”৪২ বছরেও পাইনি গঙ্গার হিস্যা : ৫৪ অভিন্ন নদীর মধ্যে ৫২টিতেই বাঁধ দিয়েছে ভারত ”

আপডেট: মে ১৬, ২০২১
0

ঈদের সময় মহিলারা ঝুলে ঝুলে বাড়ী যায় এতবড় অন্যায় কোনদিন হয় নাই : ডা.
জাফরুল্লাহ চৌধুরী

আজ ১৬ মে, রবিবার দুপুরে ” ফারাক্কা দিবস” ( মজলুম জননেতা মওলানা
ভাসানীর ফারাক্কা অভিমূখে লং মার্চ) উপলক্ষে ভার্চুয়াল নাগরিক আলোচনা
অনুষ্ঠিত হয়। ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্য
কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ভার্চূয়াল
নাগরিক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয়
কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর পরিচালনায় ভার্চুয়াল নাগরিক আলোচনা
সভায় দেশ বিদেশ হতে বক্তব্য রাখেন – ভাসানী অনুসারী পরিষদের নির্বাহী
চেয়ারম্যান, পরিবেশবিদ ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য
অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন আহমেদ ( কানাডা), জাতিসংঘের সাবেক পানি বিশেষজ্ঞ
ড. এস আই খান, জাতিসংঘের SCAP সাবেক অর্থনৈতিক পরিচালক ও অস্ট্রেলিয়ার
ওয়েস্টার্ন ও সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী,
ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের
সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী ইমাম (নিউয়র্ক), মশিউর রহমান জাদুর কন্যা রিটা
রহমান (নিউয়র্ক), নিউনেশন পত্রিকার সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার,
ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি
আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল
হক নূর, রাষ্ট্র চিন্তার এডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, পানি বিশেষজ্ঞ ম
ইনামুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার সাদিয়া
আরমান প্রমূখ।

তিস্তা এখন লালমনিরহাট এলাকাবাসীর দু:খের কারন বললেন সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন

সভাপতির বক্তব্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন , “বিভিন্ন সময়ে যারা
আমরা মওলানা ভাসানীর ভারতের আগ্রাসন এ নির্মমতা নিয়ে আন্দোলনে যুক্ত
ছিলেন তারা আজ ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ করায় আমি আপনাদের সবাইকে সাধুবাদ
জানাই। আজ আমি বলতে চাই, ” মওলানা ভাসানী নিজের দেশের সংস্কৃতি, স্বার্থ
নিয়ে মজলুম জনগনের সমস্যা নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। অন্যদিকে পৃথিবীর
যায়গায় অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছেন। আজ অন্তরে মাওলানাকে
ধারণ করে আমরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি”। তিনি আরো বলেন, ” গত
কয়েকদিন যাবত গাঁজায় শিশু ও মানুষ হত্যা, নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা চলছে
আমরা কিছুই প্রতিবাদে করতে পারিনাই এবং অন্তত একটা সিম্বলিক প্রতিবাদ ও
করি নাই”। মুসলিম রাষ্ট্র কেউ কেউ ইহুদিদের নির্মতায় নিরব, এসময়ে যদি
মুসলিম রাষ্ট্রের নিজেদের ঝড়গা ভুলে গিয়ে এক হয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে
রুখে দাঁড়ানোর ও দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া যেত ।

তাদের হাতে শিশু ও সংবাদ
মিডিয়া তারা কাউকে বাদ দেয় নাই”। আলোচকদের উদ্দেশ্য তিনি আরো বলেন,
ইসরাইলের মদদ দাতা ভারত আর `র`। মোসাইদের যন্ত্রপাতি অস্ত্র কারা
ব্যবহার করছে এ ব্যাপারে কেউ প্রশ্ন তুলছেন না। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
বলেন , “কেবল ফারাক্কা পানি নয় নানাভাবে অন্যায় অবিচারের মূল সূত্র
জনবিচ্ছিন্ন সরকার ক্ষমতায়। ঈদের আগে গণ পরিবহন বন্ধ রাখা ছিল ভুল
সিদ্ধান্ত। এতে মানুষের কষ্ট হয়েছে।মানুষ সরকারের ভুলে অবর্ণনীয় কষ্ট
ভোগ করছে। ঈদের সময় মহিলারা ঝুলে ঝুলে বাড়ী যায় এতবড় অন্যায়
কোনদিন হয় নাই। সরকারকে বলছি আপনারা ভুল করছেন। ভুলের পর ভুল করছেন।
সরকারের উচিৎ হবে ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট বাস ট্রেন চালু করা ও বিনা পয়সায়
ঢাকায় ফেরানোর ব্যবস্থা করা। এবং ঢাকায় ফেরা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য
টেস্টের ব্যবস্থা করা। তাহলে মাওলানা ভাসানীর মতো মহানুভবতার পরিচয়
দেওয়া হবে।

আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির সভাপতি ,পরিবেশবিদ, জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন আহমেদ কানাডা
হতে যুক্ত হয়ে বলেন, ১৯৭৬ সালে ১৬ মে মাসে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল
হামিদ খান ভাসানীর ফারাক্কা লং মার্চের আগে বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক বা
পরিবেশবিদ ফারাক্কার ভয়াভয়তা নিয়ে কোন কথা বলেন নাই। দূরদর্শি মওলানা
মনে করতেন ভারত শুধু এখন শুধু ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে শুধু আমাদের
পানি বন্ধ করবেনা ভবিষ্যতে অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদী গুলিতে বাঁধ দিয়ে
পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিনত করবে।

তিনি লং মার্চের
আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের কাছে ফারাক্কা ভয়াভয়তা
নিয়ে চিঠি লিখেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকেও চিটি দিয়ে
বলেন বাংলাদেশে সফর করে ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশ মরুভূমিতে পরিনত
হচ্ছে তার দেখার জন্য। সাবেক ভিসি বলেন, আমি বর্তমানে ফারাক্কা
আন্তর্জাতিক কমিটির সভাপতি আমরা অতীতের মত আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টির
চেষ্টা করছি। তাই আজকে বাংলাদেশে ১৬ মে ‘ফারাক্কা দিবস‘ পালনের মাধ্যমে
মওলানা ভাসানীর ‌অসমাপ্ত কাজকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। নতুন প্রজন্ম
জাগ্রত হবে ।

জাতিসংঘের সাবেক পানি বিশেষজ্ঞ ড. এস আই খান বলেন, “একটা দেশ সবাধিন হতে
পারে, কিন্তু নিজস্ব সম্পদের উপর অধিকার না থাকলে সে দেশ সার্বভঊম নয়।
গঙ্গা নদীর পানি পুরোতা ভারতের নয়, কিন্তু ভারত পানির উপর একচ্ছত্র
অধিকার ভোগ করতে চায়। বন্যার সময় প্রতি সেঙ্কেন্দে ২৭ লক্ষ কিউবিক ফিট
পানি প্রবাহিত হতো। ২০০১ সালে রাজশাহির মানুষ পায়ে হেঁটে নদী পারতো হতে
পারত্তো। বছরে ৫৫অ বিলিওন কিউবিক মিটার পানি আসতো আগে আর এখন মাসে মাত্র
৫০ বিলিওন। কাজেই পার্থক্য টা স্পষ্ট ।

নদীতে প্রবাহ না থাকায় উপকূলীয়
অঞ্চলের পানি লবণাক্ত হয়ে যাচ্ছে। অথচ যে পানি ভারতে আছে টার ১৫ শতাংশ
পানিই ভারতের জন্য যথেষ্ট। অথচ তারা বাংলাদেশকে পানি শুন্য মরার
পরিকল্পনা নিয়েছে। ৫৪ টা অভিন্ন নদীর মধ্যে ৫২ নদীতেই ভারত বাঁধ দিয়েছে।
কাজেই বাংলাদেশকে পানিশূন্য করাই তাদের উদ্দেশ্য। আমাদের একটিই পথ খোলা
আছে জনমত তৈরি করে , আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করে ন্যায্য পানি আদায় করে
নেওয়া। নদী একটি প্রাকৃতিক সত্তা। বাঁধ দিয়ে এর প্রবাহ নষ্ট করা যাবে
না”।

দৈনিক নিউ নেশন সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, সময়টা হোলো
সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্টের সময় । এখন বাঁধ দিয়ে পানি আটকিয়ে রাখা যাবে
না। আমাদের চিৎকার করে দাবি করতে হবে । তাহলে সবাই জানতে পারবে। কোন
সরকারই সর্বশেষ সরকার নয়। ফারাক্কার লং মার্চ সবাই সমর্থন করেছিল। সেটার
যৌকিকতা এখন ফুরিয়ে যায় নি।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু তার বক্তব্যে
বলেন,লক্ষ লক্ষ মানুষ সেদিন একত্র হয়েছিল ভাসানির ডাকে। আমি সেদিন খুবই
অভিভুত হয়েছিলাম । স্থানীয় লোকজনও আমাদের সাথে অংশগ্রহণ করেছিল। খাদ্য,
পানি নিয়ে স্থানীয় লোকজন আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল । জিয়াউর রহমানের
উদ্যোগে সে সময় ভারত একটি চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু ভারত আজ
আমাদের চুক্তি অনুযায়ী পানি দেয় না। মাওলানা ভাসানি আমাদের মহান নেতা।
তিনি আমাদের পানির জন্য লড়াই করার শিক্ষা দিয়ে গেছেন। আমারা লড়ে যাবো।
মায়ের দুধের উপর সন্তানের যে অধিকার, নদীর পানির উপরও আমাদের সেই অধিকার।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ২০১৪ সালে আমরা
তিস্তা অভিমুখে রোডমার্চ করেছিলাম। এর আগেও হয়েছিল। কাজেই এই আন্দলন
অব্বাহত আছে। টিপাইমুখ বাধের সময়ও আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দলন করেছি। এই
আন্দোলন গুলো বাংলাদেশে আছে। নদিতে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে
দেওয়ার এই পরিকল্পনা ব্রিটিশ আমল থেকেই ছিলো। তখনও বাঙ্গালী প্রকৌশ্লীরা
বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু ৪৭ এর পর তারাই আবার এতাকে রাজনৈতিক কারণে
সমরথন দিয়েছে। নদীর সবাভাবিক প্রবাহ নদীকে রক্ষা করার জন্য যেমন প্রয়োজন,
নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী মানুষের জন্যও প্রয়োজন। ভারত খোঁড়া যুক্তি
দেখিয়ে আমাদের পানি আটকিয়ে রেখেছে। কাজেই এর সমাধান তাদেরকেই করতে হবে।
বাংলাদেশের এখানে কিছুর করার নেই। নদীর পানি পাওার অধিকার আমাদের
প্রাকৃতিক অধিকার। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে আমরা পাচ্ছি না। রাজনৈতিক ভাবেই
এতাকে মকাবেলা করতে হবে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর বলেন, ভাসানির মতো একজন মজলুম জননেতা আজ
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দরকার । ভারত আমাদের বন্ধু হলেও তাদের আচরণ বন্ধু
সুলভ নয়। ভারতের কারনে আমাদের পরিবেশ চরম ভাবে ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে।
দক্ষিনাঞ্চলের পানি লবণাক্ত হয়ে পরছে। কোন সরকারই ভারতের সাথে সমস্যা
নিরসনে পদক্ষেপ নেয় নি। আপনারা সবাই জানেন উত্তরাঞ্চল মরুভুমিতে পরিনত
হচ্ছে। এমন কি সুন্দরবনের পাশে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে
পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে।

রাষ্ট্র চিন্তার সদস্য এডভোকেট হাসনাত কাইউম বলেন, ১৯৯০ সালেই জাতিসংঘ
একটি কমিশন করেছিল ভাটির দেশের পানি পাবার জন্য। এ বিষয়ে একটি আইনও
হয়েছিল। ভাটির দেশ গুলো কিভাবে পানি ব্যবহার করবে সে বিষয়ে স্পষ্ট
কনভেনশন আছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো সেখানে স্বাক্ষর করে নি। এছাড়া
বাংলাদেশ উজানের দেশ গুলোর সাথে বার্গেইন করতে পারতাম। কিন্তু বাংলদেশ
সরকার কোন পদক্ষেপই নেয় নি। ভারতকে সব নদী, সাগর, উপকূলের সার্বভৌমতব
দিয়ে দিয়েছে। আমারা ভাটির দেশ হিসেবে অনেক ক্ষয় ক্ষতির শিকার হচ্ছি।
কিন্তু সেগুলোর কোন হিসাব রাখা হচ্ছে না ।