‌`কান্না নয়, জেগে উঠা’র ডাক দিয়েছেন মির্জা ফখরুল

আপডেট: আগস্ট ৪, ২০২২
0

‘ক্রন্দন নয়, জেগে উঠা’র ডাক দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ভোলা ছাত্র দলের সভাপতি নুরে আলমের জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উপস্থিত হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উদ্দেশ্যে এই আহবান জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে আর কোনো রোধন নয়, আর কোনো ক্রন্দন নয়, এখন আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে। এই ভয়াবহ কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্যাতনের হাত থেকে এই জাতিকে রক্ষা করতে হবে।”

‘‘ আমাদের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, আমাদের গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে ৩৫ লক্ষ মামলার অবসান ঘটাতে হবে।”

আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পতন ঘটাতে হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেনম ‘‘ এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে প্রয়োজন সমস্ত জাতির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণআন্দোলন সৃষ্টি করে আমাদের এই সন্তান, আমাদের ভাই নুরে আলমের হত্যার প্রতিশোধ নেবো ইনশাল্লাহ।”

‘‘ আজকে আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করব, আপনারা সবাই শান্ত হয়ে থাকবেন। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা ইনশাল্লাহ আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবো।”

ভোলা ছাত্র দলের সভাপতি নুরে আলমের নাজাজে জানাজা গতকাল সন্ধ্যায় হওয়ার কথা থাকলেও পোস্ট মোর্টামসহ আনুসাঙ্গিক কার্য্ক্রমের জন্য মরদেহ আনা যায়নি নয়া পল্টনে। দুপুরে এসব কাজ শেষে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে থেকে বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে কফিন নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে এসে পৌঁছায়। নয়া পল্টন এলাকায় কফিন আসলে ছাত্র দলের নেতা-কর্মীদের অনেককে অশ্রুসজলে কাঁদতে দেখা গেছে।

আবেগময় কন্ঠে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ পিতার কাঁদে পুত্রের লাশ। এর চেয়ে বড় বেদনার আর যন্ত্রনার কিছু নেই।আজকে আমাদের সামনে আমাদের ছেলে ভোলা ছাত্র দলের সভাপতি নুরে আলম, তাকে গুলি করে হত্যা করেছে এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ বাহিনী। গুলি করেছে হত্যা করেছে ভোলা জেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিমকে। আরো ১৯ জন ঢাকায় ও বরিশাল হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।”

‘‘ এটা আজকে নতুন নয়। এই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তারা একদলীয় সরকার পাকাপোক্ত করতে ১৫ বছর ধরে আমাদের ৬ শ নেতা-কর্সীকে গুম করেছে, সহাস্রাধিক নেতা-কর্মীকে খুন করেছে, ৩৫ লক্ষের বেশি আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।”

নুরে আলমের জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী নয়া পল্টনের সড়কে অবস্থান নেয়। ফলে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

‘শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন’

মরদেহ নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনা হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ নেতৃবৃন্দ তার কফিনে প্রথমে দলীয় পতাকা দিয়ে আচ্ছাদন করে দিয়ে এতে পুস্পস্তবক অর্পন করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

এই সময়ে ছাত্র দলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বুধবার কমফোর্ট হাসপাতালে চিকিতসাধীন অবস্থায় মারা যান নুরে আলম। গত ৩১ জুলাই ভোলায় বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশ গুলিবর্ষন করলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন নুরে আলম। তাকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

ওই ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় স্বেচ্ছাসেবক দলের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম।

নুরে আলমে মৃত্যুর ঘটনায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হরতাল পালন করছে জেলা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলো।

‘অগনিত নেতা-কর্মীকে নিয়ে জানাজা’

এই জানাজায় বিএনপি মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছাড়াও বিএনপি অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, ডা. রফিকুল ইসলাম, সাইফুল আলম নিরব, আকরামুল হাসান, অঙ্গসংগঠনের ইশরাক হোসেন, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, সুলতান সালা্‌হউদ্দিন টুকু, মামুন আহমেদ, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আনোয়ার হোসাইন, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন, সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপ-ভাসানী আজহারুল ইসলাম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, এনডিপির আবু তাহের, জাগপার খন্দকার লুতফুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানাজায় ছিলেন।

জানাজায় নুরে আলমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

জানাজার এই অনুষ্ঠানে ছাত্র দলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ও নুরে আলমের বড় ভাই জাকির হোসেন সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

এই জানাজায় অংশ নিতে সকাল ৯টা থেকে নেতা-কর্মীরা নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সমবেত হতে থাকে। ফকিরেরপুল থেকে পল্টন পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে তা সমাবেশে রুপ নেয়।

জানাজার পর নূরে আলমের কফিন বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি ভোলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

‘বিএনপির তিনদিনের শোক’

মির্জা ফখরুল তিনদিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ‘‘ ৫ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত এই শোক পালন করবার জন্য সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে, কালো পতাকা উত্তোলন করবে। ৬ আগস্ট ছাত্র দল ৭ আগস্ট কৃষক দল ও ৮ আগস্ট যুব দল সমাবেশ করবে।”

পরবর্তি কর্মসূচি পরে জানানো হবে বলে জানান মহাসচিব।

ছাত্র দলের কর্মসূচি:

ছাত্র দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, নুরে আলম হত্যার প্রতিবাদে মহানগর জেলায় বিক্ষোভ ও মিছিল এবং ৬ আগস্ট নয়া পল্টনে ছাত্র সমাবেশ হবে।