১৭ ঘণ্টা ডিউটি করে সদস্যদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত : ডিএমপি কমিশনার

আপডেট: নভেম্বর ৮, ২০২১
0

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, পুলিশ সদস্যদের নিয়ে গণমাধ্যমে মাঝে-মধ্যে তথ্যের বিভ্রাট ঘটে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বেরিয়েছে যে পুলিশের সদস্যদের ১৬/১৭ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই তারা বিরক্ত। ডিএমপির একজন কনস্টেবলের বক্তব্য দেওয়া হয়। যেখানে তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন, পুলিশে আসলে উন্নত জীবন পাবেন, সে জীবন পাননি। বাহিনী বেআইনি খাতে টাকা নিচ্ছে। ব্যাংকের জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ১৭/১৮ ঘণ্টা ডিউটি করেন একজন কনস্টেবল। আপনাদের (সাংবাদিকদের) কি ধারণা? ডিএমপি কমিশনার দুই ঘণ্টা ডিউটি করে? আমাদের তো ঘুমের সময় নাই, খাওয়ার সময় নাই। আমরা যখন চাকরিতে এসেছি, তখন জেনে শুনে বুঝেই এসেছি। ২৪ ঘণ্টা ডিউটির বাহিনীতে আমি ১৭ ঘণ্টা ডিউটি করছি। ২৪ ঘণ্টাই যে ডিউটি করানো হচ্ছে না, এটার জন্য পুলিশ সদস্যদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। পুলিশে চাকরি করে ৯টা-৫টা অফিস সম্ভব না।

ওয়ালটন গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হতে যাচ্ছে ক্র্যাব-ওয়ালটন ক্রীড়া উৎসব-২০২১। সোমবার (৮ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি চত্বরে ক্রীড়া উৎসবের উদ্বোধন করা হয়, সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপের সিনিয়র নির্বাহী পরিচালক এফ এম ইকবাল বিন আনোয়ার ডন, ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফ। ক্র্যাবের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাইফ বাবলুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্র্যাবের সভাপতি মিজান মালিক।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমি বলছি ডিএমপির কোনো সদস্যের কাছ থেকে একটি পয়সাও কর্তন করা হয়নি। অথচ একজন কনস্টেবলের বরাতে নিউজ করা হলো।

তিনি বলেন, ওই নিউজের পর আমি দুই ঘণ্টা ফোর্সের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। জানতে চেয়েছি, তোমরা যখন চাকরিতে এসেছ তখন জেলায় কতজন আবেদন করেছিল? কেউ কেউ বলেছে তিন হাজার। সেখানে চাকরি হয়েছে কতজনের? ৩০ জন। তোমাদের কি জোর করে চাকরিতে আনা হয়েছিল? বলে, না স্যার আনা হয়নি। উন্নত জীবন আশা করছিলা, কিন্তু পাও নাই। উন্নত জীবন যেখানে পাও আবেদন করো, সম্মানের সঙ্গে চাকরি থেকে তোমাদের বিদায় করে দেব।

কমিশনার বলেন, এসএসসি পাস করে পুলিশে এসেছ। পায়ের জুতা থেকে শুরু করে মাথার টুপি পর্যন্ত সরকার বিনা পয়সায় দিচ্ছে। বিনা পয়সায় খাচ্ছ, ব্যারাকে বিনা পয়সায় থাকছ, আবার সরকার তোমাকে বাসা ভাড়াও দিচ্ছে। তুমি যেখানে যাচ্ছ সেখানে গাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে, খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। হ্যাঁ, মানসিক চাপ আছে। কাজ করতে গেলে এ চাপ-পরিশ্রম পুলিশে থাকে।

মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, সবকিছু মিলিয়ে আমাদের পুলিশে এসেই কনস্টেবল বেতন পাচ্ছে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু এ ধরনের নিউজ তথ্যের বিভ্রাট ঘটায়। যা যুক্তিসঙ্গত কাজ না। এ ধরনের নিউজের ক্ষেত্রে ডিএমপির রেফারেন্স দিতে হলে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেই করা উচিত।

তিনি বলেন, আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন, মানুষের কল্যাণের জন্য যদি কিছু করতে চাই, তবে যেকোনো পজিশন থেকেই করা সম্ভব। আমরা যারা সরকারি চাকরি করি, তা জনগণের কল্যাণের জন্যই। চাকরিতে ঢুকলে বেতন এমনি এমনি হয়, কাজ তো কিছু করার লাগবে না। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে এ মানসিকতা বদলাতে হবে। সম্মানবোধের সঙ্গে নিজের দায়িত্বটা পালন করতে হবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রধান বলেন, সাংবাদিকরা যদি না থাকতেন তাহলে সরকারি চাকরি যে কি মজার হতো। আমরা চাই না এ চাকরি মজার হোক। আমরা চাই জবাবদিহিতা।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, সাংবাদিকতার জায়গাটা জবাবদিহিতার। আমার মতো কমিশনারের দায়কেও জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে এসেছেন সাংবাদিকরা। আমি যদি সত্যি মানুষের জন্য, কল্যাণের জন্য কাজ করতে চাই তাহলে আমার আসলে চুরি করার কিছু নেই, অবকাশেরও কিছু নেই। সাংবাদিক-পুলিশ আমরা সবাই পারস্পারিক সহযোগী হয়ে মানুষের পাশে থাকব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন, প্লানিং অ্যান্ড মিডিয়া) হায়দার আলী খান বলেন, আমাদের সঙ্গে একিভূতভাবে জড়িত সাংবাদিকরা। আমাদের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান হয়। এর মাধ্যমে আমরা সত্যকে উপস্থাপন করি।

তিনি বলেন, সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে যে তথ্যের বিকৃতি ঘটে না, তা নয়। মাঝে মধ্যে ঘটে। আমরা অনুরোধ করব, সঠিক তথ্য যেন যাচাই-বাছাই করে উপস্থাপন করা হয়। লেখনির মাধ্যমে জাতির বড় ক্ষতিও হতে পারে। ফেসবুকে অনেক বিকৃত তথ্য ও ছবি বিকৃত করে প্রচার করা হয়৷ আমরা যারা মিডিয়ায় কাজ করি তাদের উচিত নৈতিকভাবে যৌক্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করা।

হায়দার আলী খান বলেন, পুলিশ সদস্য হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, আধুনিক পুলিশ গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। উন্নত দেশের উন্নত পুলিশ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন আইজিপি বেনজীর আহমেদ। আমরা পুলিশ-সাংবাদিক সবাই দেশকে ভালোবাসি, দেশের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে কাজ করব। বাংলাদেশ যেন উন্নত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সেজন্য কাজ করি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ বলেন, মহৎ পেশা সাংবাদিকতায় আপনারা নিয়োজিত। প্রত্যেক সাংবাদিকই মানবাধিকার কর্মী।

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বৈশ্বিকভাবেই বিপর্যস্ত অবস্থা। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ন্যায় ফ্রন্টলাইনার হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন সাংবাদিকরা। আমাদের সঙ্গে সাংবাদিকদের সম্পর্ক গভীর। পুলিশের মিডিয়া উইং এখন অনেক শক্তিশালী। আমাদের নিজেদের মধ্যে দূরত্ব থাকা উচিত না। সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে। এটা যেমন আশার দিক তেমনি গভীর উদ্বেগের বিষয় আছে গুজবের কারণে। সেদিক বিবেচনায় সাংবাদিকদের আরও বেশি যত্নশীল ও সচেতনভাবে সংবাদ পরিবেশনে অনুরোধ জানান তিনি।