১৮ কোটি মানুষের দেশে মজুদ রয়েছে ৫০ লক্ষ : দুর্নীতি -চুরি লুটপাটে টিকা কূটনীতিতেও ব্যর্থ সরকার -খন্দকার মোশাররফ

আপডেট: জুলাই ৫, ২০২১
0

ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ এবং চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে করোনার ভ্যাকসিন আমদানি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হলো দূর্নীতি, চুরির জন্য টিকা কূটনীতিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

করোনা পরিস্থিতি-ভ্যাক্সিন সংগ্রহ ও বিতরণ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন ,বাংলাদেশে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিগত এক সপ্তাহ যাবত কোভিড-১৯ এ মৃত্যু সংখ্যা ১০০ এর উপরে এবং শনাক্তের হার প্রায় ২৮ শতাংশে পৌঁছেছে। সরকার ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এর পূর্বে সরকারের অব্যবস্থা, দায়িত্বহীনতা ও উদাসিনতার কারনে সরকারের লকডাউন তামাশায় পরিণত হয়েছিল। ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর বিএনপিসহ বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলেও তা কার্যকর করা হয়নি। ফলে বর্তমানে সীমান্ত জেলাসহ সমগ্র বাংলাদেশে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। গত বছর করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বিএনপিসহ বিভিন্ন মহল সতর্ক করার পরও সরকার কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল, আইসিইউ, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটরসহ চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণ করেনি। সরকারি ১০০ হাসপাতালের ৫২টিতে এবং ৩৫টি জেলার সদর হাসপাতালে কোনো আইসিইউ সুবিধা নেই। হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার অভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর খবর প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে। এ সকল সুবিধা সৃষ্টির দাবি করে বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ও জেলা সিভিল সার্জনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার কোনো কর্ণপাত করেনি। বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন মহলের তাগিদ স্বত্তে¡ও সরকার করোনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও করেনি। বরং সরকার করোনা পরীক্ষা নিয়ে নজিরহিবীন দূর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে দেশে সামগ্রিকভাবে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ (যুগান্তর, ২৮-৬-২০২১) মানুষ। সারাবিশ^ যখন করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভাবে টিকা প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তখন সরকার একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা প্রদান ও একটি দেশকে খুশি করার জন্য চীনের প্রস্তাবকে উপেক্ষা করে একটি মাত্র উৎস থেকে টিকা আমদানির পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশে ভ্যাকসিন সংকট সৃষ্টি করে দেশের জনগণকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বিশে^র যে সব দেশ ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, সে সব দেশে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা প্রদান করতে সমর্থ হয়েছে। তাই বিশ^ ব্যাপী প্রমাণিত যে, করোনা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি শুধুমাত্র টিকা প্রদানের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে সরকারের টিকা কুটনীতিতে চরম ব্যর্থতা, টিকা ক্রয়ে অনিয়ম, লোভ ও হঠকারিতার কারনে দেশে টিকাদান শুরুর পর থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন মাত্র ৪২ লাখ ৮১ হাজার ৭৭৬ জন।

এ হিসেবে গত ৬ মাসে মাত্র ২.৫ (আড়াই) শতাংশের বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত জনসংখ্যার তুলনায় অতি সামান্য সংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে তাতেও বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত ‘অগ্রাধিকার’ তালিকা অনুসরণ করা হয়নি। সরকারের অস্বচ্ছতা, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ফলে টিকা সংগ্রহের বিষয় অনিশ্চয়তা জনমনে হতাশা, উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

টিকা সংগ্রহ বা প্রাপ্তির বিষয়ে স্বয়ং পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন শত চেষ্টা করেও টিকা প্রাপ্তির কোনো সমাধান না হওয়ায় সাংবাদিকদের বলেছেন, “বড় বড় পন্ডিতরা টিকার বিষয়ে কত কি বলছে। আদতে তারা মুলা দেখাচ্ছে” (মানবজমিন, অনলাইন, ২২ জুন ২০২১)।

সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের জন্য চুক্তি করেছিলেন এবং টিকার সম্পূর্ণ মূল্য অগ্রিম প্রদান করেছিল। কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউট ২ দফায় ৭০ লাখ ডোজ সরবরাহের পর বন্ধ করে দেয়ায় অ্যাস্ট্রাজেনেকারের দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। গত ১ জুলাই কোভেক্স থেকে আসা ফাইজার এবং চীনের উপহার সিনোফার্মের সীমিত টিকা নিয়ে সরকার লোক দেখানো গণটিকা দান কর্মসূচি শুরু করেছে। ফাইজারের টিকা শুধুমাত্র ৭টি কেন্দ্রে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সরকারের অব্যবস্থার কারনে প্রথম দিনেই ফাইজারের টিকা না পেয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর সামনে প্রবাসীরা বিক্ষোভ করেছে।

এ সপ্তাহে প্রাপ্ত সিনোফার্মের ২০ লাখ এবং মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকাসহ এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে দেশে টিকা এসেছে ১ কোটি ৫৯ লাখ ডোজের বেশি। বর্তমানে দেশে মাত্র ৫০ লাখের ডোজের বেশি টিকার মজুত আছে। অদুর ভবিষ্যতে টিকা সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। ১৮ কোটি মানুষের দেশে উল্লেখিত সংখ্যাক টিকা কত অপ্রতুল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন মহল দেশের জনগণকে মিথ্যা আশ^াস দিয়ে এক মহা বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বাজেট অধিবেশনের সমাপ্তি দিবসে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “যত টিকা লাগে, কেনা হবে”।

কিন্তু কোথা থেকে ক্রয় করা হবে, কবে নাগাদ ক্রয় করা হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখেন নাই।
কোভিড-১৯ অতিমারির শুরু থেকে সরকারের রাখঢাকা, সমন্বয়হীনতা, অতিকথন ও দূর্নীতি জনগণকে হতাশ করেছে, ক্ষুব্ধ করেছে এবং সরকার ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের জীবন ও জীবিকা চরম হুমকির সম্মুখিন হয়েছে। ভ্যাকসিন নিয়ে লুকোচুরি ও ভ্যাকসিন সংগ্রহে সরকারের ব্যর্থতার ফলে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে।

এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বর্তমান করোনা পরিস্থিতি, টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে অনিশ্চয়তা ও স্বেচ্ছাচারিতা এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং সরকারের উদাশিনতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। করোনা মোকাবেলায় সরকারের পরিকল্পনা, টিকা সংগ্রহের রোডম্যাপ এবং টিকাদান কর্মসূচির ভবিষ্যত পদক্ষেপ সম্পর্কে সকল তথ্য জনগণের সামনে উপস্থাপনের দাবি জানাচ্ছে। বিএনপি বিশ^াস করে, দেশের জনসংখ্যার ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে অতিশীঘ্র টিকা প্রদানের মাধ্যমেই একমাত্র করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে সরকারকে পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং জনগণকে তা অবহিত করতে হবে।