১৮৫০সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে প্রথম মুসলিম নারী চিকিৎক রুফাইদা যুদ্ধাহতদের সেবা করেছিলেন

আপডেট: মার্চ ৮, ২০২১
0

ডেস্ক রিপোর্ট:

শুধুমাত্র যুদ্ধাহতদের সেবায় তিনি নিজেকে নিমগ্ন রাখেননি। বরং স্বাভাবিক পরিস্থিতির সময়ও তিনি অসহায়, অভাবী ও রোগীদের সেবা করতেন। নিজের সম্পদ ও অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা সেবা দিতেন সবাইকে। চিকিৎসা ও রোগীর সেবায় তিনি ছিলেন অনন্য মর্যাদার একজন মহীয়ষী নারী। তাকে দেখে অনেক নারী সাহাবিও চিকিৎসাবিদ্যায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।

রুফাইদা(রা:) ইসলামী ইতিহাসে এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। তার সম্মানে আগা খান বিশ্ববিদ্যালয় একটি নার্সিং কলেজ স্থাপন করেছে।

চিকিৎসা সেবায় নিবেদিত প্রথম মুসলিম নারী সাহাবি ‘রুফাইদা-আল-আসলামিয়া(রা:)।
অনেকেই আধুনিক নার্সিং বা রোগীসেবার জনক হিসেবে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলকে চিনে। ১৮৫০ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহতদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন তিনি। নার্সদের প্রশিক্ষণসহ নানা রকম সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করে বিখ্যাত হয়ে উঠেন। মানবসেবায় অমর হন তিনি।

কিন্তু তারও হাজার বছর আগে মদিনার আনসারদের মধ্যে এক নারী রোগীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি হলেন, প্রখ্যাত নারী সাহাবি রুফাইদা আল আসলামিয়া (রা.)। যুদ্ধের প্রাঙ্গণে আহতদের সেবায় নিজ তাবুতে ‘খিমাতু রুফাইদা’ নামে তৈরি করেন একটি অস্থায়ী হাসপাতাল।

খাজরাজ গোত্রের শাখা আসলাম গোত্রের সন্তান রুফাইদা আল আসলামিয়া। তিনি ৬২০ খৃষ্টাব্দে মদিনায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন মদিনায় প্রথম পর্যায়ে ইসলাম গ্রহনকারীদের অন্যতম। রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। তার পিতা আসলাম (রা.) চিকিৎসাবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। তার থেকে চিকিৎসাসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। প্রথম মুসলিম চিকিৎসা সেবিকা হিসেবে মনে করা হয় তাকে। চিকিৎসা বিদ্যায় অধিক ব্যুৎপত্তি অর্জন করায় রাসুল (সা.) আহত সৈনিকদের তার কাছে চিকিৎসার জন্য পাঠাতেন।

মাহমুদ ইবনে লাবিদ (রহ:) থেকে বর্ণিত, খন্দকের যুদ্ধের দিন সাআদ বিন মুআজ (রা:) এর চোখে আঘাত লেগে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে রুফাইদা নামক এক নারীর কাছে পাঠানো হয়। তিনি আহতের চিকিৎসা করতেন। নবী (সা:) সকাল-সন্ধ্যায় সাআদ (রা:) এর কাছ দিয়ে যেতে জিজ্ঞেস করতেন, তোমার দিন কেমন কাটল, তোমার রাত কেমন কাটল? তিনি তাকে (নিজ অবস্থা) অবহিত করতেন। (আদবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১৩৯)
খাইবারের যুদ্ধের দিন রাসুল(সা:) যখন যুদ্ধযাত্রার জন্য তৈরি হচ্ছেন, তখন রুফাইদা ও তার নারী সাহাবিরা এসে আহত ও মুসলমানদের সাহায্য করার জন্য যুদ্ধে যেতে চান। আমাদের প্রিয় নবী (সা:) অনুমতি দিলে যুদ্ধক্ষেত্রে স্থাপিত হয় ‘খিমাতু রুফাইদা’।
খায়বার যুদ্ধে আহত মুসলিম যোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় তার অবদান অনস্বীকার্য। তার এই অবিস্মরণীয় ত্যাগ এবং সেবা-শুশ্রূষার স্বীকৃতিস্বরূপ রাসুল (সা:) পুরুষ মুজাহিদদের মতো তাকেও গণিমতের সম্পদের অংশ দেন।

রুফাইদা আল আসলামির সম্মানে বাহরাইনের রয়েল কলেজ অব সার্জন ইন আয়ারল্যান্ডের শিক্ষার্থীদের `Rufaida Al-Aslamia Prize in Nursing’ প্রদান করা হয়। নার্সিং মেডিকেল শিক্ষার্থীদের রোগীসেবার ওপর ভিত্তি করে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
রুফাইদা জানতেন, সেবার মাধ্যমে আল্লাহ তায়লার সংস্পর্শ পাওয়া যায়। তাই সেই পথেই তিনি হেঁটে গিয়েছেন আজীবন।
সুত্র:- সৌদি গেজেট।