৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা আমি : আমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনের মামলায়ও রিমান্ড চায় কি অমানবিকতা —- সংবাদ সম্মেলনে মাহি

আপডেট: মার্চ ১৯, ২০২৩
0
গাজীপুর ঃ কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।

কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সংবাদ সম্মেলনে মাহি


স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর :
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর রাতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। শনিবার রাতে জামিনে মুক্তিলাভ করে কারা ফটক থেকে বের হয়ে স্বজনদের সঙ্গে চলে যান গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পাশে তার স্বামী রকিব সরকারের ‘সনি রাজ কার সেন্টার’ এ। ওই সেন্টারের সামনে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মাহিয়া মাহি বলেন, আমি সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে জানাতে চাই। আমি কিন্তু পুলিশ নিয়ে কোনও কথা বলিনি। আমার সারাজীবনে অনেক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। আমি সামনে থেকে পুলিশ প্রধানকে দেখেছি, বিভিন্ন ফোর্সের প্রধানদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা খুবই নাইস, তারা জানেন মানুষকে কীভাবে রেসপেক্ট করতে হয়, তারা অনেক অনেস্ট। আমি শুধু একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলেছি, যিনি মোল্যা নজরুল ইসলাম। আমি পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলিনি। এসময় তিনি তার স্বামীর জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভূমিকা বিতর্কিত বলে সমালোচনা করেন।

এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি ফেসবুক লাইভে পুলিশ কমিশনারের দেড় কোটি টাকার নেয়ার বিষয়ে সঠিক কোন ব্যাখা করতে পারেননি। তিনি বলেন, সব সময় সব ঘটনার প্রমাণ থাকে না। এরপর মাহি গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে নিয়ে লাইভ করার বিষয়টি আমার উচিত হয়নি। একজন পুলিশ কমিশনার আমাদের পুলিশ প্রশাসনকে রিপ্রেজেন্ট করেন। এভাবে লাইভে আমার বলাটা বাংলাদেশের পুরো পুলিশ প্রশাসনকে বিতর্কিত করেছে হয়তো। আমি সেটার জন্য দুঃখিত, আমি দূঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু আমি যে দেড় কোটি টাকার কথা বলেছি, সেটা নিয়ে তদন্ত হবে। আমি যদি অন্যায় বলে থাকি, তাহলে যে শাস্তি দেয়া হবে তা আমি মাথা পেতে নিব। টাকার বিষয়টি প্রতিপক্ষের ইসমাইল হোসেন লাদেনই সবাইকে বলেছে, যখন পুলিশ আমার জিডি নেয় নি। তবে আমি যেটা বলেছি, তা লাইভে বলে ভুল করেছি। আমি সেটার জন্য দেশবাসির কাছে সরি, পুলিশ প্রশাসনের কাছে সরি।

আমি কোনো রাষ্ট্রদ্রোহী না :
তিনি বলেন, আমি কোনো রাষ্ট্রদ্রোহী না আমি কেবলমাত্র একজনের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। সে ডিজিটাল আইনে মামলা করেছে। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। কারাগার পর্যন্ত পৌঁছানো সারাদিনের আমার যে জার্নিটা, আমি একজন নোওন ফেইস হওয়ার পরও আমার সঙ্গে যে নির্যাতন হয়েছে এতে আমি ভীত সন্ত্রস্ত। এতো বড় গাড়ীতে করে আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল, আমি বার বার বলতেছিলাম আমি একজন ৯মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারী। আমার শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। তারা কোন তোয়াক্কা করে নি। বরং পুলিশ সদস্যরা আমাকে বলেছে, এভাবেই যেতে হবে। আমি পানি চাচ্চিছলাম। একটু পানি দিতে তাদের এক ঘন্টা লেগেছে। আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। একজন প্রেগন্যান্ট নারী হিসেবে আমাকে সামান্য মানবিকতাটকু পর্যন্ত দেখানো হয়নি।

মনে হয়েছে আমি একজন যুদ্ধাপরাধী :

আমাকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তারের পর থেকে গাজীপুরের পুলিশ যে ব্যবহার করেছে সেই অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। বিচারের আশায় আমি গত একমাস ধরে ঘুরছি, সব জায়গায় অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু আমি বিচার পাই নি। বরং আমি অভিযোগ করার পর সে আরও বেপরোয়া হয়ে গেছে। বেপরোয়া হওয়ায় ৯মাসের একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে এয়ারপোর্ট থেকে ধরে নিয়ে এসেছে। তাদের ব্যবহার দেখে মনে হয়েছে আমি একজন যুদ্ধাপরাধী। আমার মামাসহ স্ব্বজনরা এয়ারপোর্টে গিয়েছেন আমাকে রিসিভ করতে। কিন্তু তাদের কারও সঙ্গে আমাকে তারা দেখা করতে দেয় নি। তারা আমার মামাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। পুরো এয়ারপোর্ট ফঁাকা করে ফেলেছে।

এটা কী ধরনের বিচার :
আদালতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মাহিয়া মাহি বলেন, ‘আমাকে যখন আদালতে নেওয়া হয়েছে। আমি আসলে জানিনা… আদালতে ঢোকার পরে বিচারকতো আমাকে নূন্যতম একটা কথা জিজ্ঞাসা করবেন যে, আমি কেন এটা করেছি বা কিছু একটা। আমার আত্মপক্ষ সমর্থনের একটা সুযোগতো দেবেন। বিচারক শুধু চেয়ারে বসলেন আর উঠলেন। বিচারককেও কোনও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। শুধু বলা হলো, মাহিয়া মাহি উপস্থিত হয়েছেন। কোর্ট শুরু করা হলো। আবার সঙ্গে সঙ্গে বলা হলো, মাহিয়া মাহি কারাগারে যাচ্ছেন, কোর্ট মূলতবি ঘোষণা করা হলো। ওনাকে কারাগারে পাঠাও। এটা কী ধরনের বিচার?’

স্বামীর নিরাপত্তা নিয়ে খুবই শঙ্কিত:

‘আমি একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী হয়েও মানবিকতাটুকু পাইনি। আমার স্বামীর বিরুদ্ধেও মামলাটা আছে। সে দেশে আসলে তার সঙ্গে কী করা হবে? আমি আমার স্বামীর নিরাপত্তা নিয়ে খুবই শঙ্কিত।’

উনাকে রিমান্ডে নিতে হবে :

মাহিয়া মাহি বলেন, আমি যখন আদালতে ছিলাম, তখন বারবার পুলিশ বলছিল, উনাকে রিমান্ডে নিতে হবে। আমি একজন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা, আমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে। আমাকে রিমান্ডে নিয়ে তারা কী বের করবে? এমন পরিস্থিতিতে আমি আমার স্বামীকে নিয়ে ভীত। আমাকে যেমন মানসিক, শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। সে দেশে আসলে তাকেও রিমান্ডে নেওয়া হবে, তাকেও নির্যাতন করা হবে।

আমি পুরো বিষয়টি ফেস করতে চাই :
‘আমি পুরো বিষয়টি ফেস করতে চাই। আমি নিজের প্রতি ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এজন্যই দেশে ফিরে এসেছি। আর আমি মনে করেছি, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সে দেশে একজন পুলিশ কমিশনার অন্যায় করে পার পেয়ে যাবে না।’

###
মোঃ রেজাউল বারী বাবুল
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।
১৮/০৩/২০২৩ ইং।