জেলা স্কুল মাঠে জেলা যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।

সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির সমাবেশের চেয়ে দশগুণ বেশি লোক উপস্থিত হবে।’

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।

সম্মেলনে বিএনপির মানবাধিকার লংঘন, খুন গুম, হত্যার অভিযোগকে ভণ্ডামি দাবি করে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভণ্ডামির একটা সীমা আছে। এদের (বিএনপির) ভণ্ডামির কোনো সীমা নেই। পাঁচ বছর বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে এরপর ২১ বছর আমি বিচার চাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলাম। আমার অধিকার তখন কই ছিল, যখন আমি বিচার পাওয়ার সুযোগও পাইনি? সুতরাং আমি মনে করি, বিএনপি ভণ্ড ও প্রতারকদের দল। যারা শুরু থেকে এদেশের মানুষের সাথে প্রতারণা ও মিথ্যাচার করে আসছে। এবং জনগণের অধিকার খর্ব করাই তাদের প্রধান কাজ। আজকে তারা এদেশের সাধারণ মেহনতি মানুষের অধিকার হরণের জন্য মাঠে নেমেছে। তারা আবারো এ দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানাতে চায়। অনেক দিন খুল্লাম খুল্লা দুর্নীতি করতে পারছে না বলে তাদের (বিএনপির) এখন ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে।’

বিএনপির রাজপথে থাকার বিষয়কে চ্যালেঞ্জ করে যুবলীগ চেয়ারম্যান পরশ বলেন, ‘আমি ওদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা মিছিল-সমাবেশ করছেন, যত পারেন করে নেন। কারণ ১১ নভেম্বর যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যুব মহাসমাবেশ। এরপর থেকে রাজপথ থাকবে যুবলীগের দখলে। তখন বোঝা যাবে কত ধানে কত চাল। যুবলীগ অতন্দ্র প্রহরীর মতো আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারা, গণতন্ত্রের ধারা এবং এদেশের মানুষের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার অধিকার রক্ষায় সর্বশক্তি দিয়ে রাজপথে থাকবে।’

শুধু বিএনপি জামায়াত নয়, আন্তর্জাতিক ও জাতীয়ভাবে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে চায় উল্লেখ করে সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন, ‘আপনাদের প্রতি যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই যুবলীগ দিয়ে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের আমরা নির্মূল করার জন্য প্রস্তুত আছি, আছেন কিনা বলেন, হাত তোলেন। আপনারা বলেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা বিরোধীদের নির্মূল করবো। আজকে এদেশের স্বাধীনতা নস্যাৎ করার জন্য জন্য বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী শুধু নয়, আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় যে শত্রু, যারা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, সমস্ত অপকর্মের নায়ক সেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অপশক্তি তারা এখন শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে চায়। তারা বলতে চায়, শেখ হাসিনাকে তারা টেনে-হেঁচড়ে নামাবে। আওয়ামী লীগের শেকড় কেটে দেবে। আওয়ামী লীগের শেকড় জনগণের হৃদয়ে পতিত। এই শেকড় উপড়ে ফেলানো যায় না। এই শেকড় এত গভীরে, যা কখনই কেউ উপড়ে ফেলতে পারে নাই। বিগত দিনেও পারে নাই। আজকেও পারবে না।’

সম্মেলনে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘একাত্তর সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আপনারা জানেন। যারা নতুন তারা শুনেছেন। এই রংপুর শহরে প্রথম শহীদ হয়েছে সংশু সমোজদার। যুদ্ধ আমরা করেছি তখন। সেই পরাজিত শক্তির প্রতিভূ, সেই ভুত যাদের শরীরে, তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সেই শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত হয়ে সেই শক্তি আবার মাঠে নেমেছে। এখন আমাদের এই কথা বলা দরকার, যে আরেকটা যুদ্ধের প্রয়োজন আমাদের। এখন আরেকবার যুদ্ধে যেতে হবে সেই পরাজিত শক্তিকে আবার পরাজিত করতে।’

বিএনপি পাকিস্তানে ফিরে যেতে চায় উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা শুনেছেন, চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছে সেই বিএনপি। সেখানে বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, পাকিস্তান নাকি তাদের কাছে ভালো ছিল। এই যে কথা এটাই তাদের ভেতরের কথা। তারা পাকিস্তানে ফিরে যেতে চায়। সে জন্য আমি আহ্বান জানাতে চাই যুব সমাজকে, যুবলীগের এই সম্মেলন থেকে আরেকটা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এই পরাজিত শক্তি নিশ্চিহ্ন করতে হবে। বারবার তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।’

রংপুরে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে বিএনপির গণসমাবেশের চেয়ে ১০ গুণ বেশি গণজমায়েত করার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে কাউনিয়া-পীরগাছা আসনের সংসদ সদস্য টিপু মুনশি বলেন, ‘আরেকটা চ্যালেঞ্জ করে এই মঞ্চ থেকে বিদায় নিতে চাই। তারা (বিএনপি) এখানে (রংপুরে) মহাসমাবেশ করেছিলেন। রংপুর বিভাগের আট জেলার তাদের দলের লোক নিয়ে মহাসমাবেশ। আজকের এই সম্মেলন (যুবলীগের) তার ছোট্ট একটা চ্যালেঞ্জ ছেড়েছি। আর বড় চ্যালেঞ্জটা দিয়ে যাই, তারা যত জনসমাবেশ করতে চেয়েছেন আট জেলা নিয়ে। আমরাও একটা মহাসমাবেশ করবো। ইনশাআল্লাহ সেখানে থেকে ১০ গুন লোক এই রংপুর শহরে আসবেন সেদিন। সেদিন দেখিয়ে দিবো। এই বাংলাদেশ এই রংপুর, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রংপুর।’

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এ কে এম আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট হোসনে আরা ডালিয়া, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক বাবু তুষার কান্তি মণ্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ কে এম ছায়াৎ হোসেন বকুল। বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সোহেল পারভেজ, সহ-সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ প্রমুখ।

এই সম্মেলনে ২৩ জন সভাপতি এবং ১৮ জন সাধারণ সম্পাদক পদে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখার সময় (রাত পৌনে ৭টা) পর্যন্ত রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দ্বিতীয় অধিবেশন চলছিল।